Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

তথ্যপ্রযুক্তির সূতিকাগার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব : প্রেক্ষিত কুমিল্লা

Icon

মোহাম্মদ কামরুল হাসান

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তথ্যপ্রযুক্তির সূতিকাগার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব : প্রেক্ষিত কুমিল্লা

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০২১-এ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের আইসিটিবিষয়ক শিক্ষাদানের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব।

এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০১৫-২০১৯ মেয়াদে সারা দেশে ৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়, যা ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে একনেকে অনুমোদিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২০২৩ মেয়াদে সারা দেশে আরও ৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব এবং ৩০০ শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, যা ২৮ জুলাই ২০২০ একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের আইসিটি ক্ষেত্রে আগ্রহী করে তোলা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী মানবসম্পদ হিসাবে ছাত্রছাত্রীদের গড়ে তোলা।

এ লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পর এখন আমরা উদ্ভাবনী বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছি। ২০৪১ সালের মধ্যে যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছি, সেটাই হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সেই সক্ষমতা আছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ব্লক চেইন, আইওটি, ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, রোবটিক্স, মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে উদ্ভাবনের পথে একযোগে কাজ করতে হবে, তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দর্শন ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় কুমিল্লা জেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কলেজ স্তরে প্রথম পর্যায়ে ১৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়। ওই ল্যাবগুলোয় ১ হাজার ৯৫৯টি ল্যাপটপ ও ৩১৫টি ডেস্কটপ কম্পিউটার প্রদান করা হয়। প্রথম পর্যায়ের মতো দ্বিতীয় পর্যায়েও কুমিল্লা জেলার ১৭২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কুমিল্লা জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হোমনা, দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৪টি প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার স্থাপন কার্যক্রম চলমান। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও অনুরূপ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। উল্লেখ্য, প্রতিটি ল্যাবে ১৭টি ল্যাপটপ, ১টি এলইডি স্মার্ট টিভি, ওয়েব ক্যামেরা, প্রিন্টার, ল্যান কানেকশন সেটিং মাল্টিপ্লাগ, রাউটার, স্ক্যানারসহ মোট ২৩টি আইসিটি সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

পাশাপাশি প্রতিটি শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচারে ৬টি ডিজিটাল স্মার্ট বোর্ড, ৫টি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন, ১টি ওয়াইফাই রাউটার, ৪টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডিজিটাল আইডি কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, কুমিল্লা কর্তৃক এ ল্যাবগুলোকে কার্যকর করতে বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রামের সঙ্গে প্রণীত ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ)-তে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কৌশলগত উদ্দেশ্যের আওতায় জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ব্যবহারিক প্রদর্শনীর আয়োজন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লববিষয়ক প্রশিক্ষণ ও সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আইসিটি শিক্ষকদের নিয়ে সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে।

সেমিনারে ল্যাবের বিদ্যমান অবস্থা ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এসব কার্যক্রমে ছাত্র-শিক্ষকদের উজ্জীবিত করতে ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রায় ২ হাজার ছাত্রছাত্রীকে রোবটিক্স, প্রোগ্রামিংবিষয়ক ওরিয়েন্টশন এবং সাত শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে প্রোগ্রামিং, রোবটিক্স ও ২০০ প্রশিক্ষণার্থীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ মার্চ ২০২২ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম-এর উপস্থিতিতে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব সমৃদ্ধ ২০০টি বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষকদের নিয়ে ‘তথ্যপ্রযুক্তির সূতিকাগার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা করোনাকালে ল্যাপটপ, ডেস্কটপগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় এগুলোর ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়া, শিক্ষকের অপ্রতুলতা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, ইন্টারনেটের গতির সীমাবদ্ধতা, যন্ত্রপাতিগুলো যথাসময়ে সার্ভিসিং না করা ইত্যাদি সমস্যা তুলে ধরেন। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবগুলোর বিদ্যমান সমস্যা নিরসন এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিম্নরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে-

১. সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং তার আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোর এপিএ-তে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক তার যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকর পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা;

২. চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে প্রোগ্রামিং, রোবটিক্স, ফ্রিল্যান্সিং, কোডিং, থ্রিডি প্রিন্টিং ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশ করা;

৩. প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিটি শিক্ষক নিয়োগসহ বিদ্যমান আইসিটি শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্য বিষয়ের শিক্ষকদেরও যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;

৪. ল্যাবগুলোয় পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কম্পিউটারবিষয়ক ব্যবহারিক ক্লাস নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় ছাত্রছাত্রী ছাড়াও আগ্রহী যুবক ও তরুণদের শিক্ষার জন্য ওই ল্যাবগুলো উন্মুক্তকরণ;

৫. একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি নবম দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক ঐচ্ছিক সার্টিফিকেশন কোর্স চালু করা; এবং

৬. বিদ্যালয়গুলোয় প্রোগ্রামিং ও রোবটিক্স ক্লাব গঠন করে ওই ক্লাবগুলোর মাধ্যমে আন্তঃস্কুল ও আন্তঃউপজেলা প্রোগ্রামিং, রোবটিক্স ও কোডিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।

জেলা প্রশাসন, কুমিল্লা কর্তৃক শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্বদানের উপযোগী প্রোগ্রামিং, কোডিং, রোবটিক্স ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উদ্যোগ সারা দেশে বিস্তৃত করা গেলে বাংলাদেশ এর সফল অংশীদার হতে পারবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। বস্তুত এর মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের সুখী, সমৃদ্ধ, জ্ঞানভিত্তিক সোনার বাংলা, যার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা

mkhasan2003@gmail.com

ডিজিটাল ল্যাব

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম