Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

ওড়না পরা গোঁড়ামি নয়

Icon

আফিয়া খাতুন

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ওড়না পরা গোঁড়ামি নয়

বাংলাদেশ অধিক জনসংখ্যার দেশ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলে ১৬ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করছে, যাদের প্রায় অর্ধেক নারী। শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমঅধিকারের কথা বলা হচ্ছে।

বলা হচ্ছে, নারী এখন আর দুর্বল নয়। আজ বিশ্বব্যাপী নারীর জয়-জয়কার। বিভিন্ন গুরুদায়িত্ব নারীরা পালন করছেন। শিক্ষক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রনায়ক, সমাজসেবক হিসেবে বিচক্ষণতার পরিচয় দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের নারীরাও আজ পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন পেশায় তারা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। এসবের পাশাপাশি নারী নির্যাতনের খবরও প্রতিদিন দেশের গণমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত হচ্ছে। যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে শুধু নারী নয়; শিশুরাও বাদ পড়ছে না।

যাদের সামর্থ্য আছে, তারা মেয়েকে সতর্কতার সঙ্গে পরিপালনের চেষ্টা করছেন। তা সত্ত্বেও, অনেক বিত্তবানের কন্যাশিশুও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বাসে শিশু, কিশোরী ও যুবতী নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অনেক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দ্বারাও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রেও নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

বর্তমানে প্রায় প্রতি ঘরেই টেলিভিশন আছে। টেলিভিশনে অনেক ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার হয়ে থাকে। সব অনুষ্ঠানই ভালো, তা বলা যায় না। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কলকাতার বাংলা ছবিগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখা যেত। তখন বিনোদনের মাধ্যমে বলতে মূলত বাংলা সিনেমাই ছিল। ষাটের দশকে বাংলাদেশেও অনেক পরিচ্ছন্ন সিনেমা নির্মাণ করা হতো।

এখন এত যৌন উত্তেজক, হিংস তা ও মারামারি দৃশ্যের সিনেমা বানিয়েও সিনেমা হল উঠে যাচ্ছে কেন? চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভাবতে হবে, তারা সমাজ ও দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান? পরিচ্ছন্ন, রুচিশীল ছায়াছবি সবাই দেখতে চায়। যৌন উত্তেজক ছবি তরুণ সমাজকে বিপথে ঠেলে দেয়, এটা বুঝতে হবে।

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ঢাকা শহর বলতে বোঝাত বর্তমানের পুরান ঢাকাকে। তখনকার মেয়েরা এখনকার মেয়েদের মতো এত ‘ফাস্ট’ ছিল না; কিন্তু তখনকার মেয়েরাও পড়াশোনা করত। তারা সংযতভাবে চলাফেরা করত।

এখনকার এত যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটত না। তখনকার মেয়েরা হেঁটে, ঘোড়ার গাড়ি ও স্কুলবাসে স্কুলে যেত। প্রায় সব স্কুলেই একাধিক আয়া থাকত। যেসব ছাত্রী পায়ে হেঁটে স্কুল যেত, আয়ারা তাদের বাড়ি থেকে ডেকে স্কুলে নিয়ে যেত; আবার স্কুল ছুটির পর বাড়ি পৌঁছে দিত। একজন আয়া পাড়ার ৮-১০ জন ছাত্রীকে স্কুল নিয়ে যেত; আবার স্কুলশেষে বাড়ি পৌঁছে দিত।

আয়ারা সাধারণত মধ্যবয়সী এবং শারীরিক-মানসিক দিক দিয়ে শক্ত-সমর্থ হতেন। সে সময় প্রায় সব আয়ার হাতে একটা ছাতা থাকত। প্রয়োজনে ওই ছাতাটিকে লাঠির মতো ব্যবহার করা যেত। এখনকার অনেক বাবা-মা সন্তানদের স্কুলে দিয়ে আবার ছুটির পর নিয়ে যান।

এর বাইরে অনেক মেয়ে রিকশা ও বাসে স্কুলে যায়। এতে অনেক সময় তারা বখাটেদের হাতে উত্ত্যক্ত হয়ে থাকে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আগের মতো আয়া রাখতে পারেন; বিশেষ করে, যেসব ছাত্রী স্কুলের কাছাকাছি থাকে, তাদের জন্য আয়া রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজে নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করা দরকার।

আজকাল মোবাইল ফোনের ব্যবহার এতটাই বেড়ে গেছে- ছোট্ট শিশু থেকে বয়স্ক ব্যক্তি সবাই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাই, কিশোরী বা তরুণী কৌতূহলবশত অপরিচিত কোনো যুবকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রেমালাপ শুরু করে। এরপর দু’জনে কোনো হোটেল বা অন্য কোনো স্থানে দেখা করে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় মেয়েটি শ্লীলতাহানির শিকার হয়।

কাজেই অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। ছোট ছোট ছেলেমেয়ের হাতে মোবাইল ফোন দেয়ার আগে ভাবতে হবে, কীভাবে তার সন্তানটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে; সেটাও দেখতে হবে।

এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে থাকে। তারা আঁটসাঁট পোশাক পরতে পছন্দ করে এবং শরীরের অনেকখানি প্রদর্শন করার চেষ্টা করে। অনেকেই সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে ওড়না পরে না।

ওড়না পরা গোঁড়ামি নয়; বরং শালীনতার বিষয়। অতি আধুনিকতা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আরও পরিষ্কার করে বলতে হয়- নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় প্রথমত নারীকেই সচেতন হতে হবে। অনেক মেয়েরই রূপচর্চার দিকে বেশি ঝোঁক। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাদের যা দিয়েছেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত।

ঘষেমেজে নিজেকে আরও সুন্দরী ও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা বোকামির লক্ষণ। সুন্দর-পরিপাটি পোশাক পরিধানে সঠিক ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। পশ্চিমবঙ্গের একজন স্বনামধন্য লেখক একবার বিমান ভ্রমণ করতে গিয়ে এক সুন্দরী বিমানবালার সৌন্দর্য ও ব্যবহারের মুগ্ধ হয়ে তাকে বলেছিলেন,

: সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র।

প্রত্যুত্তরে বিমানবালা বলেছিলেন,

: সুন্দর মুখের ভয়ও সর্বত্র।

লেখক বিমানবালার উত্তরে শুধু মুগ্ধ হননি; অতি বাস্তব সত্যটি যে বিমানবালা উপলব্ধি করতে পেরেছেন; তাতে তিনি খুশিও হয়েছিলেন।

প্রধান শিক্ষক, এলিমিনটারি স্কুল

এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা

 

ওড়না

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম