কৃত্রিম বন্যা রোধে নদী-নালা খনন করুন
জুবায়ের আহমেদ
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিতাস, শীতলক্ষ্যা, তিস্তা, বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী, গোমতীসহ ছোট বড় অসংখ্য নদীর পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর মিলিয়ে বছরজুড়ে পানির সঙ্গে আমাদের বসবাস। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে দেশব্যাপী গ্রামাঞ্চলের খাল-বিলসহ বাড়ির আনাচে-কানাচে পানি আসে। বর্তমানে সড়কপথের ব্যাপক উন্নতির ফলে বাঁধ তৈরি হওয়ায় পানিপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি মানেই হাঁটু জলের সঙ্গে মিতালি, এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাছাড়া বিভিন্নভাবে নদীগুলো প্রকৃত রূপ হারানোর ফলে নাব্যতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণ হলে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়। গত বছর সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পর চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভারি বর্ষণের ফলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নবনির্মিত রেলপথে প্রয়োজন অনুযায়ী কালভার্ট নির্মাণ না করায় পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। যাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এক সময় বাংলাদেশের মানুষের প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নৌপথ। বর্ষা মৌসুমে জমির ওপর দিয়েও নৌকা চলাচলের বিপরীতে বছরজুড়ে সবাই নদীপথে ট্রলার কিংবা লঞ্চে যাতায়াত করত। বিগত ১৫ বছরে সড়কপথের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। এ সময় গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হয়েছে লাখ লাখ পরিবার। সড়ক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হলেও পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি, নদীগুলো অবৈধ দখল, নদী ভরাট এবং দূষিত বর্জ্যরে কারণে বর্ষা মৌসুমে বেশি বৃষ্টি হলে পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, সৃষ্টি হয় বন্যা পরিস্থিতির। এর থেকে উত্তরণে নদীতে নাব্য বজায় রাখার জন্য নদী খনন করা এবং সড়কপথের সঙ্গে সংযুক্ত সব নদী ও খালের ওপর পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি করে পানিপ্রবাহ বজায় রাখা জরুরি। নাগরিক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলা, নদী, খাল ও শহরের ড্রেনগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলা। নাব্য সংকটের ফলে নদীমাতৃক দেশ তার স্বাভাবিক রূপ হারিয়ে ফেলছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪০ বছরে ১৮ হাজার কিলোমিটার নৌপথ হারিয়ে গেছে। দূষণ-দখল ছাড়াও নিয়মিত নদী খনন না করাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া নদ-নদী-খালের গভীরতা হ্রাসের ফলে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক ব্যাহত হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, কৃত্রিম দুর্যোগের অংশ।
বাংলাদেশ সরকার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল, হাওরাঞ্চল ও পার্বত্য এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে ১৭৮টি নদ-নদী খনন করে প্রবাহমান রাখার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। আশার মাঝেও হতাশার ব্যাপার হলো, ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ফলে প্রতি বছরই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, মানবিক বিপর্যয়ও ঘটছে। কাজেই সরকারের নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি সচেতন নাগরিক হিসাবে নদী, নালা ও খালে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।
শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া
