দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
ভবিষ্যতের নিরিখেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন
এম হুমায়ুন কবির
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমার মনে হয় একটা অসম্পূর্ণ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি আমরা। বিএনপির মতো একটা বড় দল এবং তাদের সঙ্গে অন্য আরও যেসব দল আছে, তারাও যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে নির্বাচনের খাতিরে একটা নির্বাচন হবে। কিন্তু এতে সংকট উত্তরণের পথ হিসাবে নির্বাচনের যে গুরুত্ব, তা কতটা অর্জিত হবে, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব কথাবার্তা হচ্ছে, সেগুলোতেও কিন্তু নির্বাচনের গুরুত্ব আরও বেশি হালকা হয়ে যাচ্ছে। যেমন, এ নির্বাচনে ডামি ক্যান্ডিডেট রাখা যেতে পারে বলা হচ্ছে বা যেসব দলকে নতুনভাবে আমরা আবির্ভূত হতে দেখছি, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও যে ধরনের আলোচনা পত্র-পত্রিকায় আসছে, তাতে করে নির্বাচন নিয়ে আমাদের যে রাজনৈতিক সংকট আছে, সেই সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে এ নির্বাচন খুব একটা অর্থবহ অবদান রাখবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। যদি তা না হয়, সেক্ষেত্রে যে আশঙ্কাটা অনেকেই করছেন সেটা হলো, আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘায়িত হবে।
এ অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে তার একটা অন্য ফলাফল বা প্রতিক্রিয়ারও অনেকে আশঙ্কা করছেন। কারণ, আমাদের রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতি খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সেক্ষেত্রে যদি রাজনৈতিক অবস্থার উত্তরণ না ঘটে, তাহলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ার আশঙ্কা থাকবে। এছাড়া সামাজিকভাবে আমাদের যে অগ্রগতিগুলো আমরা অর্জন করেছি গত কয়েক দশকে, সেই জায়গাগুলোতেও এক ধরনের জটিলতার আশঙ্কা থেকে যাবে।
তাছাড়া আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ৫০-৫২ বছর ধরে সম্পর্ক বজায় রেখে যে ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি এবং যে ধরনের সুযোগ-সুবিধাগুলো আমরা পাচ্ছি, এখন সেই জায়গাগুলোতেও যে আমরা খুব স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছি, সেটা আমার মনে হয় না। এখন এ অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে বিভিন্ন স্তরের বৈশ্বিক যোগাযোগ থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। তা-ই যদি ঘটে, তাহলে আমাদের বহুমুখী সংকটের মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কাজেই এখনো আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে একটা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য, জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন করা উচিত। তাহলে আমরা শুধু রাজনৈতিক সংকট থেকে বের হবো তাই নয়, আমাদের অর্থনীতিতেও যে গতি আছে, সেটাও চালু রাখতে পারবো। একই সঙ্গে আমাদের এতদিনের যে অর্জন, সেই অর্জনগুলো ধরে রাখা সম্ভব হবে এবং আমরা যে অর্থনৈতিক উত্তরণের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি, সেটাও সাবলীল থাকবে। এর ফলে আমরা টেকসই যে অর্থনৈতিক কাঠামোর কথা বলছি, সেই টেকসই জায়গাটাতে আমাদের যাওয়ার পথটাও আরও সুগম হবে। সামগ্রিক বিবেচনায় এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এখন একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন করা আমাদের জন্য খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
এম হুমায়ুন কবির : সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
