Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

নির্বাচন কমিশনের হাতেই থাকুক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন কার্যক্রম

Icon

মোজাম্মেল হক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা প্রণয়ন কার্যক্রমের অবিচ্ছেদ্য অংশীদার বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এমনকি বর্তমানে প্রচলিত আইনে এ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছেই রয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি) নিয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায় থেকে কমিশন সচিবালয় পর্যন্ত কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্পৃহা কমে যাবে। ২০০৭-২০০৮ সালে মহামান্য আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে দলমতনির্বিশেষে সবার আস্থার জায়গা থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় প্রায় ৮.১০ কোটি নাগরিকের তথ্য ও বায়োমেট্রিক্স সংগ্রহপূর্বক জাতীয় ভোটার ডেটাবেজ গড়ে তোলা হয়। পরে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ হালনাগাদ কার্যক্রম অনুসারে প্রায় ১২ কোটি নাগরিকের তথ্য ও বায়োমেট্রিক্স সংবলিত এই ডেটাবেজের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন পুরো দেশবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। বর্তমানে ইসির কাছে সংরক্ষিত এনআইডি সার্ভার থেকে সরকারি-বেসরকারি ১৬৪টির মতো প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির পরিচিতি শনাক্ত করছে।

কেন নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা উচিত?

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনই এখতিয়ারভুক্ত। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনের রয়েছে আলাদা সচিবালয়, আঞ্চলিক পর্যায়ের জন্য রয়েছে ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, জেলা পর্যায়ে সেবা প্রদানের জন্য রয়েছে ৬৪টি জেলা নির্বাচন অফিস; সর্বোপরি উপজেলা/থানা পর্যায়ে সেবা প্রদানের জন্যও রয়েছে ৫১৯টি উপজেলা নির্বাচন অফিসের ব্যবস্থা এবং এতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ তাদের দোরগোড়ায় সেবা পাচ্ছেন।

নিজস্ব ডেটাবেজ ও কর্মী ব্যবস্থাপনা : একমাত্র নির্বাচন কমিশনের অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রয়েছে মাঠ পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক কর্মী। উপজেলা নির্বাচন অফিসারের তত্ত্বাবধানে দেশের প্রতিটি উপজেলায় অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ও স্ক্যানিং অপারেটরদের সমন্বয়ে উপজেলা পর্যায়ে প্রতিমাসে নির্ধারিত সময়ে বাদপড়া ভোটারদের নিবন্ধনসহ বছরের সব সময়ে জনগণকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসাবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করার লক্ষ্যে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার ইভিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আবার নির্বাচন কমিশনের রয়েছে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলার জন্য আলাদা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, যা ইটিআই নামে পরিচিত।

জনগণের ভোগান্তি লাঘবে কমিশন : বর্তমানে ছবিসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন, স্থানান্তর, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের জন্য রয়েছে উপজেলা পর্যায়ের প্রতিটি অফিসে আলাদা হেল্পডেক্স। সেখান থেকে জনগণ উপকৃত হচ্ছে। কাজেই ভোটার তালিকা ডেটাবেজের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া অন্য কেউ হলে অপারেশনাল কার্যক্রমে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এতে বাংলাদেশের জনগণ চরম ভোগান্তির শিকার হবেন। কাজেই ক্ষেত্র বিবেচনায় নির্বাচন কমিশনই সর্বোত্তম।

সরকার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে : বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান মহামারি কাটিয়ে যখন উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ, ঠিক এ সময়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মোটেও কাম্য নয়। জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন কার্যক্রমটি নির্বাচন কমিশন থেকে অন্য কোনো সংস্থা পরিচালনা করলে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছাতে সুদীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। কাজেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি ও আলাদা স্বতন্ত্র ডেটাবেজ ব্যবস্থাপনার ফলে তথ্যের অভিন্নতা ক্ষুণ্ন হবে এবং সরকারকে আলাদা অফিস, জনবল দিতে হবে। কাজেই সরকার অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জনগণের উৎসাহ-উদ্দীপনা কমে যাবে : জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন থেকে অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগে ন্যস্ত করা হলে শুধু ভোটার হওয়ার জন্য জনগণের আগ্রহ ও উদ্দীপনা কমে যাবে। তাছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান (ইসি) তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনী কার্যক্রমের স্বীকৃতি হারালে এতে নতুন কোনো উদ্ভাবনেও আর উৎসাহিত হবে না।

উল্লিখিত দিক বিবেচনা না করে সরকার যদি এনআইডি প্রণয়ন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিয়ে দেয়, তাহলে দেশের জনগণের এত দিনের বিশ্বাস, আস্থা ও ভালোবাসার প্রাণকেন্দ্র নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজের প্রতি তাদের কোনো আস্থা থাকবে না। তবে যেহেতু এটি সরকারের সিদ্ধান্ত, তাই এটি রাষ্ট্র, সরকার ও পার্লামেন্টের বিষয়। সরকারের উচিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়ার আগে পুনারায় বিবেচনা করা। পরিশেষে বলতে চাই-জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের হাতেই থাকুক।

কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম