Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

মুজিব জন্মশতবর্ষের অঙ্গীকার হোক আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়ন

Icon

মো. নজরুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মুজিব জন্মশতবর্ষের অঙ্গীকার হোক আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়ন

এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম। ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময় অর্জিত হয়েছে এ দেশের স্বাধীনতা। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে এক বিস্ময়।

এ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এখন বহির্বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই আগ্রহের বিষয়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্গত। শুধু এর মধ্যেই থেমে নেই সফলতার গল্প। বিভিন্ন অর্জন ও সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বেড়েছে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। অতঃপর সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

ইতিমধ্যে ২৬টি স্প্যান বসানো হয়েছে এবং সেতুর প্রায় চার কিলোমিটার দৃশ্যমান। নির্মাণ কাজ শেষ হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এক নতুন মাত্রায় পৌঁছবে। ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২২ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এতে করে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে। বর্তমানের অচল ঢাকা সচল ঢাকায় পরিণত হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেড়েছে গতি। এ ছাড়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ই-পাসপোর্ট, বাস ও রেলের অনলাইন টিকিট প্রভৃতি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে সচল ও ত্বরান্বিত করছে। মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে এবং এটি ক্রমবর্ধমান। বিনামূল্যে বই বিতরণ ও উপবৃত্তি প্রদানের ফলে বেড়েছে শিক্ষার হার।

চিকিৎসা খাতের অগ্রগতির ফলে কমেছে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার। জঙ্গিবাদ দমনেও বাংলাদেশের অনন্য সফলতা ও সক্ষমতা প্রদর্শিত হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এবং গুজব দমাতে সাইবার ক্রাইম ইউনিট ইত্যাদি প্রশংসার দাবিদার। এসব সম্ভব হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকারের দূরদর্শিতার ফলে।

তবে প্রশ্ন হল আমরা নীতি-নৈতিকতা ও মানবিকতার দিক দিয়ে কতটা উন্নয়ন সাধন করতে পেরেছি? আমাদের নীতি-নৈতিকতার জায়গাটুকু আজ বেজায় নড়বড়ে। আমাদের নীতি-নৈতিকতা ও মানবিকতার চরম স্খলন ঘটেছে। ফলে বেড়েছে ধর্ষণ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ঋণখেলাপির মতো অসংখ্য নেতিবাচক ঘটনা।

যখন শুনি, দেশ ও দশের কোটি কোটি টাকা পাচার করে কানাডায় বেগম পাড়া ও মালেশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়ার প্রতিযোগিতা চলছে, তখন সব অর্জন থমকে দাঁড়ায়। চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাদের তথ্যমতে, গত সাত বছরে এ দেশ থেকে পাঁচ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে; দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা।

এ পরিমাণ টাকা দিয়ে আরও চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। (জিএফআই)-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। সম্প্রতি কানাডার বেগম পাড়ার বেগমদের বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে সেখানকার কিছু দেশপ্রেমিক তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে। অপরদিকে মালয়েশিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, সেকেন্ড হোম প্রকল্পের বিনিয়োগে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় (তথ্যসূত্র-দৈনিক যুগান্তর)।

উন্নয়নের মহাসড়কে ধেয়ে চলছে বাংলাদেশ। কিন্তু কিছু কতিপয় স্বার্থান্বেষী, অসাধু, লোভী, নীতি-নৈতিকতাবিবর্জিত মানুষের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সেই উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে সোনার দেশে পরিণত করতে এবং উন্নয়নের চাকা অব্যাহত রাখতে চাইলে আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের বিকল্প নেই। সরকার শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে হয়তো দু-একজনকে শুদ্ধ করতে পারবে; কিন্তু সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে পচন ধরেছে, তা অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা সম্ভব নয়।

সমস্যাটা যেখানে ব্যক্তি পর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত ব্যাপ্ত, সেখানে শুধু আইন ও শুদ্ধি অভিযান দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। তাই আসুন আত্মশুদ্ধির শপথ নিই। শুরুটা পরিবার ও ব্যক্তিজীবন থেকেই করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার; যেখানে থাকবে সুখ ও সমৃদ্ধি। সেই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকীতে আসুন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই আত্মশুদ্ধির ও আত্মোন্নয়নের।

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

kmnajrulislam64@gmail.com

মুজিববর্ষ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম