Logo
Logo
×

বাতায়ন

একজন লেখকের দৃষ্টিতে যুগান্তর

Icon

মুহাম্মদ ইয়াহ্্ইয়া আখতার

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একজন লেখকের দৃষ্টিতে যুগান্তর

আজ ১ ফেব্রুয়ারি। যুগান্তর ২৪তম বছরে পদার্পণ করল। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ দুই যুগ সময়ে যুগান্তর ক্রমান্বয়ে নিজেকে বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

পাঠকদের সমাদৃত পত্রিকার মধ্যে যুগান্তর এখন প্রথম সারিতে। এ অর্জনের পেছনে যুগান্তরের সঙ্গে যুক্ত সম্পাদক, প্রকাশক এবং এর প্রত্যেক সংবাদকর্মীর গঠনমূলক পরিকল্পনা ও নিরলস পরিশ্রম কাজ করেছে। এ দুই যুগে যুগান্তর অব্যাহতভাবে প্রতিজন পত্রিকা পাঠকের পাঠতৃষ্ণা মেটাতে চেষ্টা করেছে। পত্রিকা পাঠকদের সকালের নাস্তা ও চা-কে যুগান্তর সুস্বাদু ও উপভোগ্য করেছে এবং করছে।

পত্রিকা হিসাবে যুগান্তরের অনন্য উচ্চতায় ওঠার পেছনে কতিপয় কারণ কাজ করেছে। প্রথমত, এর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা পাঠকদের যুগান্তরের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে যুগান্তরের বিভিন্ন পাতার মধ্যে এর সম্পাদকীয় পাতা পাঠকদের কাছে অধিক সমাদৃত বলে মনে করি।

যুগান্তরের সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিটি কলাম বিশ্লেষণধর্মী। এ পত্রিকার নিয়মিত কলামিস্টরা অর্থনীতি, সমসাময়িক রাজনীতি, স্বদেশি ও বিদেশি ঘটনাপ্রবাহের ওপর লিখে থাকেন। শিক্ষা ও সংস্কৃতি, দুর্নীতি ও সুশাসনের ওপরও প্রকাশ করা হয় বহু লেখা।

আমি নিজে প্রায় এক যুগ হলো যুগান্তরের একজন নিয়মিত কলামিস্ট। আমার ‘দেশপ্রেমের চশমা’য় প্রকাশিত কলামগুলো ব্যাপকভাবে পঠিত হয়। অনেক দেশি ও বিদেশি পাঠক ই-মেইলে প্রকাশিত কলাম সম্পর্কে আমার কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া পাঠান। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, যুগান্তরে আমি স্বাধীনভাবে লিখতে পারি।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের চাপের মধ্যেও যুগান্তরের সম্পাদকীয় বিভাগ আমার লেখাকে খুব একটা পরিবর্তন করে না। আমার প্রতিটি লেখাই তারা প্রকাশ করেন। তবে আমিও লক্ষ রাখি তারা যেন বিপদে না পড়েন। একটু ভেবেচিন্তে লিখি। বর্ণনায় নগ্ন আক্রমণ পরিহার করে একাডেমিক বিশ্লেষণ যোগ করে লিখি।

আমি একজন বর্ণহীন তুচ্ছ নগণ্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। ৪০ বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি। এ কারণে শিক্ষক হিসাবে আমি শিক্ষার্থী মহলে পরিচিত। কিন্তু যুগান্তরের কলামিস্ট হিসাবে আমি দেশে ও বিদেশে অধিকতর পরিচিতি ও সম্মান পেয়েছি। যুগান্তরে লেখার কারণেই সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী পাঠকসমাজের কাছে আজ আমি একজন পরিচিত কলামিস্ট। যুগান্তরের অনলাইন পাঠক সংখ্যা খুব বেশি।

এ কারণে আমি সারা বিশ্বের বাংলা ভাষার সংবাদপত্র পাঠকদের কাছে একজন গ্রহণীয় লেখক হয়ে উঠতে পেরেছি। যুগান্তরে প্রকাশিত আমার অনেক কলাম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত বাংলা সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা আমার অনুমতি না নিয়েই প্রকাশ করে। আমার ধারণা, ওই পত্রিকাগুলো যুগান্তর সম্পাদকেরও অনুমতি নেয় না।

উদাহরণ হিসাবে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ঠিকানা পত্রিকা আমার অনেক লেখা প্রকাশ করেছে। এই তো মাত্র কিছু দিন আগে টরন্টো থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা কাগজ যুগান্তরে প্রকাশিত আমার লেখা ‘কোন দিকে গড়াবে রাজনীতির খেলা?’ শীর্ষক প্রবন্ধটি তাদের ২০ ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশ করেছে। আমি এ বিষয়ে অবগত হয়েও প্রতিবাদ করি না। কারণ, আমি চাই আমার প্রতিটি কলাম বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষী পাঠকরা পড়ুন। আমার কলাম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করুন। দেশে ও বিদেশে নতুন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়ে আমাকে অনেকবার শুনতে হয়েছে, ‘আপনার নামটি বেশ পরিচিত। আপনি মনে হয় পত্রিকায় কলাম লেখেন। আমি আপনার অমুক কলামটি পড়েছিলাম।’ এমন ঘটনা আমার ব্যক্তিগত জীবনে বহুবার ঘটেছে। যুগান্তরে প্রকাশিত কলামই আমাকে তাদের কাছে পরিচিত করেছে।

আমি যুগান্তরে যেসব কলাম লিখেছি, তার বেশিরভাগই সমসাময়িক রাজনীতিবিষয়ক। তবে সাহিত্য, দুর্নীতি, সুশাসন ইত্যাদি বিষয়েও অনেক কলাম লিখেছি। লিখেছি আরও অনেক বিষয়বস্তু নিয়েও। আমার লেখাগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর পাঠকদের কাছ থেকে অনেক প্রতিক্রিয়া পেয়ে থাকি। আবার, আমার কোনো লেখায় কেউ যে অখুশি হননি এমন নয়। অনেক সময় অনেকে প্রকাশিত লেখার ওপর বিরূপ মন্তব্য করেছেন। তবে তেমন ঘটনা কদাচিৎ ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসে অভিনন্দন ও প্রশংসা। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরে আমার কলাম প্রকাশিত হলে যশোরের ডিসি মহোদয় আমাকে ফোন করে মতামতের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। আমি তাকে আমার ব্যাখ্যা প্রদান করেছি। যারা লেখা সম্পর্কে জানতে চান, আমি সম্মানের সঙ্গে তাদের যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমার মতামতের পক্ষে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।

যুগান্তরের সাহিত্যের পাতাটিও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। যুগান্তরের ঈদসংখ্যা পাঠকপ্রিয়তা পায়। পত্রিকাটির বর্ষপূর্তিতেও অনেক গণ্যমান্য লেখকের লেখা প্রকাশিত হয়। আমি নিজেও বেশ কয়েকবার বর্ষপূর্তি সংখ্যায় লিখেছি। যুগান্তর কর্তৃপক্ষ প্রতিবার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমাকে দাওয়াত করে থাকে। দুঃখের বিষয়, আমি চট্টগ্রামে বা খুলনায় থাকায় আমার পক্ষে কখনো এমন অনুষ্ঠানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, এমন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, লেখক, কবি-সাহিত্যিক এবং বিভিন্ন গণ্যমান্য পেশাজীবীরা অংশগ্রহণ করে পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত সংবাদকর্মীদের অভিনন্দন জানান। অনেকে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। তাদের বস্তুনিষ্ঠভাবে সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে পত্রিকার আরও উন্নয়নে উৎসাহিত করেন।

আগেই বলেছি, যুগান্তরের অনলাইন সংখ্যা অধিক পঠিত। দৈনিক প্রায় ৬০ থেকে ৭৫ লাখ পাঠক বিশ্বব্যাপী অনলাইনে যুগান্তর পত্রিকা পড়ে থাকেন। আমরা যারা নিয়মিত যুগান্তরে লিখি, তারা আমাদের লেখার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী পত্রিকা পাঠকদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠি। অনেক বিদেশি পাঠক অনলাইনে যুগান্তরে প্রকাশিত লেখা পড়ে আমাকে ই-মেইলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এভাবে বহির্বিশ্বের পাঠকসমাজে যুগান্তরের লেখকরা পরিচিত হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশে পত্রিকার সংখ্যা শত শত। অধিকাংশ বড় দৈনিকেই কলাম ছাপা হয়। তবে সব কলাম বা সব সংবাদ পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে না। খুব কম পত্রিকাই জাতীর সংকটকালে জনগণের স্বার্থ তুলে ধরতে পারে। যুগান্তর এমনই একটি পত্রিকা। এ পত্রিকায় জনগণের স্বার্থ প্রাধান্য পায়। এ কারণেই যুগান্তর পাঠকদের অধিকতর মনোযোগ পায়। অনেক বড় পত্রিকা অনেক সময় নিজস্ব পলিসিগত কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকে। যুগান্তরের বেলায় এমনটি ঘটতে দেখা যায় না। একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। সম্প্রতি আমেরিকার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকায় এলে কূটনীতিকরা মার্কিন মন্ত্রীর এ সফরকে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকার করেছেন। মন্ত্রীর ঢাকায় আসার এ খবর যুগান্তরসহ অনেক পত্রিকা প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশ করলেও কোনো পত্রিকার নাম উল্লেখ না করেই বলছি, একটি নামি পত্রিকা সে খবর পরিবেশন করেনি। যুগান্তর সংবাদ পরিবেশনায় এমনটি করে না। পত্রিকাটি পাঠকদের সময়মতো সঠিক খবরটি জানাতে চেষ্টা করে। এ কারণে যে কোনো ঘটনার পর পাঠকরা সে বিষয়ে যুগান্তরের বিশ্লেষণ পড়তে চান।

আজ যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একজন পাঠক হিসাবে আমি যুগান্তরের নির্ভীক পথচলাকে উৎসাহিত করছি। তাদের প্রত্যেক সংবাদকর্মীকে জানাই শুভেচ্ছা। আগামী দিনগুলোতে যুগান্তর যেন এভাবেই সব সময় জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে পথচলা অব্যাহত রাখে। কামনা করি, পাঠকসমাজে যেন এ গণবান্ধব পত্রিকাটি আরও বেশি সমাদৃত হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পত্রিকাটির সম্পাদক, প্রকাশক, সংবাদকর্মী ও পাঠকসমাজকে একজন লেখক ও পাঠক হিসাবে আমি আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

 

ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক (এলপিআর), রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

akhtermy@gmail.com

লেখক যুগান্তর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম