করোনায় গৃহবাস ও নতুন সবুজের অপেক্ষা
আল সানি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে একবার মফস্বলের এক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। প্রতিদিনের মতো একদিন ক্লাসের পর টিফিন পিরিয়ডে শ্রেণি শিক্ষিকা সবাইকে দল বেঁধে নিচে আসতে বললেন।
নিচের কক্ষে গিয়ে দেখি দু’জন নার্স সবাইকে ধরে ধরে ইঞ্জেকশন দিচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে আমি আর আমার ভাই নাবিদ ওখান থেকে পালিয়ে স্কুলের বাথরুমে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেছি। কিন্তু শ্রেণি শিক্ষিকা শিউলী ম্যাম আমাদের কান ধরে নিয়ে গিয়ে ওই নার্সের হাতে তুলে দিলেন। এরপর একজন নার্স ও একজন শিক্ষক আমার দুই হাত ধরলেন আর আরেকজন নার্স আমার বাম হাতে ইঞ্জেকশন দিলেন। টানা দুই দিন ব্যথা ছিল।
ব্যথার অজুহাতে স্কুলে গেলাম না দু’দিন। বয়স হওয়ার পর জানতে পারলাম ওটা ছিল টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, পারটুসিসের (টিডিএপি) টিকা। তখন যাদের ওপর প্রচুর রাগ হয়েছিল জ্ঞান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলাম, তারাই সঠিক ছিল। আর এ জ্ঞানটুকু সবার ভেতরে আসতেই একটু সময় লাগে।
আমরা দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গৃহের ভেতরেই বসবাস করছি; ভাবছি- ‘প্রতিদিন দুই-একজনের মরণ ভাইরাসে আক্রান্ত করছে, তাতে কী? আমাকে আক্রান্ত করবে না।’ কিন্তু মনে রাখতে হবে, সুস্থ একজন মানুষ বাইরে বের হওয়া মানে জীবাণু নিয়ে ঘরে ফেরা। এ জ্ঞানটুকুর স্বল্পতাই আমাদের মতো দেশগুলোর সবচেয়ে বড় বাধা। এ জ্ঞানটুকু সবার মধ্যে আসার আগেই যাতে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি না হয়; সেজন্য সরকার মানুষকে বারবার গৃহে থাকার আহ্বান করছে। সেদিকে কর্ণপাত না করে বর্তমান সময়কে অবকাশ ভেবে রাস্তা, ঘাট, আড্ডাতে মশগুল থাকার চেষ্টা করছি।
একবার একটা গরু মাঠে ঘাস খেতে খেতে গর্তে পড়ে গেল। গরুর রাখাল তখন ওপর থেকে কোদাল দিয়ে গর্তে অল্প অল্প করে মাটি ফেলতে লাগল। মাটি পড়তে লাগল গরুর মাথায়। সে এতে প্রচণ্ড বিরক্ত হতে লাগল।
শেষে গর্তটা যখন বুজে আসতে লাগল, গরুটা দেখতে পেল বাইরে সবুজ ঘাস, গাছপালা। আরেকটু মাটি ফেলার পর সে লাফিয়ে উঠে পড়ল গর্তের বাইরে। পরে কান মাথা ঝেড়ে সবুজ ঘাসের দিকে চলে গেল। যাওয়ার আগে রাখালকে বলে গেল, ধন্যবাদ।
আমাদেরও এখন কিছুটা বিরক্তি লাগবে। সারাদিন ঘরে থাকতে ভালোও লাগবে না। কিন্তু এখন এ অশান্ত পৃথিবী শান্ত করার জন্য আপনার গৃহবাসটাই হল সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আপনার কাজ গৃহে চুপচাপ বসে থাকা।
উপকারী রাখালের মতো কোদাল দিয়ে মাটি ফেলার মতো আপনাকে ওপরে তোলার কাজ নিভৃতচিত্তে অনেকেই করে যাচ্ছে। তারা যেদিন তাদের কাজটা সম্পূর্ণ করবে, সেদিন আবার নতুন করে সবুজ এ পৃথিবীটাকে দেখতে পাবেন। ততদিন শুধু দরকার অপেক্ষা আর গৃহবাস।
শিক্ষার্থী, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
