Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

ছাত্রছাত্রীদের শাসনের মাত্রা কতটুকু হওয়া উচিত

Icon

অধ্যক্ষ মো: মিজানুর রহমান ভূইয়া

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষকদের শাসন; শিক্ষকের শাসনের মাত্রা কতটুকু; শাসন না থাকায় কিশোর বয়সেই ছেলেমেয়েদের সামাজিক অধঃপতন-এ বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। মা-বাবা ছেলেমেয়েদের শাসন করবেন। পুলিশ আসামিদের শাসন করবেন, আদালত শাস্তি দেবেন। যে কোনো প্রতিষ্ঠান তার অধীনস্থদের অন্যায় ও অনিয়মে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন। প্রতিরক্ষা বিভাগে শাস্তির ব্যবস্থা আছে। অর্থাৎ সব সেক্টরেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ও তাদের আচরণের জন্য তাদের মানবিক শাসন করা যাবে না কেন? আমি অমানবিক শাসনের কথা বলছি না। এখন ছাত্রছাত্রীদের অশোভন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য বা ক্লাস নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষকদের শাসন বন্ধ। অধ্যাদেশ বা আইন দ্বারা শাসন বন্ধ করায় শিক্ষকদের ন্যূনতম শাসন করার অধিকার হরণ করা হয়েছে, যার কারণে শিক্ষকরা নির্বিকার ও মানবিক শাসনে উদাসীন।

ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিকচর্চাসহ চিত্ত-বিনোদনের নেই কোনো নিরাপদ জায়গা। নেই খেলার মাঠ। নেই সংস্কৃতিচর্চা ও আয়োজক সংগঠন। তাই মোবাইল গেম এবং অসৎ বন্ধুদের আড্ডায় পড়ে অনেক ছেলেমেয়ে বিপথগামী হচ্ছে। মা-বাবা বা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সমাজের কর্তারা এখন আর আগের মতো তাদের শাসন বা মনিটরিং করেন না। এ কারণে ছেলেমেয়েরা অবাধ সুযোগ পেয়ে কিশোর বয়সেই বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। শাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে সমাজের কর্তা ও শিক্ষকরা এসব দেখেও কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছেন না বা নিচ্ছেন না। একসময় এলাকার বড়ভাই-মুরুব্বি-শিক্ষকদের দেখলে ছাত্রছাত্রী ও তরুণ ছেলেমেয়েরা একটা সামাজিক বিধিবিধান ও শাসনের ভয়ে থাকত। এর ফলে অপরাধ করা বা অন্যায় আচরণ থেকে নিজেদের বিরত রাখত। আজকাল কেউ শাসন করলে বাব-মা-ভাইবোন এ সামাজিক শাসন মেনে না নিয়ে উলটো অপমান করেন, যার কারণে সামাজিক ও পারিবারিক শাসনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ সামাজিক শাসনের অবহেলায় সামাজিক অবক্ষয় দিনদিন বাড়ছে।

এখন প্রতিবেশী ও সমাজের যে সামাজিক অধিকার, তা আর নেই। বাস্তবতা হচ্ছে-বাবা-মা তাদের আদরের ছেলেমেয়েকে আগের মতো শাসন করছেন না। একজন শিক্ষক যদি ছাত্রছাত্রীর উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও শৃঙ্খলার জন্য শাসন না করেন, তবে সে ছাত্রছাত্রীকে কোনোভাবে পাঠদান-শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ একজন শিক্ষক শৃঙ্খলার জন্য বা ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগী করতে শাসন না করার কারণে অনেক ছেলেমেয়ে সুশৃঙ্খল আচরণের পরিবর্তে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ছে। পরে তাকে আর লেখাপড়ায় মনোযোগী করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের কিছু অনুচিত চঞ্চল আচরণ ও শৃঙ্খলার অভাবে পরে তারা সমাজের বিভিন্ন অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আন্তরিকতা, সহনশীলতা, ধৈর্য, বন্ধুসুলভ মনোভাব ও মানবতাবোধের আজ বড়ই অভাব। বর্তমানে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক, সহপাঠীদের সহমর্মিতার ও মানসিকতার অধঃপতন লক্ষণীয়, যা আমাদের শিক্ষক হিসাবে বারবার ভাবিয়ে তোলে। বিবেকের কাছে প্রশ্ন জাগে-আমরা কি শিক্ষক হিসাবে ব্যর্থ; না সমাজ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদের গ্রাস করছে? তাই মনে হচ্ছে-আজ সামাজিক, পারিবারিক, বাবা-মা, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বিত ভদ্র শাসন অতীব জরুরি হয়ে পড়ছে। তা না হলে সামাজিক অবক্ষয় দিনদিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়বে। সমাজ ও মানুষ হয়ে পড়বে অরক্ষিত এবং মানুষ মানুষের কাছে হয়ে পড়বে জিম্মি।

সালেমুন নেছা একাডেমি, কাওলা, দক্ষিণখান, ঢাকা

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম