Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

সর্বজনীন পেনশন এক নতুন সম্ভাবনা

Icon

মো. এমদাদুর রহমান উদয়

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান, স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা ও সর্বোপরি জীবন মানোন্নয়নে সময়োপযোগী আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ১৭ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা এ বছর পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রণয়নের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়। মূলত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত এবং বার্ধক্যকালীন সুবিধা প্রদান এতে প্রাধান্য পায়। আমাদের দেশে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বাধ্যতামূলক পেনশন সুবিধা প্রচলিত রয়েছে। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োজিত কর্মীরা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট আর্থিক সহায়তা অর্থাৎ পেনশন সুবিধা পেয়ে থাকেন। যে সুবিধা ওই ব্যক্তি আমৃত্যু পেয়ে থাকেন। এতে করে শেষ বয়সে তাদের মৌলিক চাহিদাসহ সুষ্ঠুভাবে জীবন ধারণের পথ ত্বরান্বিত হয়। এ ছাড়া পেনশনভুক্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার স্ত্রী বা অন্য কোনো নমিনি এ সুবিধার অংশ হতে পারেন।

উন্নত বিশ্বেও মানুষের জন্য তাদের পেশাগত মর্যাদার ওপর ভিত্তি করে একাধিক পেনশন স্কিম চালু রয়েছে; কিন্তু আমাদের দেশে ইতঃপূর্বে এরূপ কোনো প্রকল্প চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প প্রথমবারের মতো এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে। মূলত আঠারো থেকে ষাট বছর বয়সি যে কোনো পেশায় সম্পৃক্ত নাগরিক এ প্রকল্পের আওতাধীন। তবে সরকারি চাকরিজীবী ও বর্তমানে সরকারি ভাতা সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীকে আপাতত এ প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন সুবিধা পেতে ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখার বিপরীতে যে কোনো নাগরিক চাইলে পেনশন প্রকল্পে নিজেকে যুক্ত করতে পারবে। কমপক্ষে দশ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করার পর ওই ব্যক্তি পেনশন সুবিধা পাবেন। পেনশনে চাঁদা হিসাবে প্রাপ্ত এসব অর্থ সরকারিভাবে বিনিয়োগযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে এবং আয়কর মুক্ত থাকবে। দেশের হতদরিদ্র শ্রেণি থেকে শুরু করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী সব জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পকে আপাতত চারটি ভিন্ন ভিন্ন স্কিমে টাকা জমা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো হলো-প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা।

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো কমপক্ষে দশ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে চাঁদা পরিশোধ করা। তবে কোনো ব্যক্তি যদি টানা দশ বছর চাঁদা পরিশোধে ব্যর্থ হয় বা উক্ত সময়ের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে, তবে তার নমিনিকে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একজন ব্যক্তি ষাট বছরের পর থেকে নিয়মিতভাবে পেনশন সুবিধা পেতে থাকবেন। তবে যাদের বর্তমান বয়স পঞ্চাশ বা তার অধিক, তাদের ক্ষেত্রেও সুযোগ থাকছে। সে ক্ষেত্রে চাঁদা প্রদানের দশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তারা পেনশন সুবিধাভোগ করতে পারবেন। উল্লেখ্য, সর্বজনীন পেনশন সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বয়সসীমা ধরা হয়েছে পঁচাত্তর বছর। এর আগে পেনশনভোগী কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার নমিনিকে পেনশনভোগীর বয়স পঁচাত্তর না হওয়া পর্যন্ত পেনশন সুবিধা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। তবে পেনশনভোগী বেঁচে থাকলে আমৃত্যু পেনশন সুবিধা পেতে থাকবেন। কোনো ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় চাইলে জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ পঞ্চাশ ভাগ ঋণ নিতে পারবেন, তবে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুনাফাসহ পরিশোধ করতে হবে। আবার কোনো ব্যক্তি চাইলে মাসিক কিস্তির বদলে ত্রৈমাসিক অথবা বার্ষিক হিসাবেও চাঁদা পরিশোধ করতে পারবেন। নির্দিষ্ট সময়ে চাঁদা প্রদানে ব্যর্থ হলে পরবর্তী ত্রিশ দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় পরবর্তী প্রত্যেক দিনের জন্য এক শতাংশ হারে অতিরিক্ত অর্থ জরিমানা হিসাবে প্রদান করার বিধান রাখা হয়েছে। টানা তিন মাস চাঁদা প্রদানে ব্যর্থ হলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। তবে কোনো ব্যক্তির চাঁদা প্রদানে অসচ্ছলতার যথাযোগ্য প্রমাণ দিতে পারলে সর্বোচ্চ বারো মাস পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট সচল থাকবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এটিই সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট। এ ওয়েবসাইটকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন সুবিধা আমাদের দেশের মানুষের জন্য হয়ে উঠতে পারে নব আশার প্রদীপ। তবে এ প্রকল্পে প্রণীত রূপরেখার যথাযথ বাস্তবায়নের দিকে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাহলেই দারিদ্র্যের বাধা অতিক্রম করে গড়ে উঠবে সোনার বাংলাদেশ।

শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম