Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক অধিক সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব

Icon

পুজা রাণী কর্মকার

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক অধিক সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য প্লাস্টিকের তুলনায় বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক অধিক সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। পৃথিবীতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের মধ্যে শতকরা ১৫ ভাগেরও কম পরিমাণ প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে ব্যবহৃত হয়।

বাকি ৮৫ ভাগ প্লাস্টিক ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেয়া হয় এবং তা এক সময় মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। না পচে ভূগর্ভে থেকে যায় দীর্ঘকাল। এগুলো তখন মাটির অভ্যন্তরে ফসল উৎপাদন ও বৃক্ষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন গ্যাস চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। ফলে ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। নালা-নর্দমাকে বন্ধ করে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে।

এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকের মোড়ক ও পাত্রে রাখা খাদ্য সামগ্রী গ্রহণের ফলে নানা ধরনের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্লাস্টিক সামগ্রীর এত ক্ষতিকর দিক থাকা সত্ত্বেও এবং কঠোর আইন করেও এর উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক হতে পারে এ সমস্যার সঠিক সমাধান, যা আমাদের পরিবেশ ও অর্থনীতি দুটোকেই মজবুত ও টেকসই করবে। এই প্লাস্টিক খুব সহজেই পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাবে; ফলে মাটি বা পানি কোনোটাই দূষিত হবে না। পরিবেশ রক্ষার জন্য বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক হচ্ছে বায়ো-প্লাস্টিক সমন্বিত; যা নবায়নযোগ্য কাঁচামাল থেকে তৈরি। পরিবেশের অণুজীবগুলো বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের কাঠামো ভেঙে ফেলে, ফলে এগুলো পচে যায় এবং ঐতিহ্যবাহী প্লাস্টিকের তুলনায় পরিবেশের পক্ষে কম ক্ষতিকারক।

এটি মাটির সঙ্গে সহজেই মিশে যায় এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক প্রাকৃতিক উদ্ভিদ সামগ্রী থেকে তৈরি করা হয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে কর্ন, কমলার খোসা, স্টার্চ এবং গাছপালা।

সাধারণ প্লাস্টিক রাসায়নিক ফিলার দিয়ে তৈরি করা হয়, যা গলানোর সময় পরিবেশের ক্ষতি করে; কিন্তু বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক তৈরির সময় প্রাকৃতিক উৎস থেকে এমন একটি পদার্থ পাওয়া যায়, যা এই রাসায়নিক ফিলারগুলো ধারণ করে না এবং পরিবেশের জন্য ঝুঁকিও বহন করে না। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক তৈরির সমস্ত উপকরণ ভালোভাবে গলিয়ে বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিকের পানির বোতল এবং বাসনের ছাঁচে ঢেলে দেয়া হয়; এভাবেই তৈরি হয় বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক পণ্য।

‘প্লাস্টিকের সীমাবদ্ধতা আদেশ’ দ্বারা চালিত বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের জন্য একটি বিশাল বিকল্প বাজার রয়েছে। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক পণ্যগুলোর বাজারকে আরও প্রশস্ত করার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন অবিছিন্নভাবে বায়োডিগ্রেডেবল নীতিমালা চালু করেছে।

২০০৮ সালে প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশটিতে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের বাজার অন্তত ১২ ভাগ সম্প্রসারিত হয়েছে।

পাট থেকে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরি করে আশার আলো দেখিয়েছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান। তার দাবি, পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশে তৈরি পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকই সম্পূর্ণভাবে বায়োডিগ্রেডেবল। বাজারে প্রচলিত বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিন মাত্র ২০ শতাংশ কার্যকর। ইতিমধ্যে ইউরোপে সবরকম সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের দেশে সামান্য পরিমাণ প্লাস্টিক ব্যবহার না করেই তৈরি হয়েছে সোনালি ব্যাগ, যা পানি বা মাটিতে সুবিধামতো সময়ে মিশিয়ে দেয়া যায়। এটাই পৃথিবীতে প্রথম।

বর্তমানে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে উদ্ভিদ বা উদ্ভিদজাত বস্তু যেমন বাঁশ, তন্তু প্রভৃতিকে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বায়োপ্লাস্টিকে পরিবর্তিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যা হবে সুলভ ও চাহিদাসম্পন্ন। আশা করা যায়, বিজ্ঞানীদের নিরলস গবেষণা ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় জৈব বা বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমরা আগামীর সবুজ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে যাব।

শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

pujanu63@gmail.com

বায়োডিগ্রেডেবল

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম