একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র
ড. সনজিত পাল
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিনিয়র শিক্ষক, সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা
বিলাসী
-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৭৬-১৯৩৮) শিল্পীমানসের মৌলবৈশিষ্ট্য মানবতা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ কথাশিল্পীর জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও বিচিত্র সব মানুষের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তার বিভিন্ন উপন্যাসে। বিশেষ করে সমাজের নিচু তলার মানুষ তার সৃষ্ট চরিত্রে অপূর্ব মহিমা নিয়ে চিত্রিত হয়েছে। তার প্রথম মুদ্রিত রচনা কুন্তলীন পুরস্কারপ্রাপ্ত মন্দির নামে একটি গল্প। শরৎচন্দ্রের অনেকগুলো উপন্যাসে বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি ফুটে উঠেছে। তার বিলাসী গল্পটি প্রথমে প্রকাশিত হয় ভারতী পত্রিকায় ১৯১৮ সালে বৈশাখী সংখ্যায়। ন্যাড়া নামের এক যুবকের নিজের জবানিতে বিবৃত হয়েছে এ গল্প। এ গল্পের কাহিনিতে শরৎচন্দ্রের প্রথম জীবনের ছায়াপাত ঘটেছে। ‘বিলাসী’ গল্পে বর্ণিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী দুই মানব-মানবীর চরিত্রের অসাধারণ প্রেমের মহিমা, যা ছাপিয়ে উঠেছে জাতিগত বিভেদের সংকীর্ণ সীমা। গল্পে সংঘটিত একের পর এক ঘটনা এবং বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে সংঘাতের মাধ্যমেই কাহিনি অগ্রসর হয়। ঘটনার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে কাহিনিতে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। লেখক কোন অবস্থান থেকে কাহিনি বলেছেন, সেটা অনেক সময় কাহিনি বর্ণনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লেখক সর্বদর্শী অবস্থান থেকেও কাহিনি বর্ণনা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তিনি সবগুলো চরিত্র ও ঘটনা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বর্ণনা করেন। ‘বিলাসী’ গল্পের নাম চরিত্র কর্মনিপুণ, বুদ্ধিমতী ও সেবাব্রতী বিলাসী; শরৎসাহিত্যের অন্যান্য উজ্জ্বল নায়িকাদের মতোই একজন। যে প্রেমের জন্যে নির্দ্বিধায় বেছে নিয়েছে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ আর তার প্রেমের মহিমাময় আলোয় ধরা পড়েছে সমাজের অনুদারতা ও রক্ষণশীলতা, জীবনের নিষ্ঠুর ও অশুভ চেহারা।
‘বিলাসী’ গল্প পড়ার সময় যে দিকগুলো ভালো করে খেয়াল করতে হবে-
‘বিলাসী’ গল্পে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতবর্ষের বাঙালি রক্ষণশীল হিন্দুসমাজের বর্ণপ্রথা, কুসংস্কার, মিথ্যাচার, সবল কর্তৃক দুর্বলের উপর অত্যাচার, অন্যায় ও হৃদয়হীনতার নানা প্রসঙ্গ রূপায়ণ করেছেন। গল্পের মৃত্যুঞ্জয় উচ্চ কায়স্থ বংশ এবং বিলাসী নিচু বংশের হওয়ায় তাদের ভালোবাসা ও একত্রে ঘরবাঁধা সমাজপতিরা মেনে নিতে পারেনি। সেই সমাজে সমাজপতিদের মুখের কথাই ছিল আইন। তাদের খেয়ালখুশিমতো চলত সমাজ। বিলাসী নারী হওয়া সত্ত্বেও তার প্রতি সমাজপতিদের সামান্য শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। জাত ও বংশ রক্ষার নামে তারা বিলাসীর ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে। সমাজপতিদের নির্মমতা সহ্য করেও মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে বিলাসীর ঘরবাঁধা এ গল্পের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। যদিও তাদের দাম্পত্য জীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, তবুও মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর ভালোবাসা যেন নির্মম সমাজে নতুন আলোকপ্রভা হয়ে উঠেছে। ‘বিলাসী’ গল্পের যে দিকগুলো ভালো করে পড়তে হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো : রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, মৃত্যুঞ্জয়ের শৈশব ও কিশোর জীবনের বর্ণনা, সমাজের মানুষগুলো যেভাবে মৃত্যুঞ্জয়কে ঠকাতো, মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পত্তির প্রতি জ্ঞাতি খুড়োর লোভ, মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে জ্ঞাতি খুড়োর মিথ্যা বলা, অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের অবস্থা ও তার প্রতি বিলাসীর সহযোগিতামূলক আচরণ, বিলাসীকর্তৃক মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করা, সেবারত বিলাসীর বাহ্যিক অবস্থার বর্ণনা, ন্যাড়ার মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে আসার কারণ, সমাজপতিদের দৃষ্টিতে বিলাসীর অপরাধ ও তার ওপর হামলা করে নির্মম নির্যাতন করা, মৃত্যুঞ্জয়ের জাত-ধর্ম বিসর্জন দিয়ে সাপুড়ে হওয়া, মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে ন্যাড়ার যোগদান, সাপ ধরতে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু ও তাকে কেন্দ্র করে সমাজপতিদের মনোভাব, বিলাসীর আÍহত্যার কারণ, তৎকালীন সমাজ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে গল্পের শেষ পরিণতিতে গল্পকারের বার্তা প্রদান, গল্পে কুসংস্কার ও অজ্ঞতার প্রভাব, বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রেমের শাশ্বত রূপ, ধর্মীয় রীতি-নীতির অপব্যাখ্যা করে- তা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার, বর্ণভেদ বা জাতিভেদের নির্মমরূপ, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার ইত্যাদি।
অনুধাবন প্রশ্ন :
১. মা-সরস্বতী খুশি হইয়া বর দিবেন কি, তাহাদের যন্ত্রণা দেখিয়া কোথায় যে তিনি লুকাইবেন, ভাবিয়া পান না- কেন বলা হয়েছে?
২. কিন্তু থাক এ-সকল বাজে কথা- ব্যাখ্যা কর।
৩. এ সকল দরকারি তথ্য অবগত হইবার ফুরসতই মেলে না- কেন বলা হয়েছে?
৪. মাস্টারকে ঠ্যাঙানো উচিত কিংবা অমন বিশ্রী স্কুল ছাড়িয়া দেওয়াই কর্তব্য- এমন মনোভাব কেন পোষণ করা হতো?
৫. খুড়ার কাজ ছিল ভাইপোর নানাবিধ দুর্নাম রটনা করা- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
৬. ওই বাগানের অর্ধেকটা তার নিজের অংশ, নালিশ করিয়া দখল করার অপেক্ষা মাত্র- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
৭. দখল একদিন তিনি পাইয়াছিলেন বটে, কিন্তু সে জেলা-আদালতে নালিশ করিয়া নয়- ওপরের আদালতের হুকুমে- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
