Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

ফুঁসে উঠছে জনতা

লিবিয়ার মৃত্যুপুরীতে বিক্ষোভের আগুন

বাঁধ ধ্বংসের কারণেই ভয়াবহ বন্যা : দায় স্থানীয় নেতাদের * স্থানীয় এমপিকে ঘেরাও, মেয়রের বাড়িতে আগুন * অবিলম্বে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভয়াবহ বন্যার কবলে লিবিয়া এখন মৃত্যুপুরী। দুর্ভোগের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গেছে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডেরনায়। বাতাসে, ড্রেনে সর্বত্র পচা লাশের গন্ধ। সাগরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে এখনও ভেসে আসছে মরদেহ। বাড়িঘর হারিয়ে দিশেহারা মানুষের আহাজারি। জনগণের জমতে থাকা দুঃখ এখন নিয়েছে বিক্ষোভের রূপ। বিধ্বস্ত জনপদে শোক ছাপিয়ে এখন একটাই ক্ষোভ-বাঁধ ধ্বংসের ফলেই সাজানো গোছানো উপকূলীয় শহরটির এমন করুণ দুদর্শা! প্রায় দুই দশক ধরে বাঁধ মেরামত না করায় বন্যা পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়ে উঠে শহরটিতে। রাগে-ক্ষোভে মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো স্থানীয় এমপি, মেয়রের গাফিলতিকে ধিক্কার জানাতে মাঠে নেমেছে অসংখ্য মানুষ। দুপুরে এমপির বাড়ি ঘেরাও করে সন্ধ্যায় মেয়রের বাড়িতে দেওয়া হয়েছে আগুন। মঙ্গলবার আল-সাহাবা মসজিদের বাইরে বিক্ষোভকারীরা একসঙ্গে জড়ো হন। হাতে লেখা কাগজে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বন্যা পরিস্থিতির প্রায় এক সপ্তাহ পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করেন জনগণ। তাদের দিকে আঙুল তুলে বজ কণ্ঠে বলেন, ‘দুঃখী শহর ডেরনা তার অধিকার দাবি করে।’ আলজাজিরা, দ্যা গার্ডিয়ান, বিবিসি।

বিক্ষোভে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সংসদ-সদস্য আগুইলা সালেহকে তিরষ্কার করা হয়। মসজিদের বাইরে, ছাদে উপস্থিত সবাই বলতে শুরু করেন, ‘আগুইলা আমরা তোমাকে চাই না! সব লিবিয়ান ভাই ভাই! প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার কারণে রাজনৈতিকভাবে ভেঙে পড়া দেশে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে একস্বরে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। এরপরেই ডারনার মেয়র আব্দুলমেনাম আল-গাইথির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনগণ। পরিস্থিতি শান্ত করতে পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের একজন মন্ত্রী হিচেম আবু চকিউয়াত বলেছেন, ইতোমধ্যেই গাইথিকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বন্যা প্রতিবাদে অংশ নেওয়া সাধারণ জনগণ বাঁধ ধ্বংসের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সহায়তা দাবি করেছেন। এ সময় স্বজনহারাদের একে অপরকে সান্ত্বনা দিতেও দেখা যায়। বিক্ষোভকারী একজন ছাত্র সাইদ মনসুর বলেছিলেন, তিনি বাঁধ ভেঙে পড়ার ঘটনাটিতে একটি জরুরি তদন্ত চান, যা ‘আমাদের হাজার হাজার প্রিয় মানুষকে হারিয়েছে।’ ৩৯ বছর বয়সি তাহা মিফতাহ বলেন, প্রতিবাদটি একটি বার্তা বহন করে যে ‘সরকার সংকট পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ বিপর্যয়ের বিষয়ে তিনি আরও বলেন ‘আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে পুনর্গঠনের জন্য’ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ডেরনায় বন্যায় (১০ সেপ্টম্বর) মৃতের সংখ্যা এখনও অনুমান করা যায়নি। কর্মকর্তারা ব্যাপকভাবে বিভিন্ন হতাহতের সংখ্যা দিয়েছেন। লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, অন্তত ১১,৩০০ মানুষ মারা গেছে এবং ১০,০০০ এরও বেশি নিখোঁজ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩৯২২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। হাজার হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে। অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ অব্যাহত থাকায় আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রচেষ্টা গতি বাড়িয়েছে। দেরনায় আনুমানিক ৩০ হাজার বাসিন্দা এখন গৃহহীন। কলেরা, ডায়রিয়া, ডিহাইড্রেশন এবং অপুষ্টির ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি রয়েছে শহরটিতে। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয় এবং মৌলিক বিষয়গুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম