Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

আলো ছড়াচ্ছে শোভালয় ডে-কেয়ার

Icon

শাহীন আরা ইয়াসমিন

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আলো ছড়াচ্ছে শোভালয় ডে-কেয়ার

একটা বয়সের পর পরিবারের কোনো কাজেই বয়স্কদের অংশগ্রহণ থাকে না। বার্ধক্যের কারণে নিজের সংসারেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন।

এছাড়া নিম্নবিত্ত পরিবারে সংসারের অভাব পূরণ করে বৃদ্ধদের জন্য বয়সোপযোগী খাবার দেওয়া সম্ভব হয় না। দেশের বৃদ্ধদের এসব সমস্যা বিবেচনায় এনে প্রকৌশলী ফরহাদ আহমেদ এবং তার স্ত্রী রেজিনা আহমেদ নিম্নবিত্ত পরিবারের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের জন্য গড়ে তুলেছেন শোভালয় নামে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ডে-কেয়ার। রংপুর শহরের কাছাকাছি সদ্যপুষ্করিণী ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামে তৈরি করা হয়েছে ছোট পরিসরের এই ডে-কেয়ার। ফরহাদ আহমেদ তার মা শোভার নামানুসারে এর নাম রেখেছেন ‘শোভালয় ডে-কেয়ার’। কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে কাটিয়েছেন। তবে জীবনের প্রথম থেকেই জনহিতকর কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় নিজ উদ্যোগে সমাজের অবহেলিত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্যই ডে-কেয়ারটি স্থাপন করেছেন। সেই সঙ্গে এটি পরিচালনার জন্য বাবুর্চি, ক্লিনার, গার্ড, নার্স ও সুপারভাইজার নিয়োগ দিয়েছেন।

২০২২ সালের মে মাসে নিজেদের অর্থায়নে শুরু করা এই ডে-কেয়ারে বর্তমানে ২০ জন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন। সব ধর্মের বয়ষ্ক মানুষকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এখানে সেবা দেওয়া হয়। ডে-কেয়ারটিতে তাদের আনা নেওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা আছে। এখানে অবস্থানরত সবাইকে সকালের নাশতা, দুপুরে খাবার ও বিকালে নাশতা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, বয়ষ্কদের পুষ্টির কথা চিন্তা করে প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে দুধ, ডিম ও কলা রাখা হয়। যাতায়াত ভাড়া ও খাবারের সব খরচ বহন করে শোভালয় ডে-কেয়ার। এছাড়া সেবাগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য মাসে একবার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। উপরন্তু একজন নার্স নিয়মিত তাদের ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিসের মাত্রা প্রভৃতি পরীক্ষা করেন। কেউ অসুস্থ হয়ে ডে-কেয়ারে না এলে নার্স তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসায় সহযোগিতা করেন।

শোভালয় ডে-কেয়ার সেন্টারের যাত্রা খুব অল্প সময়ের হলেও এরই মধ্যে এ মহৎ উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। সেবাগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি প্রতীয়মান হচ্ছে এবং তারা বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে সময় কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন (শুক্রবার ছাড়া) সকালে এসেই পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন, গল্পগুজব করছেন এবং কখনো একসঙ্গে বসে টিভিও দেখছেন। যারা শারীরিকভাবে কিছুটা সবল, তাদের মাঝে সেখানকার কর্মীদের সহযোগিতা করার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়। এখানে তারা যাতে আরও প্রাণবন্ত সময় কাটাতে পারেন-এজন্য শোভালয় ডে-কেয়ার শাকসবজি চাষ ও বাগান তৈরি করেছে। এর ফলে গল্পগুজব ও বিনোদনের পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে বয়ষ্করা তাদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে পারছেন।

এখানে একটি কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়-শোভালয় ডে-কেয়ার বৃদ্ধদের প্রতি সহমর্মিতা-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার পাশাপাশি তাদের গুরুত্বসহকারে সেবা দেওয়ার ফলে অনেক সন্তানই বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি তাদের অনাদরের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছেন। এ কারণে কেউ কেউ এখন মা-বাবাকে ডে-কেয়ারে না পাঠিয়ে নিজেদের কাছে রাখছেন। বয়স্কদের প্রতি পরিবারের সবার দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করার এ বিষয়টিকে শোভালয় ডে-কেয়ার তাদের সফলতা হিসাবে গণ্য করছে।

শোভালয় ডে কেয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফরহাদ আহমেদের সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা রয়েছে। তিনি এই ডে-কেয়ারের কার্যক্রম বিস্তৃত করে আরও বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যেতে চান। একই সঙ্গে পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটিকে আবাসিকে রূপান্তরের স্বপ্ন রয়েছে তার। তবে যে কাজটার কথা তিনি তার বক্তব্যে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন, সেটা হলো-একটি স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণ।

শোভালয় ডে-কেয়ার সেন্টারের নিয়মিত কার্যক্রম ছাড়াও প্রতিবন্ধী এবং দুর্ঘটনায় আহত ও পঙ্গু ব্যক্তিদের পাশে থাকার মহৎ চিন্তাও তিনি পোষণ করছেন। এক্ষেত্রে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা পেলে তার এ মহতী পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

গণমাধ্যমকর্মী, ঢাকা

আলো ছড়াচ্ছে. শোভালয় ডে-কেয়ার.

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম