শিক্ষার্থীবান্ধবশিক্ষক হোক
ইমন হাওলাদার
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রত্যেক ছেলেমেয়ের কাছে মা-বাবার পর সম্মানের স্থানে থাকেন শিক্ষক। একজন শিক্ষককে মা-বাবার সমতুল্য করে দেখা হয়। শিক্ষাকে জাতির মেরদণ্ড হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রত্যেক ছেলেমেয়ের প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় পরিবার থেকে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা নেওয়ার জন্য সবাইকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারস্থ হতে হয়, যেখানে সবার অভিভাবক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন সেই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিক্ষক-শিক্ষিকা। তারা আমাদের শেখান কীভাবে একজন প্রকৃত মানুষে পরিণত হওয়া যায়, আমাদের আচার-আচরণ কেমন হওয়া উচিত, বয়সভেদে কাকে কীভাবে সম্মান-স্নেহ করা উচিত। মূলত জাতি গড়ার কারিগর তারাই। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের প্রধান কাজ হলো শিক্ষার্থীদের মঙ্গলার্থে কাজ করা। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় দেখা যায় এর উলটো চিত্র। কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন। যেমন, হলের ডাইনিং বন্ধ রেখে করছেন ছেলেমেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। এভাবে সুযোগ পেলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের স্বার্থ হাসিলের কাজে। ওদিকে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন ঊর্ধ্বতনদের মন জয় করে কীভাবে বেতন-ভাতা বাড়ানো যায় তা নিয়ে। শিক্ষার্থী বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার যেন সময়ই নেই তাদের।
আগে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে কিংবা বিপদে শিক্ষক আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতেন। আজ তা কল্পনাই করা যায় না। একই প্রতিষ্ঠানে থাকলেও শিক্ষক তার ছাত্রকে চেনে না, ছাত্র তার শিক্ষককে চেনে না। শিক্ষক-ছাত্রের যে মধুর সম্পর্ক, তা যেন আজ নেই। স্কুল-কলেজ পর্যায়ের কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যেন খাতায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করেই দায় সারছে। শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কিছুই যেন করার নেই তাদের। যাদের জন্য এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তাদের যেন কোনো মূল্যই নেই কমিটি-প্রশাসনের কাছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন অবশ্যই শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত। কোন পদ্ধতি সংযোগ বা বিয়োজন করলে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করবে এবং ভালো ফলাফল লাভ করবে, এ বিষয়গুলো নির্ধারণ করার জন্য অবশ্যই তাদের কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক মানুষ চায় নতুনত্বের সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত করতে; কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলাকালে অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা একাডেমিক পাঠ্যপুস্তক থেকে লাইন বাই লাইন রিডিং পড়ে যান, যা খুবই বিরক্তিকর। আবার পরীক্ষার হলে চলে স্যার-ম্যামদের বাসাবাড়ির আলোচনা, যা হলে থাকা প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর জন্য একটা বিরক্তিকর ব্যাপার। আবারও বলছি, সুন্দর জাতি গঠনে শিক্ষকের বিকল্প নেই। এজন্য তাদের অবশ্যই আধুনিকমনা ও শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হবে।
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
