প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা পরিপালনে আন্তরিক হোন
তাজওয়ার
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ছোঁয়াচে হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। অনেক ধরনের করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব থাকলেও মানুষ মূলত ৬ ধরনের করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। উল্লেখ্য, সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম সংক্ষেপে ‘সার্স’ও এক ধরনের করোনাভাইরাস।
২০০২ সালে এ ভাইরাসে বিভিন্ন দেশে ৮ হাজার ৯৮ জন আক্রান্ত হয় এবং তাদের মধ্যে ৭৭৪ জন মারা গিয়েছিল। করোনাভাইরাস সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব বেশি তথ্য পাওয়া না গেলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, অত্যন্ত দ্রুত ছড়াতে সক্ষম এ ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতো করে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩১ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন, যা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত ও সময়োচিত বলে মনে করি আমরা। করোনাভাইরাস সৃষ্ট সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পরিপালন করাই হবে সুনাগরিকের কাজ।
প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা-
১. করোনাভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. লুকোচুরির দরকার নেই, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
৩. পিপিই সাধারণভাবে সবার পরার দরকার নেই। চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য পিপিই নিশ্চিত করতে হবে। এ রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্কসহ সব চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখা এবং বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৪. কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত সব চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ সংশ্লিষ্ট সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
৫. যারা হোম কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে আছেন, তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে।
৬. নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।
৭. নদীবেষ্টিত জেলাগুলোয় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে হবে।
৯. পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। সারা দেশের সব সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
১০. আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। জাতীয় এ দুর্যোগে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সব সরকারি কর্মকর্তা যথাযথ ও সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন- এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
১১. ত্রাণ কাজে কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।
১২. দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক যেন অভুক্ত না থাকে। তাদের সাহায্য করতে হবে। খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত তালিকা তৈরি করতে হবে।
১৩. সোশ্যাল সেফটিনেট কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
১৪. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন স্থবির না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ নজর দিতে হবে।
১৫. খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। কোনো জমি যেন পতিত না থাকে।
১৬. সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে। যাতে বাজার চালু থাকে।
১৭. সাধারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
১৮. জনস্বার্থে বাংলা নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে, যাতে জনসমাগম না হয়। ঘরে বসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নববর্ষ উদযাপন করতে হবে।
১৯. স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সমাজের সব স্তরের জনগণকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশাসন সবাইকে নিয়ে কাজ করবে।
২০. সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
২১. জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবেন।
২২. সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন- কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা/ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ভিক্ষক, প্রতিবন্ধী, পথশিশু, স্বামী পরিত্যক্ত/বিধবা নারী এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখাসহ ত্রাণ সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
২৩. প্রবীণ নাগরিক ও শিশুদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২৪. দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি (এসওডি) যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সব সরকারি কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
২৫. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও নিয়মিত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
২৬. আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করবেন না। খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
২৭. কৃষকরা নিয়মিত চাষাবাদ চালিয়ে যাবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।
২৮. সব শিল্প মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি পর্যায়ে নিজ নিজ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর পরিষ্কার রাখবেন।
২৯. শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখবেন।
৩০. গণমাধ্যমকর্মীরা জনসচেতনতা সৃষ্টিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গুজব ও অসত্য তথ্য যাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
৩১. গুজব রটানো বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে নানা গুজব রটানো হচ্ছে। গুজবে কান দেবেন না এবং গুজবে বিচলিত হবেন না।
বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঘনবসতি, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অসচেতনতা, ভারসাম্যহীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এ অঞ্চলকে করোনাভাইরাস মহামারীর সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের ঝুঁকিতে ফেলেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বস্তুত করোনা প্রাদুর্ভাবের বিস্তার রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরও এ অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক হবে। তবে বাংলাদেশ ও ভারত তাদের শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে তুলনামূলক বেশি প্রণোদনা সরবরাহ করতে সক্ষম হবে, তা বলাই বাহুল্য।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তি ও বিকাশ ভিন্ন একটি দেশে হওয়ায় এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেমন কিছু করণীয় নেই এ কথা সত্য; তবে একে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি ও ফায়দা লোটার মনোভাব সর্বতোভাবে পরিহার করতে হবে।
আমাদের অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে; মানবিক হতে হবে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন করার মধ্য দিয়ে সব ধরনের বিপদ ও ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠার উপায় অনুসন্ধান ও তা বাস্তবায়ন করব- এ মুহূর্তে এটাই হোক আমাদের করণীয়।
শিক্ষার্থী, আনন্দমোহন সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ
