Logo
Logo
×

টিউটোরিয়াল

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

Icon

আফরোজা বেগম

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সিনিয়র শিক্ষক

উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা, ঢাকা

ব্রিটিশ শাসন

[পূর্বে প্রকাশিত অংশের পর]

প্রশ্ন : বাংলার নবজাগরণে কারা অবদান রেখেছেন?

উত্তর : আধুনিক ও ইংরেজি শিক্ষার ফলে এ দেশে উনিশ শতকের শেষের দিকে ক্রমে একটি ইংরেজি শিক্ষিত শ্রেণি গড়ে ওঠে। এদের একাংশের মধ্যে নতুন চেতনার বিকাশ ঘটতে থাকে। এরা নিজেদের সমাজে বহুকাল ধরে প্রচলিত নানা কুসংস্কার, কুপ্রথা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠেন। আর নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে উনিশ শতকে বাংলায় ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর নবজাগরণ ঘটে।

বাংলার নবজাগরণে নিম্নলিখিত বরেণ্য ব্যক্তিরা অবদান রেখেছেন।

* রাজা রাম মোহন রায়} সমাজ সংস্কারক

* ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর }

* স্যার সৈয়দ আহমদ খান} সমাজ সংস্কারক

শিক্ষক ও প্রসারক

* নবাব আব্দুল লতিফ

* সৈয়দ আমীর আলী

* বেগম রোকেয়া ’নারী শিক্ষার অগ্রদূত

* নবাব ফয়জুন্নেসা ’নারী শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রসারক ও সমাজ সংস্কারক

সুতরাং, নবজাগরণের মাধ্যমে সামাজিক সংস্কার, শিক্ষা, সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গের অসামান্য অবদান আমরা চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব ও তাদের অবদান অনুসরণ করব।

প্রশ্ন : পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে লিখ।

উত্তর : ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলার পলাশীর আম্র কাননে বাংলার তৎকালীন নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের যে প্রহসনমূলক যুদ্ধ হয় তা-ই ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত।

ফলাফল : * পলাশীর যুদ্ধে নবাবের প্রধান সেনাপতি, মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে নবাব, সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয় ও পরে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। * এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

* বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। পরাধীনতার নাগপাশে শৃংখলিত হয় বাংলার স্বাধীনতার টকটকে লাল সূর্যটি।

আসলে, পলাশী যুদ্ধের ফলাফল ছিল বাংলার ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটার এক প্রতিচ্ছবি। বাংলার ইতিহাসে এ যুদ্ধ বিরূপ ফলাফল ছিল।

প্রশ্ন : সিপাহী বিদ্রোহে বাংলার ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর : পলাশী যুদ্ধের ঠিক ১০০ বছর পর ১৮৫৭ সালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সামরিক কারণে সিপাহীদের সঙ্গে ইংরেজদের যে মহাবিদ্রোহ হয় তা-ই ইতিহাসে সিপাহী বিদ্রোহ বা স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম নামে পরিচিত।

বাংলার অবদান : * ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা হয় বাংলায়। পশ্চিম বাংলার ব্যারাকপুরে মঙ্গল পান্ডের নেতৃত্বে এ বিদ্রোহের সূচনা হয়। পরে তা ধীরে ধীরে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।

* ঢাকা, চট্টগ্রাম, বহরমপুরসহ বাংলার বিভিন্ন জায়গায় অভ্যুত্থান ঘটে।

* এ সংগ্রাম সিপাহীদের বিদ্রোহ দিয়ে শুরু হলে পরবর্তীতে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, অযোদ্ধা, বিহারসহ বাংলার সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছিল। ইতিহাসবিদরা বলেন, ‘এ বিদ্রোহ ছিল গণবিদ্রোহের প্রতীক।’ বাংলার জনগণের সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহ পরবর্তীতে রাজনৈতিক ও স্বাধীনতার জাতীয় সংগ্রামের স্বীকৃতি পায়। * ইংরেজরা এ বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করে। বাংলাদেশের ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে দেশপ্রেমী এসব বাঙালির ৭২ জনকে ফাঁসি দেয়া হয়। বাঙালিসহ ১,০০,০০০ ভারতীয়কে ইংরেজদের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়। তাদের স্মরণে ১৯৪৭ সালে ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে নির্মিত স্মৃতিফলক এখনো এ বিদ্রোহে বাংলার অবদানে সাক্ষী বহন করছে। * বাংলার জনগণের সমর্থনপুষ্ট এ সিপাহী বিপ্লব আপাত দৃষ্টিতে ব্যর্থ মনে হলেও পারবর্তীকালের জন্য সব সংগ্রামের সূচনা বা সূতিকাগার হিসাবে কাজ করে।

তাই এসব কাজের মধ্য দিয়ে সিপাহী বিদ্রোহে বাংলার অসামান্য অবদান স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন : ক. পলাশীর যুদ্ধ কেন হয়েছিল?

উত্তর : পলাশীর যুদ্ধ : ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলার পলাশীর আম্রকাননে বাংলার নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের যে প্রহসনমূলক যুদ্ধ হয় তা-ই ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত।

কারণ : সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। তিনি ছিলেন বাংলার নবাব আলিবর্দী খাঁর দৌহিত্র। নানার মৃত্যুর পর ১৭৫৬ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে বাংলার সিংহাসনে বসেন। তার মাত্র এক বছর পরে পলাশীর যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। এ যুদ্ধের কারণগুলো নিচে দেয়া হল- * সিংহাসনে আরোহণ করেই তরুণ নবাবকে নানা ষড়যন্ত্র ও বিরোধী শক্তির মুখোমুখি হতে হয়। * তার সামনে একদিকে ছিল ইংরেজদের ক্রমবর্ধমান শক্তি আর অন্যদিকে বড় খালা ঘসেটি বেগম, সেনাপতি মীর জাফর আলী খানের মতো ঘনিষ্ঠজনদের ষড়যন্ত্র। * এ ষড়যন্ত্রে যোগ দেয় রায় দুর্লভ এবং জগৎ শেঠের মতো শক্তিশালী বণিক গোষ্ঠী। * এ সময় বাংলায় ইংরেজ বণিকদের বাণিজ্য সংস্থার নাম ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। নানা কারণে নবাবের সঙ্গে ইংরেজ বণিকদের বিরোধ দেখা দেয়। * ইংরেজদের সঙ্গে নবাবের বিরোধী দেশীয় শক্তিগুলো একযোগ হয়ে যোগ দেয় ষড়যন্ত্রে। এরা সবাই নবাবকে উৎখাতের চেষ্টা করে। এ সবের জের ধরেই পলাশীর আম্রকাননে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ইংরেজদের সঙ্গে নবাবের প্রহসনমূলক পলাশীর যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়।

আসলে একদিকে ক্ষমতালোভী দেশীয় শত্রুদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে ইংরেজদের লোলুপ দৃষ্টির মিলিত ষড়যন্ত্রের ফসলই হল পলাশীর যুদ্ধ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম