চিকিৎসা ব্যয় সাধারণের নাগালে রাখুন
জিবুন নাহার আশরাফ
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসকদের মহান পেশাজীবী হিসাবে বিবেচনা করে। তারা অবশ্যই লোভী ব্যবসায়ী নন; কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, কোনো কোনো চিকিৎসক লোভী ব্যবসায়ীর মতো আচরণ করেন। অর্থের লোভে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করেন। যখন একজন রোগী তার রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, তখন সাক্ষাৎ পেতে তাকে মাত্রাতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হয়। সরকারের শীর্ষস্থানীয় একজন আমলার যেখানে মাসে বেতন ৭৮ হাজার টাকা অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২,৬০০ টাকা; সেখানে একই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার সরকারি বেতনের বাইরে প্রতি সন্ধ্যায় অতিরিক্ত ১৬ হাজার টাকা আয় করেন। এ অর্থ আয় হচ্ছে ২০ জন রোগীর কাছ থেকে ৮০০ টাকা হারে আদায় করলেই। আর তা আদায় হচ্ছে প্রতি রোগীর সঙ্গে মাত্র ৫-১০ মিনিটের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। অনেক চিকিৎসক রয়েছেন, যারা প্রতি সন্ধ্যায় ২০ জনেরও বেশি রোগীকে সাক্ষাৎ দিয়ে থাকেন। জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিলে কোনো রোগীর কাছ থেকেই ২০০ টাকার বেশি আদায় করা উচিত নয়।
কোনো কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও আছে যে, প্রথম সাক্ষাতে তারা রোগীকে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন টেস্টের একটা লম্বা তালিকা ধরিয়ে দেন। কিন্তু কেন? উত্তর খুব সহজ-যখন একজন রোগী কোনো কেন্দ্রে টেস্ট করানোর জন্য উপস্থিত হয়, তারা রোগীর কাছ থেকে দ্বিগুণ চার্জ আদায় করে থাকে এবং যে চিকিৎসক টেস্টের পরামর্শ দিয়েছেন, তার নাম-ঠিকানা ইত্যাদি লিখে রাখে। এরপর আদায়কৃত চার্জের অর্ধেক চিকিৎসককে দেওয়া হয়। চিকিৎসকও আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করেন। এটা কি রোগীর সঙ্গে চিকিৎসক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের প্রতারণা নয়? যাদের জীবনের লক্ষ্য অনেক অর্থ উপার্জন করা, তাদের কোনোভাবেই চিকিৎসা পেশায় আসা উচিত নয়। তবে এটিও সত্যি, দেশে অসংখ্য চিকিৎসক আছেন, যারা এমন অবৈধ অর্থ গ্রহণ করেন না এবং যৌক্তিক আচরণ করে থাকেন।
এসব অনিয়ম বন্ধে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কাউন্সিলের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকার আগে চিকিৎসকদের ফি এবং টেস্টের ফি নির্ধারণ করে দিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন তা পুনঃনির্ধারণ প্রয়োজন। পাশাপাশি নির্ধারিত ফি ও চার্জের তথ্য প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নিয়ম না মানলে বিপুল অঙ্কের অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে বিনাশ্রম কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়া সহজ হবে।
নাসিমকুটির, দেওভোগ, মুন্সীগঞ্জ
