Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

নতুন আতঙ্ক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স

Icon

মো. এমদাদুর রহমান উদয়

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই ছোট্ট জীবনে প্রায়শই নানা ব্যাধি আমাদের শরীরকে আক্রান্ত করে। এ পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি জীবদ্দশায় কখনো কোনো ধরনের অসুস্থতার শিকার হননি। সাধারণ সর্দি-জ্বর, মাথাব্যথা থেকে শুরু করে ছোটখাটো অণুজীবঘটিত সংক্রমণ নৈমিত্তিক বিষয়। অতীতে এসব অণুজীবঘটিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটত। তবে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে এর সঠিক ও যথাযথ ব্যবহারের কারণে বর্তমানে অণুজীবীয় সংক্রমণ এবং এর ফলে প্রাণহানি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব রোগের মূলোৎপাটন করাও সম্ভব হয়েছে।

অণুজীবীয় সংক্রমণ রোধে চিকিৎসাক্ষেত্রের সবচেয়ে কার্যকরী আবিষ্কার হলো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ। পৃথিবীতে বিদ্যমান নানা অণুজীবের মধ্যে মানবদেহে মূলত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি অধিক হারে সংক্রমণ ঘটতে দেখা যায়। তাই এসব সংক্রমণ প্রতিরোধী ওষুধ অর্থাৎ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের আবিষ্কারে প্রচুর গবেষণা ও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। মূলত অ্যান্টিবায়োটিক হলো ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি ও সংক্রমণ প্রতিরোধী ওষুধ, যা এর সংক্রমণ ক্ষমতা বিনষ্ট করে মানবদেহকে অসুস্থতার কবল থেকে রক্ষা করে। পৃথিবীতে প্রায় পনেরো হাজার প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন। এসব ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে প্রবেশের মাধ্যমে যে ক্ষতিসাধন করে তার কর্মক্ষমতা বিনষ্ট বা হ্রাস করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। তবে সব ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। বর্তমানে দেখা গেছে, কিছু অণুজীব ভয়ংকর রূপে মানবদেহের ক্ষতিসাধনে ক্রমাগত সক্ষমতা লাভ করছে। অণুজীবীয় সংক্রমণের এ নতুন পদ্ধতিই মূলত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নামে পরিচিত। সাধারণত মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের ব্যবহার, সঠিক উপায়ে রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থতা, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের সহজলভ্যতা ও অপরিকল্পিত ওষুধ সেবনে শারীরিক জটিলতা সম্পর্কে অজ্ঞানতা ও উদাসীনতার জন্যই নতুন নতুন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অণুজীব সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে একদিকে যেমন নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব ঘটছে, অন্যদিকে এসব রোগের সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও দুরূহ হয়ে পড়ছে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অণুজীবীয় সংক্রমণের প্রধান কারণ হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ও প্রয়োজনের অধিক শক্তিসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ সেবন করা। এতে অণুজীব ওই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের বিপরীতে ক্রমাগত সক্ষমতা অর্জন করতে থাকে যার সংক্রমণ ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে। আমরা প্রায়ই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই রোগের প্রকৃতি ও পরিস্থিতি না বুঝে ওষুধ সেবন করে থাকি। এছাড়াও ছোটখাটো ফার্মেসি থেকে অনভিজ্ঞ ওষুধ বিক্রয়কর্মীদের পরামর্শেও বিভিন্ন রোগের জন্য এ ধরনের ওষুধ সেবন করি। আবার কিছু ডাক্তার অধিক মুনাফার আশায় অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ সেবনে রোগীকে পরামর্শ দেন। এর ফলে আমরা একদিকে যেমন নতুন নতুন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছি, অপরদিকে চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হচ্ছে, যা আমাদের ব্যাপক প্রাণনাশের কারণ হচ্ছে। এতে অদূর ভবিষ্যতে মানুষ ও প্রাণিকুল অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অণুজীবীয় সংক্রমণের ভয়াবহতা এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি সব বয়সের মানুষের জন্যই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অন্যতম হুমকির কারণ হতে চলেছে। সুতরাং, বর্তমান সময়ের মানুষের অকালমৃত্যু রোধে এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অণুজীবীয় সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পারস্পরিক সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম