করোনা নিয়ে আশাবাদী হওয়ার প্রধান ছয় কারণ
যোসেফ জি অ্যালেন
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনাভাইরাস ঝড়ের পরিসমাপ্তি (এবং সব খারাপ সংবাদেরও) টানার ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য আমাদের অবশ্যই ইতিবাচক অগ্রগতির পথেও থাকতে হবে। এখানে ছয়টি ইতিবাচক অগ্রগতির কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে, যেগুলো এ সংকটের সময়ে আশার আলো দেখাচ্ছে :
এক. প্রতিষেধক চিকিৎসা (আরও বলা যায় এটি সেই পদ্ধতি যা আমরা সবচেয়ে অসুস্থ রোগীর জন্য ব্যবহার করি) এসে যাবে ভ্যাকসিন বা টিকার আগে। যখন কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তার শরীরের ইমিউন সিস্টেম একটি প্রতিরোধী ব্যবস্থা চালু করে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে অ্যান্টিবডি উৎপাদনও। এই অ্যান্টিবডি রক্তে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রামক আক্রমণকারীকে শনাক্ত করার কাজে সহায়তা করার জন্য।
রক্তে ছড়িয়ে পড়া এসব অ্যান্টিবডি ভবিষ্যৎ সংক্রমণের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে (সেটা কত সময়ের জন্য তা আমরা এখনও জানি না)। বিজ্ঞানীরা এখন এসব অ্যান্টিবডির ক্লোন তৈরি করেছেন, যাকে আমরা বলতে পারি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি এবং বিজ্ঞানীরা দেখাচ্ছেন এসব অ্যান্টিবডি প্রতিষেধক ও সংক্রমণ প্রতিরোধ- উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকর হতে পারে। এসব অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসের প্রোটিনের অগ্রভাগে আক্রমণ করার মাধ্যমে কাজ করে, প্রোটিনের অগ্রভাগের মাধ্যমে এ ভাইরাস আমাদের কোষের মধ্যে প্রবেশ করে। সুতরাং এটির প্রবেশ বন্ধ করে দিন, তাহলে ভাইরাসটি শরীরের ভেতরে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারবে না।
দুই. দ্রুত ও স্বল্প খরচের স্যালিভা টেস্টও আসছে, যেমনটি আমার সহকর্মী মাইকেল মিনা ও লরেন্স কোটলিকফ সম্প্রতি উদ্ভাবন করেছেন; তারা হলেন গেম চেঞ্জার। কেন? এগুলো হচ্ছে ঘরে বসে প্রেগনেন্সি পরীক্ষার মতো। কিন্তু কোভিড-১৯-এর বেলায় নোভেল করোনাভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট রোগের জন্য এটি হতে যাচ্ছে ঘরে বসে পরীক্ষা।
কল্পনা করুন- একটি পরীক্ষা ঘরে বসে প্রতিদিন আপনি করতে পারছেন, যা আপনাকে ফল দিচ্ছে একটি বোতলে থুতু ফেলার কয়েক মিনিটের মধ্যে! এমন একটি টেস্ট ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ক্ষীণ গতির করে দিতে আমাদের সক্ষমতাকে পরিবর্তন করতেই পারে, যেখানে দ্রুত ভাইরাসের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারাই সবকিছু। এটি ভোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধি এবং চলমান অর্থনৈতিক সংকট কমিয়ে দিতেও ভূমিকা রাখতে পারে। স্কুলে, কাজে বা উৎপাদনের বৃহৎ ক্ষেত্রে যেতে চাচ্ছেন? দেখান যে আপনার দ্রুত পরীক্ষার ফল নেগেটিভ। এসব টেস্ট শতভাগ সঠিক নয়। কিন্তু এর তেমন দরকারও নেই। এখানে সঠিকতা থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল দ্রুততা ও টেস্টের মাত্রা।
তিন. এ বিতর্ক চূড়ান্তভাবে শেষ হয়েছে যে, মাস্ক কাজ করে। এজন্য তিন মাস সময় লেগেছে। কিন্তু বিস্তৃত পরিসরে মাস্ক পরিধানের বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। যেটা একসময় বেমানান ও অস্বাভাবিক ছিল (অন্তত যুক্তরাষ্ট্রে), এখন সেটা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে। অনেক রাজ্য ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাস্ককে বাধ্যতামূলক করছে। সর্বোপরি, যেটা একসময় রাজনৈতিক ছিল, তা দ্রুততার সঙ্গে কমনসেন্স তৈরি করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, মানুষ মাস্ক পরছে কেবল তাকে খারাপ দেখানোর জন্য। এখন আমরা দেখছি, রেড বা করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রাজ্যগুলোর নেতারা মাস্ক পরিধান করার জন্য তাড়া দিচ্ছেন (সব মাস্ক সমান মানসম্পন্নভাবে তৈরি নয়, তবে সুখবর হল কীভাবে একটি মাস্ক ভালোভাবে তৈরি হয় সেই নির্দেশনা দেয়া আছে)।
চার. শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য তৈরি হয়েছে যে, বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে। আমার কর্মক্ষেত্রের বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে কয়েক মাস ধরে সতর্ক করে আসছিলেন (আমি যুক্তি দিয়েছি যে, বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোটা অনেক বেশি বিস্তৃত অনুষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত), যদিও সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে স্বীকৃতি দিতে ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ সপ্তাহে জোয়ার ঘুরে গেছে যখন ২৩৯ জন বিজ্ঞানী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে পাঠানো হয়েছে বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে নেয়ার জন্য তাড়া দিয়ে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঠিক তা-ই করেছে।
এর অর্থ হল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও বার্তা আসছে, যেখানে মানুষকে সুপারিশ করা হবে তাদের সুরক্ষা কিটে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য আরও পদক্ষেপ নিতে। এর মধ্যে আছে স্বাস্থ্যকর নির্মাণ কৌশল যেমন- উচ্চপর্যায়ের ভেন্টিলেশন আর ভালো ফিল্টারিং পদ্ধতি এবং নাড়াচাড়া করা যায় এমন বাতাস বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রপাতি।
পাঁচ. বিজ্ঞানের কিছু শাখা দেখাচ্ছে, আগে উন্মোচিত হওয়া সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার করোনাভাইরাসগুলো কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সুরক্ষামূলক ভূমিকা রাখতে পারে। এটি একটি বড় দাবি এবং আমার উচিত সতর্ক করে দেয়া যে, এটি এখনও পুরোপুরি সমাধান হওয়া বিষয় নয়। কিন্তু কিছু গবেষণা দেখাচ্ছে, ২০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ যারা কখনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি তাদের মধ্যে কিছু ইমিউন সেল রয়েছে, যা টি-সেল নামে পরিচিত। তাদের শরীরে এটি করোনাভাইরাসের মতো প্রতিক্রিয়া করে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি আগের সাধারণ ও ঠাণ্ডা করোনাভাইরাসের কারণে হচ্ছে। আমরা এখনও জানি না কেন কিছু মানুষ অন্যদের চেয়ে ভালো ফিল করে অথবা কেন কিছু মানুষ ভাইরাসটা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়, যেখানে অন্যকিছু মানুষ এটি একেবারেই ছড়ায় না। উল্লিখিত গবেষণার তথ্য এসব প্রশ্নের কিছু উত্তর নিয়ে আসতে পারে।
ছয়. ভ্যাকসিনের ট্রায়াল মনে হচ্ছে কাজ করছে এবং ওষুধ উৎপাদনকারীরা এরই মধ্যে বলেছেন, তারা সম্ভবত অক্টোবরের মধ্যে বাজারে ডোজ ছাড়তে পারবেন। মনে রাখবেন, এটি কোনো প্রকৃতির দিয়ে রাখা বিষয় নয় যে টিকাগুলো কাজ করবে। সুতরাং, বাস্তবতা হচ্ছে- প্রাথমিক পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল ইতিবাচক দেখাচ্ছে, যা উৎসাহব্যঞ্জক।
মনে করিয়ে দেয়ার মতো আরও একটি বিষয় হল- এটি দ্রুত আশার আলো দেখাচ্ছে। যদি আমরা ১২ মাসের মধ্যে একটি ভ্যাকসিন পাই তবে সেটি হবে ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত তৈরি করা ভ্যাকসিন, যা আগে করতে লাগত কয়েক বছর। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আছে- আমার সহকর্মী জুলিয়েট কাইয়েম উল্লেখ করতে চান যে, টিকা মানুষকে রক্ষা করে না, টিকা দেয়া হলেই কেবল সেটি করে থাকে। যখন আমাদের হাতে একটি টিকা থাকবে, তখন এর উৎপাদন ও সরবরাহের কঠিন কাজটি সামনে আসবে। কাজেই যখন টিকার নিদর্শন ইতিবাচক এবং আমাদের হাতে তথ্য আছে যে কয়েক মাসের মধ্যে সেগুলো কাজ করবে, তারপরও তা মানুষের হাতে প্রকৃতপক্ষে পৌঁছাতে আরও কয়েক মাস লেগে যাবে।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রায় সব বিজ্ঞানী একটি অভিন্ন সমস্যার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। এটি বাস্তব ফল দেয়া শুরু করেছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে অনুবাদ : সাইফুল ইসলাম
যোসেফ জি অ্যালেন : এক্সপোজার অ্যাসেসমেন্ট সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএইচ চান পাবলিক হেলথ স্কুলের হেলদি বিল্ডিং প্রোগ্রামের পরিচালক
