Logo
Logo
×

বাতায়ন

সাধারণ মানুষের প্রতি ছিল তার অকৃত্রিম ভালোবাসা

Icon

আজহারুল হক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাধারণ মানুষের প্রতি ছিল তার অকৃত্রিম ভালোবাসা

যমুনা গ্রুপের বরেণ্য চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম।

কিরে কেমন আছস, এলাকার খবর কী, সবাই ভালো আছে তো? সহজ সাবলীলভাবে এমন করেই কথা বলতেন। জন্মস্থানের প্রতি ভালোবাসার টান থেকেই একজন মানুষ শত ব্যস্ততা ও কষ্ট নিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নিতেন। তিনি আর কেউ নন; একজন অকুতোভয় কর্মবীর, উদ্যমী, সত্যানুসন্ধানী সদ্যপ্রয়াত নুরুল ইসলাম। যাকে এলাকার মানুষ বাবুল নামেই ডাকতেন বা চিনতেন। যার জন্ম রাজধানীর পাশেই আড়িয়ল বিলের সীমানা ঘিরে গড়ে ওঠা নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা কামারখোলা গ্রামে।

এমন একজন ক্ষণজন্মার পৃথিবীতে আগমনের কারণে এখন কামারখোলা অনেকটাই আলোকিত, আলোচিত ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের পাথেয়। তিনি যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা নবাবগঞ্জের বাবুল ভাই। এলাকার মানুষ বলে থাকে, বাবুল ভাইয়ের নবাবগঞ্জ। এত অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েও তিনি কখনও পোশাক-পরিচ্ছদ বা চলনে-বলনে দাম্ভিকতা দেখাননি। ছিলেন অতি সাধারণ।

২৫ বছরের টববগে যুবক নুরুল ইসলাম দেশমাতৃকার টানে ১৯৭১ সালে জীবনবাজি রেখে অংশ নেন স্বাধীনতাযুদ্ধে; কিন্তু তিনি কখনও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো বিনিময় চাননি। সব সময়ই আপসহীন লড়াইয়ের অগ্র সেনানীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নতুন নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতি মনোযোগী ছিলেন। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই বীরত্বের পরিচয় দিয়ে জুলুম-নির্যাতন, অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাহসী সংগ্রামে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন। কখনোই কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার বা আত্মসমর্পণ করেননি এ বীরযোদ্ধা।

একজন নিঃস্বার্থ মানুষ হিসেবে নিজ এলাকা দোহার-নবাবগঞ্জের সবাইকে কাছে টানতেন। সংকটময় সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। জাত, ধর্ম, উঁচু-নীচুকে প্রাধান্য না দিয়ে গ্রামের মানুষের যে কোনো আবদার ও চাওয়াকে পূরণ করতে কখনোই পিছপা হননি এ মহান মানুষটি। এলাকার স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির, গির্জা, ঈদগাহ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণের যেন জুড়ি ছিল না। যখন যে ডেকেছেন তার সরব উপস্থিতি এলাকার সবাইকে আনন্দিত ও মুগ্ধ করত। নীতিতে অবিচল, সৃষ্টির প্রয়াসে তিনি ছিলেন অনন্য শিক্ষক। তার এসব কাজে যিনি প্রয়াস জুগিয়েছেন তিনি আমাদের অতি আপনজন দোহার-নবাবগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষের ভালোবাসার ও আস্থার প্রতীক সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম এমপি। জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ এ মহীয়সীর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। মহান সৃষ্টিকর্তা যেন তার ক্ষমতাবলে তার পরিবারকে আগলে রাখেন-এ প্রত্যাশা থাকবে অবিরাম।

‘কিরে কেমন আছস, এলাকার খবর কী, সবাই ভালো আছে তো? ঠিক এ প্রশ্ন হয়তো আমাকে আর কেউ কখনও করবে না। ১৩ জুলাই বিকাল ৩টা থেকে ক্ষণে ক্ষণেই আমার মস্তিষ্কে এ শব্দগুলো উচ্চারিত হচ্ছে। অস্বস্তি, আবেগ আর অনুভূতির অশ্রু যেন সংবরণ করতে পারছি না। চোখে-মুখে শাসনের কঠোরতা থাকলেও তার ভেতরটা এতই সাদামাটা ছিল যা কাউকে বিশ্বাস করানো অনেকটাই কষ্টের। আমি তার কোম্পানির একজন নগণ্য কর্মচারী মাত্র। বাবুল স্যার ছিলেন খুবই উদার ও আলাপপ্রিয়। আমি তাকে স্যার বলেই সম্বোধন করতাম। তার স্নেহ, ভালোবাসা, আন্তরিকতা আমাকে ঋণী করে রেখেছে। আজ স্যার নেই, তার কথা আজীবন মনের ভেতর গল্প আকারে গচ্ছিত থাকবে। স্যার, আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। ওপারে ভালো থাকবেন। নবাবগঞ্জের মানুষের খবর নেয়ার মতো ব্যক্তিটি আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। স্যারের সঙ্গে সর্বশেষ ১৯ জুন শুক্রবার ফোনে কথা হয়। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ছিলেন। ফোন ধরেই তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, কিরে কেমন আছস, এলাকার খবর কী?। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুশয্যায় হাসপাতালে থেকেই বলেন, তুই ভালো থাকিস, সাবধান থাকিস, আমার জন্য দোয়া করিস। তখনও ভাবতে পারিনি স্যার আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। আমাদের রেখে যাবেন অভিভাবকশূন্য করে। বটবৃক্ষের মতো ছায়ায় ঘিরে রাখা এ মানুষটি নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান যমুনা গ্রুপে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, যমুনা টিভি ও যুগান্তরের সংবাদকর্মীদের জন্য ছিলেন এক বিশাল বটবৃক্ষ। নিজের সন্তানের মতোই সবাইকে আগলে রেখেছেন।

দোহার-নবাবগঞ্জ তথা দেশের একজন সিংহপুরুষ তিনি। যার মেধা, মনন, সততা ও সাহস আমাদের প্রেরণাশক্তি। এ ভালো মানুষটির জন্য শত্রু, বন্ধু-আপনজন এমন কেউ নেই যে নীরবে বা প্রকাশ্যে ব্যথিত হয়নি। চোখের জলে সবাইকে ভাসিয়ে এমন করে স্যারের চিরবিদায় মেনে নিতে কষ্ট হয়। স্রষ্টা তাকে ঐশ্বরিক শান্তি প্রদান করুক-এ প্রত্যাশাই কাম্য। বিদায় স্যার, ক্ষমা করবেন।

আজহারুল হক : সাংবাদিক

 

যমুনা গ্রুপ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম