প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি
মো. সাইফুল মিয়া
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে নতুন আতঙ্কের নাম নিপাহ ভাইরাস। ইতোমধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। দুঃসংবাদ হলো, এর মধ্যে ৭ জন মারা গেছে। আগের অভিজ্ঞতা ও বর্তমানে প্রাদুর্ভাবের পরিসংখ্যান থেকে বলা যায়, এ ভাইরাসে আক্রান্তের মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ। সর্বশেষ ২ ফেব্রুয়ারি নাটোরে ১২ বছরের এক শিশু এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে এ ভাইরাসে সংক্রমণের সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যাও অনেক। অনেকে চিকিৎসকের কাছে যান না বা এ ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ৩৩টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে চিকিৎসকদের অবলম্বনের জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দুঃখজনক হলেও সত্য, অন্যান্য ভাইরাস নিয়ে যত প্রচার হয়, এ ভাইরাসে তা লক্ষ করা যাচ্ছে না। মূলত আমাদের দেশে ২০০১ সালে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস শনাক্ত হলেও এ সম্পর্কে সর্বত্র অবগত করা হয়নি। তাই সাধারণ মানুষ এ ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন নয়। এখনই সময়, প্রাণঘাতী এ ভাইরাস সম্পর্কে দেশের সর্বত্র সচেতনতা সৃষ্টি করা; অন্যথায় মহামারির মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
নিপাহ ভাইরাস পশু-পাখি থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়। বাদুড় এ ভাইরাসের প্রধান বাহক। এ ভাইরাস বাদুড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তবে মজার ব্যাপার হলো, বাদুড় এতে আক্রান্ত হয় না। আবার একজন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে অন্য আরেকজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। শীতকালে আমাদের দেশে খেজুরের কাঁচা রস একটি জনপ্রিয় খাবার। রাতে খেজুরের গাছে হাঁড়ি রাখলে সকালে হাঁড়ি ভরা খেজুরের রস পাওয়া যায়। এ রস খেতে বেশ সুস্বাদু ও মজাদার। তাই অনেকে শখ করে শীতকালে খেজুরের রস খেতে চায়। রাতে বাদুড় হাঁড়িতে পড়া খেজুরের কাঁচা রস খায় এবং বাদুড়ের লালা খেজুরের রসে পড়ে। তখন বাদুড়ের লালার সঙ্গে নিপাহ ভাইরাস রসে যায়। মানুষ এ রস খাওয়ার পর ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। তবে এ কথা সত্য যে, শুধু বাদুড়ে খাওয়া খেজুরের রসের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়, তা নয়। সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে শূকর শনাক্ত করা হয়। সেখানে খেজুরের রস খাওয়ার প্রচলন নেই বললেই চলে। তবুও শূকরের খামারে কাজ করা চাষীদের মাধ্যমে প্রথম এ রোগ ছড়িয়েছিল।
নিপাহ ভাইরাস এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির হঠাৎ পেশিতে ব্যথা দেখা দেয়। সাধারণ জ্বর ছাড়াও কাশি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাস নিরাময়ে কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তাই ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতাই একমাত্র হাতিয়ার। এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে আমরা বিশেষ কিছু পন্থা অনুসরণ করতে পারি। যেহেতু খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার কারণে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাই কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। খেজুরের রস ভালোভাবে ফুটিয়ে বা গুড় বানিয়ে খেতে হবে। এছাড়া বাদুড়ে খাওয়া যে কোনো ফলমূলের মাধ্যমেও নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই বাদুড়ে খাওয়া যে কোনো ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
