ইরানের ১০ প্রদেশে ফের স্কুলছাত্রীদের বিষ প্রয়োগ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইরানে একের পর এক ঘটছে মেয়েদের স্কুলে বিষ প্রয়োগের ঘটনা। এ ঘটনায় গত তিন মাসে হাসপাতলে ভর্তি হয় অন্তত কয়েকশ শিক্ষার্থী। বিষক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় আরেক ভয়াবহ চিত্রের দেখা মেলে গত শনিবার। দেশের অন্তত ১০টি প্রদেশের ৩০টি স্কুলে ঘটে এই বিষ প্রয়োগের ঘটনা। ইরানের সংবাদ সংস্থা ও সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন ভিডিও থেকে জানা যায়, ঘটনার প্রতিবাদে ইরানের রাজধানী তেহরান ও অন্য প্রদেশগুলোতে বিক্ষোভে নেমেছেন উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। রয়টার্স দ্বারা যাচাইকৃত একটি ভিডিও অনুসারে, অসুস্থতার প্রতিবাদে তেহরানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবনের বাইরে অভিভাবকদের জমায়েত পরিণত হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে। ইরানের ইসফাহান ও রাশত শহরসহ তেহরানের অন্য দুটি অঞ্চলেও এই বিক্ষোভের জন্ম নেয়। সামজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিওগুলোতে আরও দেখা যায়, এ ঘটনার পর অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুলে জড়ো হচ্ছে আর কিছুুু ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাসে বা অ্যাম্বুলেন্সে করে। ইরানের কর্মকর্তারা একে বিষ প্রয়োগ হিসেবেই দায়ী করেন। আর এই বিষ প্রয়োগের জন্য দায়ী করেন ইরানের শত্রুদের। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ‘মেয়েরা হালকা বিষ আক্রমণের শিকার হয়েছে।’ দেশটির কিছু রাজনীতিবিদ মনে করেন, মেয়েদের শিক্ষার বিরোধিতাকারী কিছু কট্টরপন্থি ইসলামপন্থি গোষ্ঠী মেয়েদের এই ক্ষতি করে থাকতে পারে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আফগানিস্তানের তালেবান ও সাহেলের বোকো হারামের সঙ্গে তুলনা করেছেন, মানবাধিকারকর্মীরা।
বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমি যখন দাঁড়াই তখন আমার শরীর ঝিমঝিম করে এবং অবশ হয়ে যায়।’ হাঁটার মতো শক্তিও নেই বলে জানায় এই শিক্ষার্থী। অন্য এক শিক্ষার্থী জানায়, ক্লাসরুমে গ্যাসের গন্ধ আসছিল, উপরের তলায়ও ছিল এমন গন্ধ। এরপর ছাত্রীদের সরিয়ে নেওয়া হয় নামাজের ঘরে।
তবে, পশ্চিমা থিংকট্যাংক গবেষকদের দাবি, ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। একে সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার প্রতিশোধ বলছেন তারা। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সন্দেহভাজন হামলার স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানায়। জাতিসংঘের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে ইরান একে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া হিসাবে দাবি করে একই দিনে জানায়, ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘটনার তদন্ত করা হবে। এক তরুণ ইরানি নারীর মৃত্যুর কারণে গত কয়েক মাস ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সম্মুখীন ইরান। সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সক্রিয় ছিল স্কুলছাত্রীরাও। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে তাদের বাধ্যতামূলক মাথার স্কার্ফ খুলে ফেলেছিল।
এ সময় তারা দেশের নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ছবিও ছিঁড়ে ফেলে। বর্তমান সরকারের শাসনব্যবস্থা আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে এই পরপর বিষ প্রয়োগের ঘটনায়।
২০২২ সালের নভেম্বর থেকে রহস্যজনক এই বিষক্রিয়ার তথ্য মিলছে ইরানের বিভিন্ন শহর থেকে। সর্বপ্রথম বিষক্রিয়ার ঘটনার সন্ধান পাওয়া যায় তেহরানের দক্ষিণের শহর কোমে।
