Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

বায়ুদূষণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসনে করণীয়

Icon

সুমাইয়া আকতার

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক দশকে বায়ুদূষণ মৃত্যুর জন্য একটি অতিরিক্ত ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবে অকালমৃত্যুর শতকরা ৮৯ ভাগ নিু ও মধ্যম আয়ের, বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে হয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে রাজধানী ঢাকা বায়ুদূষণে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বায়ু বা বাতাস, যা দূষিত হয়ে যায় খুব সহজেই এবং দূষিত বায়ু ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পুরো বিশ্বে ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই দূষণযুক্ত বায়ুতে শ্বাস নেয়। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ বায়ুদূষণ। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে ২০১৯ সালে প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ জন মারা গেছেন, যা ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় ৫০ হাজার বেশি। বিশ্বে ২০২২ সালে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর তালিকায় বাংলাদেশের নাম পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি অবনতি হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যেরও। বাড়ছে অবসাদ ও উদ্বেগ।

লক্ষ করা যাচ্ছে, রাজধানী ঢাকা ও তার বেশকিছু শিল্প-কলকারখানাভিত্তিক অঞ্চল এবং মানব সৃষ্ট কারণগুলো বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। ময়লা, ধুলোবালি, কালি বা ধোঁয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, নির্মাণাধীন ভবন বা স্থাপনা থেকে তৈরি হওয়া বায়ুদূষণ আমাদের জনজীবনকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাড়ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগ ও মানসিক সমস্যা। জ্বালানি থেকে অতিরিক্ত নির্গত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। এসব বিষাক্ত গ্যাসের কণা আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা স্তর ভেদ করে ঢুকে যায় খুব সহজেই। এসব কারণে হতে পারে মরণব্যাধি ক্যানসার, হাঁপানি এবং স্ট্রোক (মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ)। বিশেষত শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী বায়ুদূষণে বেশি আক্রান্ত হন। পাশাপাশি যানবাহন থেকে নির্গত বায়ুদূষক যেমন, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশে চলতে থাকা বায়ুদূষণ প্রভাব ফেলে মানসিকতায়। বায়ুমণ্ডলে এ বায়ুদূষণের ক্রমবর্ধমান বিষাক্ত গ্যাসের কারণে অবসাদ ও মানসিক উদ্বেগ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা। বাংলাদেশের মতো প্রগতিশীল রাষ্ট্রে বায়ুদূষণের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যেরও যে প্রভাব পড়ে সে বিষয়ে কারণগুলো খতিয়ে দেখা হয় না, নেওয়া হয় না সুষ্ঠু উদ্যোগ। ঢাকা শহরে প্রতিদিন কয়েক লাখ যানবাহন চলাচল করে। যেখানে সাধারণ ইঞ্জিনের সঙ্গে বিকট শব্দের পাশাপাশি নির্গত কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণকে বাড়িয়ে তুলছে। গবেষণায় দেখা যায়, সিএনজিচালিত যানে এ দূষণ কম হয়। তাই সিএনজিচালিত যানবাহন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কল-কারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে ধোঁয়া নির্গমন নল ও চিমনি থেকে বস্তুকণা পৃথক করার জন্য ছাকনি বা অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। বায়ুস্তর সংরক্ষণে প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ হ্রাস করে সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি করা যেতে পারে। বিভিন্ন পরিত্যক্ত বর্জ্য না পুড়িয়ে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা যায়। বাংলাদেশের মত কৃষিপ্রধান দেশে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প উপায়ে শস্যের রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি হাটবাজার, বসতবাড়ি থেকে পচনশীল দ্রব্য দ্রুত অপসারণ করতে হবে। শহরাঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে রাখা ডাস্টবিনের ময়লা দ্রুত শোধনাগারে পাঠাতে হবে। সর্বোপরি বৃক্ষরোপণ ব্যবস্থার গতানুগতিক প্রক্রিয়া প্রবহমান রাখতে হবে। কারণ উদ্ভিদ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং উদ্ভিদ অক্সিজেন ত্যাগ করে ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে এভাবে বায়ুদূষণ নিরসনে সুস্থ পরিবেশ মোতায়েনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা সহজ হয়ে উঠবে।

শিক্ষার্থী, বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম