Logo
Logo
×

বাতায়ন

শারদবেলায় পরিক্রমা

Icon

অমিত রায় চৌধুরী

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শারদবেলায় পরিক্রমা

বাংলার আবহমান সংস্কৃতি দুর্গাপূজাকে আগলে রেখেছে পরম মমতায় অপত্য স্নেহে। পুজো থেকে উৎসব-রূপান্তরের এ প্রক্রিয়া বাঙালি মননের বিশিষ্টতার নিশানা, বয়ে চলা জীবনের এক অনিবার্য ব্যঞ্জনা।

সময়ের স্রোতে ভেসে শরৎ যখন প্রকৃতিতে তার অস্তিত্ব জানান দেয়, নিঃসীম দিগন্তে চলে নীলাকাশ ও শ্বেতশুভ্র মেঘের লুকোচুরি, রোদের তেজ খানিকটা প্রশমিত, কাশবনে পুলকিত শিহরণ, শিউলির চিরচেনা গন্ধে চারপাশ উদ্বেল, নদীতটে নিস্তব্ধতা ভেঙে ভেসে আসে অচেনা পাখির ডাক, জীবজগতে আনন্দের অমৃত ধারা- দেবীর আবাহন তখন আসন্ন হয়ে ওঠে আর এভাবেই ঘটে যায় শারদবেলার উদ্বোধন।

হিন্দুধর্মে দেবী দুর্গা পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদিকারণ। দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা ও চল বাঙালি অধ্যুষিত পৃথিবীর নানা প্রান্তে। দুর্গাপূজা আজ কোনো ধর্মীয় গণ্ডিতে বাধা নেই। একটা সর্বাত্মক, সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়ে সভ্যতার অংশে পরিণত হয়েছে।

শারদোৎসবের সূত্রপাত নিয়ে মতান্তর থাকলেও এর ব্যাপক বিস্তৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। আর্য সভ্যতায় দেবতা আর অনার্য সভ্যতায় দেবী আরাধনার প্রাধান্য ছিল- এমন একটা মতের গ্রাহ্যতা লক্ষ করা যায়। তবে আদ্যাশক্তি মহামায়া দেবী দুর্গা লিঙ্গ নিরপেক্ষ অখণ্ড মহাশক্তির প্রতীক হিসেবেই পূজিত হয়ে আসছেন জগতে ন্যায়, সত্য ও সুন্দর প্রতিষ্ঠার সংকল্পে।

মাতৃরূপা দুর্গা আরাধনার স্মারক চিহ্ন বয়ে চলেছে কালের অনন্ত প্রবাহ, মানব ইতিহাসের নানা বাঁকে, নানা রূপে। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা-বিশ্ব মানচিত্রের বিভিন্ন স্থানে শক্তি আরাধনার এমন নজির দেখা যায়। মাতৃশক্তির আরাধনাও বিশ্বসভ্যতার কালপঞ্জিতে যেমন ছত্রে-ছত্রে স্বীকৃত, ভারতীয় সভ্যতায়ও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।

এ জনপদেও শক্তিপুজোর ঐতিহ্য প্রাচীন। বাঙালি জাতির মধ্যে শক্তি উপাসনা ও তন্ত্রের প্রভাব প্রবল। আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস বলে, শক্তি উপাসনায় গার্হস্থ্য ধর্ম ও সংসার ধর্ম পালনের অনিবার্যতা মা দুর্গার পুজোয় ফুটে ওঠে। পত্রপুষ্প শোভিত প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের যে উৎসবময় সখ্য তারই সৃজনশীল প্রস্ফুটন বাঙালির এ সামাজিক উদ্যাপনের পরতে পরতে। প্রকৃতির কাছে, শক্তির কাছে সমর্পণেই বাঙালি তার মোক্ষ খুঁজে নেয়।

দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ করে বাঙালি জাতি যেভাবে উৎসবের অভিনবত্বে, কল্পনার নিপুণতায়, সৃষ্টির উল্লাসে উদ্ভাসিত হয়, উৎসবের এ ব্যাকুল চেহারা যেভাবে একটি বিপুল জনগোষ্ঠীর মানসলোক অবলীলায় দখল করে নেয়, ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি জাতিসত্তাকে অভিন্ন বন্ধনে একান্ত করে ফেলে- তা অবিশ্বাস্য।

ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক কিংবা ভৌগোলিক বিভিন্ন মানদণ্ডে সভ্যতার নানা প্রবাহে, জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সামাজিক উদ্যাপনের অনুশীলন চোখে পড়ে। তবে পয়লা বৈশাখ যেভাবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা অথবা দুর্গাপূজা সন্নিহিত বাংলার রাজধানী কলকাতাকে শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস-গন্ধে মাতোয়ারা করে, অনির্বচনীয় চেতনার রঙে মূর্ত করে তোলে, গোটা বিশ্ব তাতে থমকে যায় অপার বিস্ময়ে; অনাবিল মুগ্ধতায়।

কাকতালীয় হলেও সত্য, নববর্ষ বা দুর্গাপূজা দুটি উৎসবই আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হয়েছে বা হতে চলেছে। যেসব মানদণ্ড সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস বা মানুষের নিরবচ্ছিন্ন সম্পৃক্ততা ও আবেগকে বিশ্লেষণ করে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সভ্যতার উৎকর্ষ, বিবর্তন ও স্থায়িত্বের জন্য তা জরুরিও বটে।

তবে এ কারণেই আগ্রহের লক্ষ্যবস্তু হবে- এ উৎসবের মৌলিক উপকরণগুলো কালের প্রবাহে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, সৌন্দর্য অথবা ছন্দ বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে কি না। বিশ্লেষণের দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাঙালি সমাজের অভ্যন্তরে উৎসবের উপযোগী একটি প্রশস্ত পরিসর আছে; যা সামান্য ফুরসতেই নিজেকে আবিষ্কারের অপেক্ষায় নিয়তই উন্মুখ হয়ে থাকে।

ছেলেবেলাই হয়তো পার্থিব সুখ পরিমাপের উপযুক্ত পারদকাঠি। আর চোখ বুজে যদি শৈশবের নিষ্পাপ দিনগুলোকে অনুভব করি, পুজোর মুহূর্তগুলোই বারবার ফিরে আসে, স্মৃতির ক্যানভাসে ভিড় করে ঝাঁক ঝাঁক স্মৃতি, অদ্ভুত মুগ্ধতায় ভরিয়ে তোলে মনপ্রাণ, সেই জাদুতুলির ছোঁয়ায় সৃষ্টি হয় এক অনবদ্য চিত্রকল্প।

মহালয়ার পুণ্যপ্রাতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণের আবেগমথিত কণ্ঠে সংস্কৃত শ্লোক, শঙ্খধ্বনি, ভোরের শিশির পায়ে মাড়িয়ে আবছা আলো আর শিউলির গন্ধ গায়ে মেখে ফুল তোলা, মালাগাঁথার টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতাগুলো স্মৃতির স্মরণিতে আজও জ্বলজ্বল করে ওঠে।

ছকে বাঁধা পড়াশোনার বেষ্টনী থেকে মুক্তিলাভের সুখস্মৃতি, দারুণ জমে ওঠা আড্ডায় মেতে ওঠা কিংবা অনেক রাত অবধি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর অবাধ স্বাধীনতা অথবা দূর থেকে ভেসে আসা ঢাকের বাজনা বা মান্নাদের সম্মোহনী কণ্ঠে ধ্রুপদী বাংলা গান আর সেসব ছন্দিত ক্ষণগুলোকে প্রলম্বিত করার আকুল প্রার্থনার কথা কি সহজে ভোলা যায়?

সময়, প্রেক্ষিত ও মূল্যবোধ বিবর্তনের অমোঘ প্রাকৃতিক বিধানকে আমলে নিয়েও বলা যায়, ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ কাঠামোতে নীরবে কিছু চরিত্রগত বদল ঘটে গেছে। আজকের বাস্তবতায় সেসব অদ্ভুত সুন্দর দিনগুলোকে কিছুতেই মেলানো যায় না; বরং অতীতের তুলনায় আজকের দিনগুলোকে কিছুটা মলিন, প্রাণহীন মনে হয়।

তর্কপ্রিয় বাঙালি হয়তো যুক্তি দেবেন- বয়স আমাদের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে, আবেগ প্রশমিত হয়, অনুভবের গড়ন বদলে যায়। শ্লেষের যুক্তিনিপুণতা যাই থাক- এ কথা সত্য, আজকের শিশুর জন্য নির্মল আনন্দের পরিসর আজ সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হয়ে পড়ছে। ফুল তোলা, মালাগাঁথার পর্বে সে তাড়না আজ নেই।

প্যান্ডেল সাজানো বা সাজসজ্জা- এসবেও দায় কম। দলবেঁধে চাঁদা তোলা, ভোগ রাঁধা, প্রসাদ বিতরণ- এসবই আজ বাণিজ্য-প্রযুক্তির দখলে অর্থাৎ আধুনিক ব্যবস্থাপনা কাঠামোর বিস্তার সাধারণের অংশগ্রহণ, অন্তর্ভুক্তি কিংবা সর্বজনীনতার দর্শনকে কোথাও যেন ভিন্নভাবে পুনর্নির্মাণ করে ফেলছে।

শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীর প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ হয়তো সীমিত হয়ে পড়ছে। আর পূজামণ্ডপগুলো যখন বাড়তি নিরাপত্তার মোড়কে ঢাকা পড়ে যায়, আবালবৃদ্ধবনিতার স্বতঃস্ফূর্ততা সেখানে ক্ষণিকের জন্য হলেও হয়তো থমকে দাঁড়ায়।

যৌথ পরিবারের সংস্কৃতি আমাদের সমাজে আজ ভাঙনের মুখে। গ্রাম-বাংলার দুর্গাপূজা বা যে কোনো সামাজিক উৎসবে যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস এই সেদিনও লক্ষ করা গেছে, তার পেছনে যে প্রণোদায়ী শক্তি কাজ করেছিল, তা আমাদের যৌথ পরিবার কাঠামো।

সামর্থ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমাজের অভ্যন্তরে যেসব পরিবর্তন ঘটে চলেছে সঙ্গোপনে, তার একটি হল বড় পরিবার ভেঙে যাওয়া; স্বার্থপরতার বাড়বাড়ন্ত, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব।

সমাজ মননের কোণে কোণে বাসা বাঁধা এ এক অসুখ; যা নানা সামাজিক ব্যাধির আঁতুড়ঘর। বিযুক্ত পরিবারগুলোর এমন মহোৎসবে নিষ্প্রাণ, নিরালম্ব অংশগ্রহণই পক্ষান্তরে মনে করিয়ে দেয় আমাদের যৌথ পরিবারের অন্তর্গত শক্তিময়তা, প্রাণবন্ততা।

নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বিবর্তনের পথ ধরে রাজসিক পূজাগুলো বারোয়ারি বা সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, বিষয় ভাবনানির্ভর প্রযুক্তির আশ্রয়ে পূজামণ্ডপগুলো দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে, সংখ্যা-জৌলুস কিংবা আধুনিকতার নিরিখে মণ্ডপগুলো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, জনপ্লাবনে ভেসে যাচ্ছে মণ্ডপের আঙ্গিনা- এ কথাও সত্য; কিন্তু নস্টালজিয়ায় ডুব দেয়া আড্ডাপ্রিয় বাঙালির তৃষ্ণার্ত মনের চাহিদা কি পূরণ হয় কৃত্রিমতা ও জৌলুসে ঝলসানো এমন অপরিচিত আঙিনায়?

দূর প্রবাস থেকে প্রিয়জনের কাছে আসার যে অন্তহীন আকুতি বাঙালির প্রাণে শেকড় গেড়েছে তা বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যময়। শহর ছেড়ে যারা দূরে আছে; পাড়ার টানে, বন্ধুর টানে, বাড়ির মানুষের সঙ্গ পাওয়ার লোভে ফিরে ফিরে আসা মানুষ কিন্তু পুজো প্যান্ডেলে আড্ডার সেই আটপৌরে জায়গাটা বেদখল দেখে হতাশই হয়, সভ্যতার পীড়নে বিদীর্ণ ক্লান্তমন অতৃপ্তই থেকে যায়।

বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা শিশুবান্ধব নয়। বই-খাতার ভারে শিশুরা আজ ন্যুব্জ। এক কথায় পড়ার চাপে এরা চিড়েচ্যাপ্টা। তারা দিন গোনে, কখন আসবে ষষ্ঠী। মহালয়া থেকে কাউন্টডাউন শুরু। যষ্ঠীতে মুক্তি।

এমন বাঁধভাঙা আনন্দ শিশুর স্বাস্থ্য, মন ও বিকাশের জন্য খুব জরুরি। প্রবীণ বা প্রবাসীদের জন্য পূজামণ্ডপ একটা দুর্লভ ক্যানভাস তৈরি করে দেয়; জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান, রাজনীতি, ইতিহাস- সবকিছুই অবলীলায় এসে যায় এ ঘরোয়া পরিসরে।

পূজার জৌলুস আজ আরও যে কারণে খানিকটা হলেও ম্রিয়মাণ তা হল- বিশাল তারুণ্যের সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিসীম আসক্তি। দুর্গাপূজার মতো বৃহৎ সাংস্কৃতিক উদ্যাপন কটা দিনের জন্য হলেও তাদের নিরঙ্কুশ মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছে না।

শিশু থেকে প্রৌঢ়- সবাই সমাজ থেকে তাদের বিছিন্নতাকে নিশ্চিত করে চলেছে নিজের মুঠোতে নিজেকে বন্দি করে, সামাজিক মাধ্যমে জীবনের সব আনন্দ খুঁজে নিয়ে। এরা এক নজিরবিহীন মানসিক অবসেশনে আক্রান্ত। সমাজের মূলস্রোত থেকে যেন এরা বিযুক্ত। বিচ্ছিন্নতা ও এককেন্দ্রিকতা তাদের ক্রমশ গ্রাস করে চলেছে।

প্রতিমা দর্শন থেকে মণ্ডপ পরিক্রমা- সবকিছুই এক লহমায় হাজির হয়ে যাচ্ছে মুঠোফোনের স্ক্রিনে। খোশগল্প থেকে গম্ভীর রাজনীতির আলাপ কিংবা সাহিত্যচর্চা সবকিছুই সামাজিক মাধ্যমের খুদে ফোনে বন্দি। নার্সিসিজম বা আত্মমগ্নতা মানুষের মনোজগতে খেলা করে।

সভ্যতার অনুশীলন অনেক নেতিবাচক প্রবৃত্তিকেও হয়তো নিবৃত্ত করেছে মানুষের সহজাত মেধা প্রয়োগে বা প্রয়োজনের তাগিদে। তবে ফেসবুকে অতি সক্রিয়তা বা ইন্টারনেট আসক্তি শুধু উৎসবের পরিসর নয়; দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা এমনকি যে কোনো সৃজনশীল বিকাশ অথবা বিনোদনের ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে চলেছে, এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই।

এ ধরনের উৎসবের সামাজিক অভিঘাত গভীর প্রসারী। আধ্যাত্মিক আবেদন ছাপিয়ে উৎসবের যে চিরকালীন উপশমকারী প্রভাব তা মানুষকে উদার করে, বিশালের সঙ্গে সংযোগে ব্যক্তি অখণ্ড সত্তায় উত্তীর্ণ হয়। মানুষে মানুষে সম্পর্ক দৃঢ় হয়, দূরত্ব কমে আসে, মনের মালিন্য দূর হয়।

সাংস্কৃতিক মনস্তত্ত্ব বলে, নিজের জন্য সময় বের করে মানুষে মানুষে সংযুক্ত হওয়ার এই যে অবকাশ তা অসাম্প্রদায়িক, অসহিষ্ণু, বহুত্ত্ববাদী সমাজের জন্য হিতকর। বৃহতের সংস্পর্শে মানুষ মহতের স্বাদ পায়; মানুষের মনে যন্ত্র সভ্যতা যে ক্ষুদ্রতা, মলিনতা জমিয়ে ফেলে তা উৎসবের বিশালতায়, সংস্কৃতির বহুত্বে, ঔদার্যে ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যায়।

প্রযুক্তির বিস্ফোরণ সেই চিরায়ত জায়গাগুলোকে যেন উজাড় করে না ফেলে, সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন; যাতে বাংলার শিল্প-মানচিত্রে লোকায়ত শিল্পের সগৌরব স্থান কোনোভাবেই কলুষিত না হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে দুনিয়াজুড়ে উগ্র জাতীয়তা, অসহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি শক্তি সঞ্চয় করছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান তো বটেই, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশেও এমন সামাজিক বিভক্তির লক্ষণ ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠছে। এর ফলে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা এসব দেশে দ্রুতহারে নেমে আসছে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত, চীন, মিয়ানমার; এমনকি ইউরোপ, আমেরিকায় পর্যন্ত জাতীয়তা ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে মেরুকরণের প্রবণতা দৃশ্যমান। এটি গোটা মানবসভ্যতার টেকসই উন্নয়ন ও অস্তিত্বের জন্য হুমকি।

সভ্যতার এ সংকট মুহূর্তে শারদোৎসবের মতো অসাম্প্রদায়িক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সর্বজনীন উৎসবের সামাজিক বার্তা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সামাজিক সম্প্রীতির জন্য এমন প্রাণবন্ত উৎসব খুবই সহায়ক। সব ধর্মের মানুষ এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, দুর্গাপূজার বৈভব বা উৎকর্ষ নিয়ে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আমাদের সমাজ বাস্তবতায় সচরাচর চোখে পড়ে না। মন্দির ভাঙা বা প্যান্ডেল পোড়ানোর ঘটনা এ দেশে একদম ঘটেনি তা নয়- তবে সর্বস্তরের মানুষের গভীর মননে সৌহার্দ্য, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের কোনো ঘাটতি আছে বলে মনে হয় না।

এটাই বাঙালি সমাজের অন্তর্গত শক্তি ও সৌন্দর্যের প্রমাণ। সমাজের গভীরে যদি কোনো অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার চোরাস্রোত তৈরির আশঙ্কা থাকে; বিশ্বাস করি, দুর্গাপূজার মতো জীবনের উদ্যাপন এমন মন্দকে ছাপিয়ে শুভের জয়যাত্রা নিশ্চিত করবে।

অমিত রায় চৌধুরী : সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ

principalffmmc@gmail.com

 

অমিত রায় চৌধুরী শারদীয় দুর্গোৎসব

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম