শিক্ষা ক্যাডার : পদোন্নতি নয়, ষষ্ঠ গ্রেড চাই
অনেকটা দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এ লেখাটি লিখছি। দেশের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসাবে এ লেখাটি লিখতে গিয়ে বারবার ভাবতে হয়েছে। কিন্তু অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা অবসানের লক্ষ্যে মূলত লেখাটা লিখছি। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস তথা বিসিএস পরীক্ষা নামক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করি। কিন্তু যোগদানের পর থেকে জ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের বঞ্চনার ইতিহাস দেখে দেশকে সেবা দেওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেছিলাম, সেই উচ্ছ্বাসের স্রোতে ভাটা নেমে আসে। তা সত্ত্বেও ভেবেছিলাম, সামনে সুদিন আসবে।
কিন্তু দিন দিন সেই বঞ্চনা ও বৈষম্যের পরিধি বাড়তেই থাকে। আমাদের চেয়ে জুনিয়র কর্মকর্তা, যারা অন্য ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেছে; তারা সময়মতো পদোন্নতিসহ চাকরিতে প্রাপ্য সব সুবিধা পাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, অন্যান্য সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পদোন্নতি হচ্ছে; অথচ, আমাদের সিনিয়র ব্যাচ থেকে শুরু করে আমাদের পরবর্তী ব্যাচগুলোতে পদোন্নতি যেন ডুমুরের ফুল হয়ে গেছে। বিগত সরকারের শেষ সময়ে অর্থাৎ ২০১৮ সালে তৎকালীন শিক্ষা সচিবের সময়ে শিক্ষা ক্যাডারে নবম গ্রেডের কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেড পেয়ে পদোন্নতি পান। তারপরও অনেকে পদোন্নতিবঞ্চিত হন। এরপর নতুন শিক্ষা সচিবের আগমনের পর তিনটি বছর পদোন্নতি বন্ধ থাকে। অথচ, এর মধ্যে ক্যাডার সার্ভিসের অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন। এ জন্য বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিলেও আমাদের পদোন্নতি বন্ধ রাখা হয়।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের রুল অনুযায়ী, একজন বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা বিভাগীয় পরীক্ষা, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সমাপন ও সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা পাস করা সাপেক্ষে পাঁচ বছর মেয়াদান্তে উচ্চতর স্কেল পাবেন। এ নিয়ম প্রশাসন ক্যাডারে যথাযথভাবে মানা হয়। অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তা উপরোক্ত ধাপ পেরোনোর পর ঠিক পাঁচ বছর পর উচ্চতর স্কেল বা ষষ্ঠ গ্রেড পেয়ে আসছেন। এ জন্য উঁচু স্তরে পদ খালি থাকা সাপেক্ষে পদোন্নতির কথা বলা হচ্ছে না। ইদানীং, অন্যান্য ক্যাডারেও এ নিয়ম প্রতিপালন করা হচ্ছে। অথচ ক্যাডার সার্ভিসের অন্যতম বৃহৎ ক্যাডার শিক্ষা ক্যাডারের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। ‘পদোন্নতির জন্য উঁচু স্তরে পদ খালি নেই’ এ কথা বলে আমাদের বারবার বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি, তেমনি সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছি।
অনেক দেনদরবার করার পর সদ্য বদলি হওয়া শিক্ষা সচিবের শেষ সময়ে তিন বছর পর শিক্ষা ক্যাডারে নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি হয়। কিন্তু সেই পদোন্নতির তালিকায় দেখা যায় যে, পদোন্নতির যোগ্য তথা ষষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্য অনেক শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। এতে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মাঝে চরম হতাশা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। একবিংশ শতাব্দীতে এগিয়ে চলার জন্য যখন উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ সরকার নানারকম পদক্ষেপ নিচ্ছে, বিভিন্ন চাকরিতে দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ দিয়ে সর্বস্তরের জনগণের আশা-ভরসা ও প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে, ঠিক তখন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে জনপ্রিয় এ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস চলছে। সম্প্রতি নতুন শিক্ষা সচিব যোগদান করেছেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে তার সততা ও দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে ইতিবাচক কথা শুনেছি। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি তার পূর্বসূরিদের দেখানো পথ অনুসরণ না করে শিক্ষা ক্যাডারের একজন অভিভাবক হিসাবে শিক্ষা ক্যাডারের বঞ্চনার ইতিহাসকে চিরতরে দূর করবেন। তার ইতিবাচক কর্ম শিক্ষা ক্যাডারের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তার কাছে আমাদের সবিনয় দাবি, আমরা পদোন্নতি চাই না; ষষ্ঠ গ্রেড চাই।
প্রভাষক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ফরিদপুর
শিক্ষা ক্যাডার : পদোন্নতি নয়, ষষ্ঠ গ্রেড চাই
মো. ফারুক আহমেদ
১২ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অনেকটা দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এ লেখাটি লিখছি। দেশের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসাবে এ লেখাটি লিখতে গিয়ে বারবার ভাবতে হয়েছে। কিন্তু অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা অবসানের লক্ষ্যে মূলত লেখাটা লিখছি। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস তথা বিসিএস পরীক্ষা নামক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করি। কিন্তু যোগদানের পর থেকে জ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের বঞ্চনার ইতিহাস দেখে দেশকে সেবা দেওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেছিলাম, সেই উচ্ছ্বাসের স্রোতে ভাটা নেমে আসে। তা সত্ত্বেও ভেবেছিলাম, সামনে সুদিন আসবে।
কিন্তু দিন দিন সেই বঞ্চনা ও বৈষম্যের পরিধি বাড়তেই থাকে। আমাদের চেয়ে জুনিয়র কর্মকর্তা, যারা অন্য ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেছে; তারা সময়মতো পদোন্নতিসহ চাকরিতে প্রাপ্য সব সুবিধা পাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, অন্যান্য সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পদোন্নতি হচ্ছে; অথচ, আমাদের সিনিয়র ব্যাচ থেকে শুরু করে আমাদের পরবর্তী ব্যাচগুলোতে পদোন্নতি যেন ডুমুরের ফুল হয়ে গেছে। বিগত সরকারের শেষ সময়ে অর্থাৎ ২০১৮ সালে তৎকালীন শিক্ষা সচিবের সময়ে শিক্ষা ক্যাডারে নবম গ্রেডের কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেড পেয়ে পদোন্নতি পান। তারপরও অনেকে পদোন্নতিবঞ্চিত হন। এরপর নতুন শিক্ষা সচিবের আগমনের পর তিনটি বছর পদোন্নতি বন্ধ থাকে। অথচ, এর মধ্যে ক্যাডার সার্ভিসের অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন। এ জন্য বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিলেও আমাদের পদোন্নতি বন্ধ রাখা হয়।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের রুল অনুযায়ী, একজন বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা বিভাগীয় পরীক্ষা, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সমাপন ও সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা পাস করা সাপেক্ষে পাঁচ বছর মেয়াদান্তে উচ্চতর স্কেল পাবেন। এ নিয়ম প্রশাসন ক্যাডারে যথাযথভাবে মানা হয়। অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তা উপরোক্ত ধাপ পেরোনোর পর ঠিক পাঁচ বছর পর উচ্চতর স্কেল বা ষষ্ঠ গ্রেড পেয়ে আসছেন। এ জন্য উঁচু স্তরে পদ খালি থাকা সাপেক্ষে পদোন্নতির কথা বলা হচ্ছে না। ইদানীং, অন্যান্য ক্যাডারেও এ নিয়ম প্রতিপালন করা হচ্ছে। অথচ ক্যাডার সার্ভিসের অন্যতম বৃহৎ ক্যাডার শিক্ষা ক্যাডারের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। ‘পদোন্নতির জন্য উঁচু স্তরে পদ খালি নেই’ এ কথা বলে আমাদের বারবার বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি, তেমনি সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছি।
অনেক দেনদরবার করার পর সদ্য বদলি হওয়া শিক্ষা সচিবের শেষ সময়ে তিন বছর পর শিক্ষা ক্যাডারে নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি হয়। কিন্তু সেই পদোন্নতির তালিকায় দেখা যায় যে, পদোন্নতির যোগ্য তথা ষষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্য অনেক শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। এতে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মাঝে চরম হতাশা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। একবিংশ শতাব্দীতে এগিয়ে চলার জন্য যখন উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ সরকার নানারকম পদক্ষেপ নিচ্ছে, বিভিন্ন চাকরিতে দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ দিয়ে সর্বস্তরের জনগণের আশা-ভরসা ও প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে, ঠিক তখন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে জনপ্রিয় এ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস চলছে। সম্প্রতি নতুন শিক্ষা সচিব যোগদান করেছেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে তার সততা ও দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে ইতিবাচক কথা শুনেছি। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি তার পূর্বসূরিদের দেখানো পথ অনুসরণ না করে শিক্ষা ক্যাডারের একজন অভিভাবক হিসাবে শিক্ষা ক্যাডারের বঞ্চনার ইতিহাসকে চিরতরে দূর করবেন। তার ইতিবাচক কর্ম শিক্ষা ক্যাডারের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তার কাছে আমাদের সবিনয় দাবি, আমরা পদোন্নতি চাই না; ষষ্ঠ গ্রেড চাই।
প্রভাষক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ফরিদপুর
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023