সাদ্দামের বিলাসবহুল প্রমোদতরি এখন জেলেদের আনন্দবাড়ি
jugantor
সাদ্দামের বিলাসবহুল প্রমোদতরি এখন জেলেদের আনন্দবাড়ি

  ইসরাত জাহান স্বর্না  

১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

রূপ-জৌলুস-আভিজাত্য, তেজ-প্রতাপ-ক্ষীপ্রতা সব হারিয়ে মাঝনদীতে উলটে পড়ে ইরাকের একসময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রমোদতরি-আল মনসুর। ইরাকের টানা দুই দশকের অধিপতি সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতার প্রতীক। সে সময় ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারত না কেউ। এখন মরচে পড়া পরিত্যক্ত জলদানব। শোভা-সৌন্দর্য, চাকচিক্য-লাবণ্য-অহংকারের মেরুদণ্ড ভেঙে কাত হয়ে

পড়ে আছে অবহেলায়। অযত্নে।

দক্ষিণ ইরাকের বসরা শহরের শাট-আল-আরবের ঘাটে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে সাদ্দামের প্রিয় এই বিলাসতরীর অসহায় দৃশ্য। আরাম-আয়েশ-নান্দনিকতার সর্বাধুনিক বাহারে টইটুম্বুর ১২১ মিটার দীর্ঘ আল-মনসুরের নিথর অস্তিত্ব। এক সময় জেল্লা ছড়াত। এখন বসরার আপদ। সেদিন ছিল শুধু সাদ্দাম হোসেনের। এখন সবার। বিশেষ করে স্থানীয় জেলেদের। দিন শেষের আড্ডার ঠেক। অবসরের আনন্দবাড়ি। পিকনিক স্পট। বিশেষ করে জেলেপাড়ার বাসিন্দারা পরিবার-প্রতিবেশী নিয়ে পিকনিক করে সেখানে। ইরাকের হুসেইন সাবাহি নামে এক জেলে বলেন, ‘আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না যে এটি সাদ্দাম হোসেনের এই তরীর চার পাশে আমি ঘুরছি।’

১৯৮০-এর দশকে নির্মিত সাদ্দাম হোসেনের শখের এই প্রমোদতরিতে এখন পড়ন্ত বেলার চায়ের আড্ডা জমান সারা দিনের কর্মক্লান্ত জেলেরা। আবার এর ওপর দাঁড়িয়েই জাল ফেলেন কেউ কেউ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে ভর দুপুরের ‘খোলা হাম্মাম’। কিনারায় দাঁড়িয়ে দল বেঁধে লাফ। আল-মনসুরের ছাদ-কার্নিশ, দেওয়ালের চূড়ায় গোসল বিলাসের এ জলসা এখন নিত্যদিনের দৃশ্য।

২০০ অতিথি ধারণ করতে সক্ষম প্রমোদতরিটিতে একটি হ্যালিপ্যাড রেখেছিলেন সাদ্দাম। যেন যখন ইচ্ছে উড়ে এসেই নামতে পারেন। সে ইচ্ছে কখনোই পূরণ হয়নি তার। নিজে কখনো চড়েননি। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণ শুরুর কয়েক সপ্তাহ পরে উম্মে কাসর বন্দরের মুরিং ছাড়তে প্রমোদতরিটির জন্য আদেশ জারি করেন। কিন্তু মার্কিন সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে শাট আল-আরব জলপথেই ধ্বংস হয় এটি। পরে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর লুটপাট চলে আল-মনসুরে। ঝাড়বাতি, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ধাতব কাঠামোর কিছু অংশও ‘হাওয়া’ হয়ে যায়।

ইরাকের কিছু জনগণ অবশ্য মনে করেন, প্রমোদতরিগুলোর ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ করা উচিত। কিন্তু সাদ্দাম পরবর্তী কোনো সরকার এগুলো পুনরুদ্ধারে তহবিল বরাদ্দ করেননি। দেশটির পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এক নৌ ক্যাপ্টেন জাহি মুসা বলেন, ‘প্রমোদতরিটি ইরাকের একটি মূল্যবান রত্ন।’ সাদ্দামের মালিকানাধীন তিনটি প্রমোদতরির মধ্যে একটি এই আল-মনসুর। আরেকটি পরিণত হয়েছে হোটেলে। সেটিও এই বসরাতেই।

সাদ্দামের বিলাসবহুল প্রমোদতরি এখন জেলেদের আনন্দবাড়ি

 ইসরাত জাহান স্বর্না 
১৯ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

রূপ-জৌলুস-আভিজাত্য, তেজ-প্রতাপ-ক্ষীপ্রতা সব হারিয়ে মাঝনদীতে উলটে পড়ে ইরাকের একসময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রমোদতরি-আল মনসুর। ইরাকের টানা দুই দশকের অধিপতি সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতার প্রতীক। সে সময় ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারত না কেউ। এখন মরচে পড়া পরিত্যক্ত জলদানব। শোভা-সৌন্দর্য, চাকচিক্য-লাবণ্য-অহংকারের মেরুদণ্ড ভেঙে কাত হয়ে

পড়ে আছে অবহেলায়। অযত্নে।

দক্ষিণ ইরাকের বসরা শহরের শাট-আল-আরবের ঘাটে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে সাদ্দামের প্রিয় এই বিলাসতরীর অসহায় দৃশ্য। আরাম-আয়েশ-নান্দনিকতার সর্বাধুনিক বাহারে টইটুম্বুর ১২১ মিটার দীর্ঘ আল-মনসুরের নিথর অস্তিত্ব। এক সময় জেল্লা ছড়াত। এখন বসরার আপদ। সেদিন ছিল শুধু সাদ্দাম হোসেনের। এখন সবার। বিশেষ করে স্থানীয় জেলেদের। দিন শেষের আড্ডার ঠেক। অবসরের আনন্দবাড়ি। পিকনিক স্পট। বিশেষ করে জেলেপাড়ার বাসিন্দারা পরিবার-প্রতিবেশী নিয়ে পিকনিক করে সেখানে। ইরাকের হুসেইন সাবাহি নামে এক জেলে বলেন, ‘আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না যে এটি সাদ্দাম হোসেনের এই তরীর চার পাশে আমি ঘুরছি।’

১৯৮০-এর দশকে নির্মিত সাদ্দাম হোসেনের শখের এই প্রমোদতরিতে এখন পড়ন্ত বেলার চায়ের আড্ডা জমান সারা দিনের কর্মক্লান্ত জেলেরা। আবার এর ওপর দাঁড়িয়েই জাল ফেলেন কেউ কেউ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে ভর দুপুরের ‘খোলা হাম্মাম’। কিনারায় দাঁড়িয়ে দল বেঁধে লাফ। আল-মনসুরের ছাদ-কার্নিশ, দেওয়ালের চূড়ায় গোসল বিলাসের এ জলসা এখন নিত্যদিনের দৃশ্য।

২০০ অতিথি ধারণ করতে সক্ষম প্রমোদতরিটিতে একটি হ্যালিপ্যাড রেখেছিলেন সাদ্দাম। যেন যখন ইচ্ছে উড়ে এসেই নামতে পারেন। সে ইচ্ছে কখনোই পূরণ হয়নি তার। নিজে কখনো চড়েননি। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণ শুরুর কয়েক সপ্তাহ পরে উম্মে কাসর বন্দরের মুরিং ছাড়তে প্রমোদতরিটির জন্য আদেশ জারি করেন। কিন্তু মার্কিন সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে শাট আল-আরব জলপথেই ধ্বংস হয় এটি। পরে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর লুটপাট চলে আল-মনসুরে। ঝাড়বাতি, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ধাতব কাঠামোর কিছু অংশও ‘হাওয়া’ হয়ে যায়।

ইরাকের কিছু জনগণ অবশ্য মনে করেন, প্রমোদতরিগুলোর ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ করা উচিত। কিন্তু সাদ্দাম পরবর্তী কোনো সরকার এগুলো পুনরুদ্ধারে তহবিল বরাদ্দ করেননি। দেশটির পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এক নৌ ক্যাপ্টেন জাহি মুসা বলেন, ‘প্রমোদতরিটি ইরাকের একটি মূল্যবান রত্ন।’ সাদ্দামের মালিকানাধীন তিনটি প্রমোদতরির মধ্যে একটি এই আল-মনসুর। আরেকটি পরিণত হয়েছে হোটেলে। সেটিও এই বসরাতেই।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন