Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

ভোলায় সরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা সংকট চরমে

Icon

মো. রাসেল হোসাইন

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম অধিকার হলো চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও আজকাল চিকিৎসা নিয়ে চলছে বহুবিধ প্রতারণা। ভোলা জেলা ৭টি উপজেলা, ১০টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ৭০টি ইউনিয়ন, ৪টি সংসদীয় আসন এবং প্রায় ২৫ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত। এ জেলার সঙ্গে বিভাগ ও রাজধানীর সরাসরি কোনো সড়কপথ না থাকায় প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে জরুরি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য। জেলার প্রতিটি উপজেলায় সরকারি হাসপাতাল থাকলেও নেই তেমন কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা। এসব সরকারি হাসপাতালে জন্মলগ্ন থেকেই ডাক্তার, নার্স, স্টাফ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতির সংকটের অভিযোগ শুনে আসছেন সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজন। এ অজুহাতে কোনা রোগী প্রাথমিক অসুস্থতা অতিক্রম করলেই তাকে উপজেলা হাসপাতাল থেকে ভোলা জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রোগী আরও বেশি অসুস্থ হলে জেলা হাসপাতাল থেকে বিভাগীয় শহর বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো বুঝতে পারলে অধিকংশ রোগীকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠানো হয়, যেসব হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য রোগীপ্রতি ‘পার্সেনটেজ’ রয়েছে।

বর্তমানে ভোলা জেলা হাসপাতালে জটিল বা কঠিন কোনো অপারেশন তো হচ্ছেই না; ছোট কোনো অপারেশন করার ক্ষেত্রেও হাসপাতাল কৃর্তপক্ষের কাছ থেকে শুনতে হয়ে বিভিন্ন অজুহাত। দেশের সরকারি সব হাসপাতালের অবস্থা কমবেশি প্রায় একই রকম। তার মধ্যে ভোলা সরকারি হাসপাতালগুলোয় ডাক্তার আছে তো নার্স নেই, নার্স আছে তো যন্ত্রপাতি নেই। এমনকি হাসপাতালের জন্য বরাদ্দকৃত ওষুধ গরিব রোগীরা না পেলেও বাজারে তা কিনতে পাওয়া যায়। এসব নিয়ে জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া জেলায় অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার বাড়ছে শিশুজন্মে। বিআইডিএসের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শহরের তুলনায় এ জেলার গ্রামাঞ্চলে সিজারিয়ানের হার বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এতে মানুষের পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। সরকারি হাসপাতালে এজন্য ব্যয় হয় ৬৫ শতাংশ আর বেসরকারিতে শতভাগ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো একটি দেশে ডেলিভারির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সিজার হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে ২০১৭-১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, এ হার ৩২.২২ শতাংশ, ২০০৩-০৪ সালের দিকে যা ছিল মাত্র ৩.৯৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতকে একটি রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত বলা হয়ে থাকে। যে দেশের জনগণ স্বাস্থ্যের দিক থেকে এগিয়ে, সে দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিও গতিশীল। দ্রব্যমূল্যের চাপে এমনিতেই আমরা প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছি, তার ওপর চিকিৎসা ব্যয় মানুষের জীবনকে আরও পর্যুদস্ত করে দিচ্ছে। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিনিত অনুরোধ-বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ভোলা জেলার ২৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সংকট দূর করতে উপযুক্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ভোলা

hossainmdrasel559@gmail

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম