সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া বিপদ ঠেকানো সম্ভব নয়
জাকারিয়া জাহাঙ্গীর
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিজ্ঞান যখন ব্যর্থ, মুক্তির সব পথ যখন রুদ্ধ, সভ্যতা আর ক্ষমতার দম্ভ যখন পরাজিত; তখন শুধু ধৈর্য আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনাই মানুষের অবলম্বন। বৈশ্বিক মহামারী ‘নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)’ পুরো বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে।
দুর্যোগের কাছে মানুষের অর্থ, অস্ত্র, ক্ষমতা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সামান্য উঁচু-নিচুর ব্যবধানেও যেখানে মানুষ মানুষকে প্রতিপক্ষ-প্রতিযোগী ভাবত, আজ মৃত্যুর ভয় সবাইকে জড়সড়ো করে ফেলেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গের বিভেদহীন দূত হিসেবে প্রতিদিন শত শত মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে নতুন নতুন মানুষের দুয়ারে হাজির হচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা। লাখ লাখ মানুষকে সংক্রমণ আর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু বিশ্বকে আজ এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে।
সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে এবারই প্রথম সব রাষ্ট্র একসঙ্গে একই দুর্যোগের মুখোমুখি। ক্ষমতার দম্ভ ভুলে মানুষের জীবন রক্ষা ও যার যার ভূখণ্ডের মানবতা রক্ষার একমাত্র চিন্তায় নিদ্রাহীন বিশ্বনেতারা। আমেরিকার মতো পরাশক্তি শক্তিহীন হয়ে পড়েছে ভাইরাসের থাবার কাছে। বিশ্ববাজার দখলে রাখা চীন দখলদারিত্ব দেখাতে পারেনি করোনার ওপর। ইতালির আধুনিকতা, কানাডার সভ্যতা, সৌদি আরবের ধর্মীয় অনুশাসন; সবই তুচ্ছ হয়েছে ক্ষুদ্র-অতিক্ষুদ্র একটি জীবাণুর কাছে।
কোনো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের কান্না ও জাতির কাছে নিজেদের অসহায়ত্ব মানুষকে আরও শক্তিহীন করে দিচ্ছে। সেই তুলনায় আমরা বাংলাদেশিরা করোনা ও তৎসংশ্লিষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় কতটা সামর্থ্যবান- তা ভাবতে হবে। আমাদের সরকার করোনা মোকাবেলায় কতটা সফল হবে, সেই চিন্তা এখন আমরা না-ই করি; সরকার যা নির্দেশ দিয়েছে, আপাতত সেগুলো রক্ষা করাই কর্তব্য।
হোম কোয়ারেন্টিন (নিজ ঘরে অবস্থান) নির্দেশনা অনুসরণ, নির্ধারিত দূরত্ব (কমপক্ষে তিন ফিট) বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি পালন করা ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আমাদের আর তেমন করণীয় নেই। আমাদের সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। যার যার ঘরে অবস্থান করতে হবে।
আসুন আমরা যুদ্ধ করি, ঘরে বসে যুদ্ধ। এবারের যুদ্ধটা পরিবারের খুব কাছের মানুষের সঙ্গে, সমাজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে, দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহকর্মীর সঙ্গে। আমরা কেউ কারও সামনে নিরাপদ নই, কার দেহের জীবাণু কাকে আক্রমণ করবে, তা আমরা কেউ-ই বলতে পারব না।
যুদ্ধকালীন আমাদের কিছু কাজও রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পরপর এবং যে কোনো খাবার গ্রহণের আগে অবশ্যই সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে উভয় হাত (কব্জি পর্যন্ত উভয়পাশ ও নখের ভেতর-বাহিরসহ) ধোয়া, জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, ঘনঘন বিশুদ্ধ পানি পান, বেশি বেশি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ, কাপড়, বিছানা, নিত্যব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, ভালোভাবে ধুয়ে ও বেশি সেদ্ধ করে রান্না, অপরিষ্কার হাত দিয়ে মুখ, চোখ, নাক স্পর্শ না করা, হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি, গা ঘেঁষে না বসা, গাদাগাদি করে ঘুমানো বর্জন, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুইয়ে ঢাকা, ব্যবহৃত টিস্যু ফের ব্যবহার না করা, বাসাবাড়ি, টয়লেট, রান্নাঘর যথেষ্ট পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া সন্দেহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ তথা স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। খুব প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পরিধান করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পাশেই আছেন। মনে রাখবেন, তারা যা করছেন, ভালোর জন্যই করছেন। সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে তাদের কাজ করতে দিন। সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ বিপদ ঠেকানো সম্ভব নয়। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষই পারে করোনাকে রুখে দিতে। প্রচুর টাকা কিংবা ক্ষমতা থাকলেও আপনি নিরাপদ নন। ইতিমধ্যেই বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
সরিষাবাড়ী, জামালপুর
myjahangir@gmail.com
