Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

দিগন্তের পথে ছুটে চলা

Icon

শাহীন আলম

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ছুটি মানেই ঘোরাঘুরি। তা যদি জলপ্রপাত, পাহাড়, সমুদ্রতটে হয়, তাহলে তো কথা নেই। এমন মোক্ষম সুযোগ কেউ হাতছাড়া করবে না। ছুটির দিন মানেই আমাদের জন্য ভ্রমণের দিন। ঠিক তেমনই এক ছুটির দিনে আমরা চলে গিয়েছিলাম মহামায়া লেক, নাপিত্তাছড়া ঝরনা আর গুলিয়াখালি সি-বিচে। ঘড়ির কাঁটা তখন ভোর ৪টা ছুঁইছুঁই। সূর্য মামা তখনও নিজের অবস্থান জানান দেয়নি। আমরা ছুটে চললাম ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের দিকে। অনেকের এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি। গাড়ি চলতে চলতে থেমে গেল এক লেকের পাশে এসে। এর নামই মহামায়া লেক। গাড়ি থেকে নামার পর দেখলাম চারদিক এখনো নীরব। পাশে ছুটে চলছে ঢাকাগামী কর্ণফুলী ট্রেন। কিছু পরে এলাকার মানুষদের কাজে যেতে দেখলাম। যাওয়ার জন্য তারা ব্যস্ত। কেউ নৌকা নিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে, আবার কেউ দোকানের ঝাপ খুলছেন। অনেকে আবার চলেছে নিজেদের দূর গন্তব্যে। আমরা দুটি নৌকা ভাড়া করলাম লেকের আশপাশের সৌন্দর্য দেখার জন্য। এর প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। জানতে হলে নিজের চোখে তা দেখতে হবে।

প্রায় অনেকক্ষণ লেকে ঘোরার পর ফিরে এলাম পাড়ে। এখন আমাদের গন্তব্য এক গহিন পাহাড়ের দিকে, নাপিত্তাছড়া ঝরনার দেখা পেতে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ের দিকে চলেছি আমরা। আঁকাবাঁকা রাস্তায় দেখা মিলছে বিভিন্ন পেশার মানুষের। কেউ গরু নিয়ে যাচ্ছে মাঠে, কেউ কাঁচি-দা নিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে গাছ কাটতে। মাঝেমধ্যে দেখা যায় কিছু বৃদ্ধ কাঁধে গাছ নিয়ে নামছেন গহিন পাহাড় থেকে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলের ব্যাগ একপাশে রেখে খেলছে ঝরনা থেকে বয়ে আসা পানিতে। আমরা গহিন পথ ধরেই চলতে লাগলাম, মাঝেমধ্যে কিছু বাধা বিপত্তিও দেখা যায়। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ এবং প্রচণ্ড গরম আমাদের কিছুটা ক্লান্ত করছে। তবে যত যাচ্ছি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। বড় বড় পাথর আর পানি তো আছেই। সঙ্গে আছে পাহাড়ের বিশাল বিশাল খাদ। ভয়ংকর কিন্তু অসম্ভব সুন্দর। দুই পাশে পাহাড় আর মাঝখানে সরু রাস্তা। রাস্তা বলতে এটা সহজ রাস্তা নয়। কখনো বড় বড় পাথর পাড়ি দিতে হবে, কখনো ছোট ছোট পানির গর্ত পাড়ি দিতে হবে আবার কখনো উঠতে হবে পাহাড়ে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এ পথে। তবে ঝরনায় যাওয়ার এ রাস্তাটির প্রতিটি অংশই অদ্ভুত সুন্দর। রাস্তায় মাঝে মাঝে দেখা মিলবে ভয়ংকর অন্ধকারের। একা হলে এগিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব; কিন্তু আমাদের সামনে ছিলেন পথপ্রদর্শক শামীম স্যার। তার নেতৃত্বে এগিয়ে চললাম এ গহিন পথে। তিনি সব বাধা পেরিয়ে সবার আগে চলেছেন। তিনিও উত্তেজিত এ ঝরনা দেখার জন্য। তার পেছনে আমরা ছিলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা একঝাঁক তরুণ ক্যাডেট। যারা দেশের ক্লান্তিলগ্নে কাজ করে থাকে।

পরিশেষে, দেখা মেলে সেই কাঙ্ক্ষিত ঝরনার। এখানে মূলত তিনটি ঝরনা রয়েছে। এগুলো হলো কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি এবং বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। আর ঝরনাগুলোয় যাওয়ার যে ঝিরিপথ রয়েছে সেটাকে নাপিত্তাছড়া টেইল বলে। ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর পরিশ্রম সার্থক হলো। সময়গুলো কীভাবে শেষ হয়ে গেল তা কেউ টেরই পাইনি। এরপর চলতে লাগলাম আরেক গন্তব্যে। এখন আমাদের উদ্দেশ্য গুলিয়াখালি সি-বিচ। বিকাল ৪টায় পৌঁছে গেলাম সেখানে; কিন্তু আমরা যেতে না যেতেই শুরু হলো প্রকৃতির কান্না। হঠাৎ এক বৃষ্টি এসে সবকিছু নীরব করে দিল। সবাই ছুটে চলেছে নিজ নিজ আশ্রয়স্থলে। এমন সময় দেখলাম, এক বাবা তার সন্তানকে নিয়ে বৃষ্টিতে দৌড়াদৌড়ি করছেন আর খেলছেন। পাশে কয়েকজন ছেলেমেয়ে সাগরে সাঁতার কাটছে। একঝাঁক তরুণ সাগরপারে ফুটবল খেলছে।

সমুদ্রপারে সবুজ গালিচা বিছানো এক বিস্ময়কর স্থান গুলিয়াখালী সি-বিচ। চারপাশে বিস্তৃত জলরাশি। অন্যদিকে কেওড়া বন। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল বেড়িয়ে আছে। এ কেওড়া বন সমুদ্রের অনেকটা গভীর পর্যন্ত চলে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, সৈকতজুড়ে সবুজ গালিচা বিছানো। সমুদ্রপারের এ মনোরম সৌন্দর্য বোধহয় অন্য কোথাও দেখতে পাবেন না! এই দীর্ঘ ভ্রমণে সবচেয়ে বেশি মন কেড়ে নিয়েছে গুলিয়াখালি সি-বিচের দৃশ্যটি। শেষ পর্যন্ত আমরা ফিরে এলাম নিজেদের বাসস্থানে। যেন এক অচেনা ভুবন থেকে ফিরে এলাম।

শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম