সংবাদপত্রের শিক্ষা পাতা নিয়ে কিছু কথা
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সংবাদপত্রে শিক্ষার্থীদের পরিষেবায় নিয়োজিত একটি পাতার নাম ‘শিক্ষা পাতা’। বহুলপ্রচারিত জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রায় সবকটি স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য এ পাতা বের করে। সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্ন, উত্তর ও বিবিধ বিষয়ে বিশদ বিবরণ থাকে পাতাগুলোয়।
পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের বিষয়াবলির ওপর প্রশ্ন, উত্তর, ব্যাখ্যা, ভাবসম্প্রসারণ, রচনা-সবই তুলে ধরা হয় পত্রিকাগুলোর শিক্ষা পাতায়। নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জ্ঞানগর্ভ লেখা ও আলোচনা তুলে ধরেন এসব পাতায়। ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং নিয়ে তথ্য পরিবেশন করে কোনো কোনো কাগজ। শিক্ষার পাশাপাশি ‘ক্যাম্পাস পাতা’য় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিতি এবং এসব প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের খবর তুলে ধরা হয়। থাকে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বৃত্তির খোঁজখবর। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিবিষয়ক প্রশ্নোত্তর গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশন করে কোনো কোনো কাগজ।
এখন কথা হলো, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার যাবতীয় পথ বাতলে দেওয়া হয় শিক্ষা পাতায়। তারা তোতাপাখির মতো মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাশ করে। অনেকেই গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ বা জিপিএ ফাইভ পায়। কিন্তু সিলেবাসের বাইরে তাদের জ্ঞান একেবারেই সীমিত। তারা নির্ধারিত পাঠ্যসূচির বাইরের জীবন ও জগৎ সম্পর্কে রীতিমতো অজ্ঞ থাকে। বহুকিছু জানে না। সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার পথে এ পদ্ধতি বা ব্যবস্থা প্রধান অন্তরায় বলে আমরা মনে করি।
সমাধানের উপায় : আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীকে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, জীবনী, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবন-আবিষ্কারসহ প্রচুর রেফারেন্স বই পড়তে হবে। এ কাজটি আগে শুরু করবেন শিক্ষক। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক লাইব্রেরি বা শিক্ষায়তন গ্রন্থাগার গড়ে তুলতে হবে। একাডেমিক লাইব্রেরি গড়ে তোলার নির্দেশনা রয়েছে বহুকাল আগে থেকেই। সাম্প্রতিককালে, ২০১০ সালে শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমিক স্কুল ও সমমানের মাদ্রাসায় ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক’ পদ সৃষ্টি করেছেন। পদটি এমপিওভুক্ত। এ পদকে আরও সম্মানিত করার জন্য এর নাম দেওয়া হয়েছে সহকারী শিক্ষক (তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা)। কেউ যাতে গ্রন্থাগারিককে তুচ্ছজ্ঞান করতে না পারে, সেজন্য এ ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, কবছর আগে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনাকে ক্লাস রুটিনের অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ নির্দেশ অনুসরণ করে না, যা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও অন্য শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে।
আমাদের দাবি : আমরা মনে করি, তৃতীয় শ্রেণি থেকে সব শ্রেণিতে ‘তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’ বিষয় বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাহলেই শৈশব থেকেই শিশু বই পড়ায় আগ্রহী হয়ে উঠবে। কারণ যা কিছু সুশিক্ষা, তার শুরু শৈশবেই করতে হয়।
সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ও বেরাইদ গণপাঠাগার
