সচেতনতাই রক্ষাকবচ করোনাভাইরাসে
আরাফাত হোসেন ভূঁইয়া
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনাভাইরাস যেন এক নয়া আতঙ্কের নাম। গবেষকদের মতে, বিশ্বে সাড়ে ছয় কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে এই মারাত্মক ভাইরাস।
চীন থেকে বিস্তার লাভকারী ভাইরাসটি ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইসরাইলসহ চীনের পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু রাষ্ট্রে। আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যার হার বিশ্ববাসীকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশও ঝুঁকিমুক্ত নয় জীবনঘাতী এ ভাইরাস থেকে।
দেশের সর্বত্রই আতঙ্ক; কখন, কীভাবে আবার ভাইরাসটি এদেশে ছড়িয়ে পড়ে! এদিকে চীনের উহান প্রদেশে আটকেপড়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে এনেছে সরকার।
সরকারের এ পদক্ষেপ প্রশংসিত হচ্ছে সর্বমহলে। আরও সুখবর হচ্ছে, উচ্চ তাপমাত্রা নিয়ে চীনের উহান থেকে ফেরত আসা ৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এ বিষয়টি দেশের মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক বৈকি!
তবে এ প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে ভাইরাসটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক। Corona শব্দের অর্থ জ্যোতির্বলয়। এ ভাইরাসটি সূর্য থেকে ছিটকে পড়া আলোকরশ্মির ন্যায় বলে এর নামকরণ হয়েছে করোনাভাইরাস। মানুষ ও পশু-পাখি এই ভাইরাসটির দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর ও কাশি। ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় সপ্তাহখানেক লেগে যেতে পারে। এর প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর।
তারপর শুকনো কাশি, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। এমনকি এক সপ্তাহের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা বুঝতে পারে না, সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত; নাকি সাধারণ সর্দি-কাশিতে?
এক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি-কাশি হলেও নাক, গলা ও রক্তের পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে সেটা করোনাভাইরাস কিনা। এরপর পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
তবে এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না। কারণ, সর্দি-কাশি মানেই করোনাভাইরাস নয়। সুতরাং ঘাবড়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসযন্ত্রের নিচের অংশ শ্বাসনালি ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। এর ফলে মানুষ, বিশেষ করে বয়স্করা নিউমোনিয়া ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
প্রথমত এ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আত্মসচেতন হতে হবে। ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় সরাসরি এর কোনো চিকিৎসা না থাকলেও নিয়মতান্ত্রিকভাবে চললে খুব সহজেই একে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে মানুষকে নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা এবং ঠাণ্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছে। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গ্যাব্রিয়েল লিউং বলেছেন, ‘আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে মাস্ক ব্যবহার করুন; আর নিজে অসুস্থ না হলেও অন্যের সংস্পর্শ এড়াতে মাস্ক ব্যবহার করুন।’
আপাতত প্রতিকার হিসেবে এ ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে চলা, বারবার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা এবং ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা আবশ্যক।
জনসচেতনতার পাশাপাশি সরকারকেও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো দেশে নাগরিকদের গমন কিংবা সেখান থেকে কারও আগমন আপাতত বন্ধ করে দিতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দেশব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
জরুরি মেডিকেল টিম গঠন করতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরের মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
arafatuniofdhaka@gmail.com
