Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

দেশের মেরুদণ্ড দিনদিন ক্ষয়ে যাচ্ছে

Icon

মো. শেখ সাদী

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মূল্যস্ফীতির কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অর্থনৈতিক অবস্থা যত না বিপর্যস্ত, এর চেয়ে ঢের বেশি অনিশ্চয়তায় রয়েছে সেসব পরিবারে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। বিল গেটসের একটা বিখ্যাত উক্তি রয়েছে-‘আপনি যদি গরিব ঘরে জন্ম নেন এটা আপনার দোষ নয়; কিন্তু যদি আপনি গরিব থেকেই মারা যান তবে সেটা আপনার দোষ।’

দেশে বর্তমানের যে শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে তাতে আপনি যদি গরিব হয়ে মারা যান, তাতে সেই ব্যক্তিকে হীনম্মন্যতার সঙ্গে মরতে হবে না। কারণ স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের উচিত ছিল আপনার শিক্ষাকে পরিপূর্ণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যা ছিল কেবলই মরীচিকা। আপনি যদি রাষ্ট্রের দূরদর্শিতার অভাবে শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে আপনি আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা কীভাবে সমৃদ্ধ করবেন?

সরকারি দল কিংবা বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সন্তানদের একটি বড় অংশ হয়তোবা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে কিংবা স্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাস করছে। প্রজাতন্ত্রের আমলারাও তাদের থেকে পিছিয়ে নেই। ২৯ জন সচিবের ৪৩ সন্তান বিদেশে অধ্যয়নরত আছেন কিংবা স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, এটি বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের একটি আলোচিত খবর। বিদেশে শিক্ষাগ্রহণ কোনোভাবেই নিন্দিত বা অগ্রহণযোগ্য বলা যাবে না; কিন্তু যারা দেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছেন তাদের ক্রিয়াকলাপের ফলে যদি দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীর শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে আপনি সমালোচনা করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আজ সেশনজট, শিক্ষকদের রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হিসাবে লেজুরবৃত্তি করা, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, এমনকি উপাচার্য পদও দলীয়করণের ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। গবেষণা কিংবা বিভিন্ন সাইন্টিফিক জার্নালে প্রকাশনার পরিবর্তে বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও সরকারি দলের গুণ-কীর্তন করাই বর্তমানে একশ্রেণির উচ্চপদধারী শিক্ষকদের প্রধান পেশা ও নেশায় পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে সাদা দল, নীল দলের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আর বাজেটস্বল্পতা নিয়ে কথা আজ না হয় নাই বললাম।

যেখানে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সেখানকার শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞান দেশের জনগণের সেবায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখছে। সে উপকারের মাধ্যমে দেশের প্রতি তাদের যে ঋণ ছিল তা শোধ করছে। অথচ আমাদের ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে আমরা এখন পর্যন্ত এরকম কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি।

যারা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছেন তাদের প্রতি এদেশের আমজনতার একটি চাওয়া, আপনারা নিজেদের ক্ষমতার লোভকে সংযত করুন। এর চেয়ে বেশি কিছু আপনাদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা নেই। আমাদের তো আর সেই পরিমাণে অর্থবিত্ত নেই যে আপনাদের মতো নিজেদের সন্তানকে বিদেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিতে পারব। অথচ মানুষের একটি মৌলিক অধিকার হলো শিক্ষা। শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে এ মৌলিক অধিকারকে আপনারা খর্ব করতে পারেন না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, ট্রেন, প্লেন সবকিছুই অর্থহীন, যদি শিক্ষায় ঘাটতি থাকে। কারণ একটি জাতির উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি ত্বরান্বিত করতে হলে সেই দেশের শিক্ষাকে আগে সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

অন্যদিকে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের এক বিরাট অংশের মূল বাসনা ও কামনাই হচ্ছে উন্নত কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করে আধুনিক জীবনযাপন করা। এটা ব্যক্তিস্বার্থ এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের জীবন আরও সহজ করার জন্য, মৌলিক অধিকারগুলো সহজলভ্য করার জন্য করতেই পারেন; কিন্তু দেশের প্রতি আপনার যে একটি দায়িত্ব রয়েছে তা ভুলে গেলে চলবে না।

আসলে প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে বহিরাগতদের দ্বারা শাসনের ফলে আমাদের মেরুদণ্ড নুয়ে পড়েছে। ফলে নিজের দেশ নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি না। মানুষ যে স্বপ্ন দেখতে পারে আর সেই স্বপ্নই যে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে প্রতিকূল পরিবেশে, সেটাই হয়তো আমরা ভুলে গেছি। হয়তো পরিস্থিতি আজ আমাদের জন্য প্রতিকূল; কিন্তু কেউ যদি হাল না ধরে, তাহলে এ জাতি কীভাবে এই মহাসমুদ্র পাড়ি দেবে!

শিক্ষার্থী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম