Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

যশোর হত্যাকাণ্ডের একুশ বছর

Icon

আরিফ নূর

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যশোর হত্যাকাণ্ডের একুশ বছর

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষদিন গভীর রাতে যখন হাজারও জনতা ও সংস্কৃতিকর্মী বাংলার আবহমান সংস্কৃতির ধারক বাউল গানের সুর মূর্ছনায় বিমোহিত হয়েছিলেন, ঠিক তখনই বিকট শব্দে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে মঞ্চের নিচে আগে থেকে রেখে দেয়া বোমার।

ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চালানো ওই নৃশংস হামলায় প্রাণ হারান নূর ইসলাম, সন্ধ্যা রানী, রামকৃষ্ণ, তপন, বাবুল সূত্রধরসহ অন্তত ১০ জন শিল্পী-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। আহত হন দেড় শতাধিক শিল্পী-কর্মী ও সংস্কৃতিমনা সাধারণ মানুষ। মৌলবাদী অপশক্তির ঘৃণ্য হামলার শিকার সেসব সংস্কৃতি কর্মী এখনও পঙ্গুত্বের অভিশাপ বয়ে নিয়ে জীবনযাপন করছেন।

৬ মার্চ ছিল যশোর হত্যাকাণ্ড দিবসের একুশ বছর পূর্তি। দিনটি উপলক্ষে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ওই ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এবং হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে ৬ মার্চ, বিকাল ৫টায় স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, গণসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারওয়ার আলী ও উদীচী যশোর জেলা কমিটির সদস্য ইকরামুল কবির ইল্টু, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, উদীচীর সহসভাপতি বদিউর রহমান ও মাহমুদ সেলিম, সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে ও সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন। এ ছাড়া অস্থায়ী বেদিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। আলোচনা সভা শেষে প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। এ ছাড়া প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম। উদীচীর বিভিন্ন জেলা ও শাখা সংসদের আয়োজনেও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি সব জেলায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

আর তাই উদীচীর ওপরই নেমে আসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের সর্বপ্রথম হামলা। পরবর্তী সময়ে একে একে চালানো হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উপসনালয়, আদালত, সিনেমা হলসহ সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার মতো নৃশংসতম ঘটনা ও মানুষ হত্যা। য

শোর হত্যাকাণ্ডের একুশ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও এ ঘৃণ্য ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। কয়েকটি উগ্র সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ও আইনের আওতায় আনলেও এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে এসব সংগঠনের গডফাদাররা। যশোর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে উদীচী।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী

উদীচী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম