Logo
Logo
×

বাতায়ন

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগ

Icon

মাহবুবুর রহমান সুজন

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগ

স্কুলজীবন থেকেই রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার স্বভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও স্বদেশপ্রেম। ছাত্রজীবন থেকেই দেশের জন্য কাজ করা তার স্বভাবের অংশ হয়ে ওঠে। ছাত্রজীবনে তার কর্মকাণ্ড, বিচক্ষণতা ও ভাষণ শুনে সবাই আকৃষ্ট হতো। ১৯৩৮ সালে গোপালগঞ্জের বিরাট এক জনসভায় তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নজর কাড়েন শেখ মুজিবুর রহমান। তখন থেকে ছাত্র অবস্থায় মূলত রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় তার।

১৯৪১ সালে বঙ্গবন্ধু সদ্য এসএসসি পাশ করে সক্রিয় হলেন রাজনীতিতে। পাকিস্তান আনতেই হবে এ চিন্তা থেকে তিনি বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ শুরু করেছিলেন। মাদারীপুরে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেছিলেন। ইসলামিয়া কলেজে পড়াকালীন বঙ্গবন্ধু ছাত্রনেতা হিসাবে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল ইসলামিয়া কলেজ। বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে সভা ডাকলেন ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি, ফজলুল হক মুসলিম অ্যাসেম্বলি হলে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হলো ছাত্র সংগঠন গঠন করার ব্যাপারে। বঙ্গবন্ধু যার নামকরণ করেন ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। ছাত্রলীগ গঠন করার পর সারা দেশে ছাত্রদের মধ্যে বিরাট সাড়া পড়ে, এমনকি এক মাসের মধ্যে জেলা কমিটিও গঠিত হয়েছিল। নাঈমউদ্দিন আহমেদকে যদিও বা কনভেনর করা হয়েছিল, প্রায় সব কাজই করতেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি শোষকদের অত্যাচার, অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সমালোচনা করা হত। পরে ছাত্রলীগকে অসাম্প্রদায়িক করার লক্ষ্যে এর নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয় এবং ১৯৫৩ সালের কাউন্সিল অধিবেশনে তা কার্যকর হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে ছাত্রলীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। সভাপতির বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আজ থেকে আমি আর আপনাদের প্রতিষ্ঠানের সভ্য থাকব না, ছাত্র প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকার আমার কোনো অধিকার নেই, আমি আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি কারণ আমি আর ছাত্র নই। তবে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ যে নেতৃত্ব দিয়েছে পূর্ব বাংলার লোক কোনোদিন তা ভুলতে পারবে না। বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার আপনারা করেছেন এদেশের মানুষ চির জীবন তা ভুলতে পারবে না। আপনারাই এদেশে বিরোধীদল সৃষ্টি করেছেন। শক্তিশালী বিরোধীদল না থাকলে গণতন্ত্র চলতে পারে না’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী)।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণে স্পষ্ট যে, ছাত্রত্ব না থাকলে ছাত্র রাজনীতি করার অধিকার থাকে না। যে কারণ নিজের প্রতিষ্ঠিত ছাত্র সংগঠন থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এ থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মীদের শিক্ষা নিতে হবে।

ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে তার পিতা একদিন বলেছিলেন, বাবা রাজনীতি করো আপত্তি করব না। পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ এ তো সুখের কথা। তবে পড়ালেখা করতে ভুলিও না। পড়ালেখা না শিখলে মানুষ হতে পারবে না। আর একটা কথা মনে রেখ- ঝরহপবৎরঃু ড়ভ চঁৎঢ়ড়ংব ধহফ ঐড়হবংঃু ড়ভ চঁৎঢ়ড়ংব থাকলে জীবনে পরাজিত হবে না। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, পিতার এ কথা তিনি জীবনে ভুলেননি। বঙ্গবন্ধু ছাত্ররাজনীতি করার পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। এসব তথ্য থেকেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মীদের শিক্ষা নিতে হবে। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন শেখ মুজিবুর রহমান।

ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস; সংগ্রামের ইতিহাস; গৌরবময়, ঐতিহ্য ও সাফল্যের ইতিহাস। ছাত্ররাজনীতিই রাজনীতিতে পদার্পণের প্রথম সিঁড়ি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগই একমাত্র ছাত্র সংগঠন, যে দলের হাত ধরে গঠিত হয়েছে বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন, যেটির নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকেই। দেশ বিভক্ত, ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দেওয়া একমাত্র ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তুখোড় ছাত্রনেতা থেকে জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনই বর্তমানের শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতাদের জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার বিষয়। তারই সুযোগ্য কন্যা, আজকের প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনাও ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেত্রী।

ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘ছাত্রদের আপদে-বিপদে আমি তাদের পাশে দাঁড়াতাম। কোন ছাত্রের কী অসুবিধা হচ্ছে, কোন ছাত্র হোস্টেলে জায়গা পায় না, কার ফ্রি সিট দরকার আমাকে বললেই আমি প্রিন্সিপাল ড. জুবেরী সাহেবের কাছে হাজির হতাম। আমি অন্যায় আবদার করতাম না। শিক্ষকরা আমার কথা শুনতেন’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী)। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের এসব তথ্য থেকেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাকর্মীদের শিক্ষা নিতে হবে।

১৯৪৬ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যকার সেই ভয়াবহ দাঙ্গার সময় একজন মুসলমান ছাত্রনেতা হয়েও তিনি সমানভাবে মুসলমান ও হিন্দুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মুসলমান অঞ্চলে আটকে পড়া হিন্দুদের পৌঁছে দেন নিরাপদ এলাকায়। ঠেলাগাড়ি ঠেলে নিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন হিন্দু এবং মুসলমানদের কাছে। এটাই হলো একজন অসাম্প্রদায়িক ছাত্রনেতার পরিচয়।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উচিত বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া। বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বই হলো- অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়াচীন। এসব বই পাঠ করলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারবেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীর উচিত এ সংগঠনের সঠিক ইতিহাস জেনে নেওয়া। তা না হলে বহু সাফল্যের ধারক এ সংগঠনকে তারা কিছুই দিতে পারবে না। যারা এসব তথ্য না জেনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী হবেন, তাদের হাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরব কলুষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ছাত্ররাজনীতির নামে কেউ যাতে কোনো অপকর্ম করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। সব কর্মকাণ্ডে দেশপ্রেমের চেতনাকে ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় গুরুত্ব দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে তার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলায় রূপ দেওয়ার প্রত্যয়ে প্রিয় এ সংগঠন অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

লেখক: ছাত্র সংগঠক ও শিক্ষার্থী

mrsojon71@gmail.com

বঙ্গবন্ধু

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম