সময়টা অর্থনীতির জন্যও ক্রান্তিকাল
ড. আর এম দেবনাথ
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নতুন বছর ২০২৪। আমন ফসল কৃষকরা ঘরে তুলেছেন। জানুয়ারির ৭ তারিখ হয়ে গেল জাতীয় নির্বাচন। নতুন সরকারও গঠিত হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো সরকারপ্রধান। মন্ত্রীদের অনেকেই নতুন। সামনে পবিত্র রমজান মাস। শাকসবজি, তরিতরকারি, মাছ-মাংস, দুধ-ডিম সর্বোপরি চালের বাজার গরম। কোনো স্বস্তির লক্ষণ নেই ভরা শীতের মৌসুমেও যখন অন্য সময়ে ভোক্তারা সাধারণভাবে একটু কমমূল্যে জিনিসপত্র কিনতে পারে। প্রচণ্ড শীত। উত্তরবঙ্গের লোকেরা শীতে ভুগছে বেশি। খারাপ আবহাওয়া, বৃষ্টি, বৃষ্টিভাব রবিশস্য নষ্ট করছে। আলু, পেঁয়াজ, সরিষা, কলাই ইত্যাদি ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। অর্থনীতিতে মন্দাভাব। এ পরিস্থিতির মধ্যেই ‘দৈনিক যুগান্তর’ তার ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। যুগান্তরকে অভিনন্দন। একটি দৈনিকের পক্ষে দুই যুগ সফলভাবে পার করা এ বাজারে বেশ কঠিন। কিন্তু ‘যুগান্তর’ তার সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে সফলতা সম্ভব। যুগান্তরের এ ২৪ বছরের পাশাপাশি যদি আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটা তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে, এ সময়টা আমাদের অর্থনীতির জন্যও একটা ক্রান্তিকাল। আমরা এ সময়টাতেই উচ্চতর প্রবৃদ্ধির পথে উত্তরণ ঘটাই। অর্থনীতির ঘটে কাঠামোগত পরিবর্তন। আগে ‘জিডিপি’তে কৃষির অবদান ছিল বেশি এবং দৃশ্যমান। এ সময়টায়, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে কৃষির অবদান অনেক হ্রাস পেয়েছে। সর্বশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আমাদের ‘গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্টে’ সেবা খাতের অবদান এখন সবচেয়ে বেশি-৫০ শতাংশ। তারপরই শিল্পের অবদান। এ খাতের অবদান এখন ৩৮ শতাংশ। কৃষি খাতের অবদান এখন মাত্র ১১ শতাংশ, যদিও কৃষিতে আমাদের সাফল্য অসামান্য। এ অর্থনৈতিক কাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, গত দেড় দশকে আমাদের গড় ‘জিডিপি’ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। বলাই বাহুল্য, এ হার অর্জনে আমাদের কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়েছে। এখন আমরা বিশ্বের ৩৩তম অর্থনীতি। বিশ্বের টলটলায়মান অর্থনীতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ, লোহিত সাগরে হুতি হামলা ইত্যাদি সত্ত্বেও ২০২৪ অর্থবছরে আমাদের হতে পারে কমপক্ষে ছয় শতাংশ যা আন্তর্জাতিক মানে বেশ আশাপ্রদ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরের মান ৪ লাখ ২০ হাজারের জায়গায় আমাদের জিডিপির আকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটিতে। গত ১৬-১৭ বছরের মধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৪২৭ ডলার। ২০২২-২৩-এ এর পরিমাণ উন্নীত হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ ডলারে। নিম্ন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও এ অর্জনে যথেষ্ট অবদান রেখেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখন দুই শতাংশের নিচে। এ সাফল্যের পাশাপাশি আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের রপ্তানি এবং আমদানিও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। গত ১৬-১৭ বছরে আমাদের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৫ গুণেরও বেশি। অবশ্য আমদানিও বেড়েছে একই হারে, বরং একটা বেশি হারে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ১০ বিলিয়ন (শত কোটি) ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। আমদানি বৃদ্ধির পরিমাণও এ সময় ৫ গুণের বেশি। রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্যমাত্রাই ১৫০ বিলিয়ন ডলার। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি হবে রপ্তানিমুখী যদিও দরকার হবে অভ্যন্তরীণ ভোগমুখী অর্থনীতি। এর অর্থ আগামীতে আমাদের ক্রয়ক্ষমতা আরও বৃদ্ধির মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে অভ্যন্তরীণ চাহিদাভিত্তিক অর্থনীতি। এর জন্য আমাদের জাতীয় বাজেট তৈরির কৌশলেও পরিবর্তন আনতে হবে। ২০০৫-০৬ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে আমাদের জাতীয় বাজেটের আকার বেড়েছে সাড়ে ১২ গুণ। ২০২২-২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এখানে সমস্যা হচ্ছে বাজেটের আকার বড় হওয়া সত্ত্বেও আমরা বাজেট ঘাটতিতে আছি সব বছরে। প্রায় বছরই আমাদের বাজেট ঘাটতি থাকে ৫ শতাংশের মতো। এর অর্থ আমরা যা ব্যয় করি, আয় তার চেয়ে কম। এর জন্য বাজেট ঋণনির্ভর-দেশি এবং বিদেশি। মূল সমস্যা হচ্ছে অপচয়, বাজেটের গুণগত মানের অনুপস্থিতি। আমরা ১ টাকার কাজ করি দুই-তিন টাকায়। এটা কী রাজস্ব বাজেট, কী উন্নয়ন বাজেট উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। রাজস্ব আহরণে আমাদের সাফল্য কম যদিও টাকার অঙ্কে রাজস্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬-১৭ বছরের মধ্যে রাজস্ব আহরণ ৪৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার জায়গায় হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর বৃদ্ধি দেখালেও আমাদের রাজস্ব জিডিপি আনুপাতিক ১০ শতাংশের নিচে যা এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন।
আমাদের অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে কৃষিতে। সার, জীজ, কীটনাশক, বিদ্যুৎ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহে সরকারি ভর্তুকি বড় অবদান রেখেছে। চাল উৎপাদনে আমরা সারা বিশ্বে এখন তৃতীয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে চাল, গম ও ভুট্টা এ তিনটি শস্য মিলিয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার টন। ২০২২-২৩ এসে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৮৮ হাজার টন। এর মধ্যে চালের উৎপাদনই ৪ কোটি ১৫ লাখ ৬৬ হাজার টন। চালে আমরা এখন মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। ভাতের অভাবে এখন কেউ মারা যায় না। অথচ স্বাধীনতার আগে দেশে ‘মঙ্গা’ লেগেই থাকত। কার্তিক মাস ছিল মঙ্গার মাস। এখন তা আর সত্য নয়। শুধু চাল উৎপাদন নয় সবজি, পেঁয়াজ, আলু ও গম এবং চা উৎপাদনেও আমরা এখন বিশ্বে স্থান করে নিয়েছি। সবজি ও পেঁয়াজে বিশ্বে আমরা তৃতীয়, আলু ও আমে ৭ম, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করতে পেরেছি। সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিভিন্ন ফলের উৎপাদন-মাছ, মাংস, দুধ-ডিমের উৎপাদনও। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত একযুগ সময়ের মধ্যে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে চারগুণ ও তিনগুণ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টন, ৯২ লাখ ৬৫ হাজার টন এবং ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। এদিকে ফলমূল উৎপাদনের পাশাপাশি এ সবের ভোগও বেড়েছে। ২০০৬ সালে মাথাপিছু ফল ভোগের পরিমাণ ছিল ৫৫ গ্রাম। এখন তা ৮৫ গ্রামের ওপরে। লক্ষণীয়, এত বড় উল্লম্ফনে ভর্তুকির অবদান যৎসামান্য। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ মাত্র ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে অবকাঠামোর উন্নয়ন রীতিমতো চমকপ্রদ। পদ্মা সেতু নির্মাণ, পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা-ক্সবাজার রেললাইন স্থাপন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ ইত্যাদি বাংলাদেশের অবকাঠামোগত অবস্থানকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছে। যেখানে ১০-১২ ঘণ্টা লাগত সে জায়গায় ঢাকা-যশোর পথে এখন সময় লাগে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা। এ ছাড়া রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এখন ঢাকা থেকে বাংলাদেশের যে কোনো জেলা সদরে যেতে ২-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। তাক লাগানো পরিবর্তন এসেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বিগত দেড় দশেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩ হাজার ২৬৭ কেলোওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৮ হাজার ৫৬৬ কিলোওয়াটে উন্নীত হয়েছে। অথচ এর আগে ‘লোডশেডিং’ ছিল নিয়মিত ঘটনা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে চলত ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘লোডশেডিং’। কৃষি ও শিল্প উৎপাদন থাকত সর্বদা বিঘ্নিত। এখন আলোময় বাংলাদেশ। শতভাগ বসতি-বাজার-স্থাপনা এখন বিদ্যুতায়িত। গ্রামের বাজার, বাড়িঘর এখন বিদ্যুতায়িত। গ্রামের বাজার, বাড়িঘর এখন রাতে থাকে আলোকিত। বিদ্যুতের ব্যবহারও আওতাবৃদ্ধি, কম্পিউটার ব্যবহার, মোবাইল ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি, ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণ, ব্যাংকিং সুবিধা, এজেন্ট ব্যাংকিং সুবিধা, ‘বিকাশ’ ইত্যাদি ফান্ড ট্রান্সফার ব্যবস্থা, গ্রামীণ রাস্তাঘাটে সম্প্রসারণ ইত্যাদি গ্রামকে, গ্রাম-সামাজে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে আমূল বদলে দিয়েছে। এ সবের প্রভাব পড়েছে দারিদ্র্য বিমোচনে। ১৯৭১ পূর্বকালে দারিদ্র্য ছিল একটা প্রকট সমস্যা। ৬০-৭০-৮০ শতাংশ লোক ছিল দারিদ্র্যপীড়িত। মঙ্গা, খাদ্যাভাব, এমনকি ভাতের ‘ফেনের’ অভাব ইত্যাদি ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী। আজ মঙ্গা, দূরীভূত, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে ব্যাপকভাবে। সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে মানুষের গায়ে কাপড় আছে, পায়ে জুতা-সেন্ডেল আছে, মাহিলাদের পর্দা আছে। এক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে দারিদ্র্য এবং অতিদারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ৪১ শতাংশ এবং ২৫ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে মাত্র ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে যোগ হয়েছে রেমিট্যান্সের টাকা। এ সময়ের মধ্যে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে চারগুণের মতো। বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে রেমিট্যান্স সরকারি হিসাবে আসে। এ বিশাল পরিমাণ টাকা/ডলারের প্রাপক হচ্ছে গ্রামের কৃষক-অকৃষক পরিবার। এ ডলার/টাকা গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোয়ার এসেছে। বিগত এক-দেড় দশকের মধ্যে প্রতিটি উপজেলা পরিণত হয়েছে শহরে। শহরের সব সুবিধা গ্রামে পাওয়া যাচ্ছে। গ্রামের লোকেরা এখন চা তো খায়-ই বরং কফির ব্যবহার গ্রামেও বাড়ছে। এ কারণে চায়ের রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে। গ্রামের বাজারেও এখন স্বর্ণের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকান হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব পরিবর্তনের সুযোগে মানুষ মুহূর্তের মধ্যে ১০-১৫-২০ কিলো রাস্তা গমনাগমন করছে। লোকের পেশা পরিবর্তন হচ্ছে। জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, কাঠমিস্ত্রি ইত্যাদি শ্রেণিপেশার ব্যাপক রদবদল ঘটছে। দুধ উৎপাদন, ফসল উৎপাদন, মাছ উৎপাদনে টেকনোলজি পরিবর্তন হচ্ছে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ এমনকি ১৯৯০ সালের বাংলাদেশও এখন আর নেই। এ এক সম্পূর্ণ নতুন বাংলাদেশ, সম্পূর্ণ নতুন ঢাকা এবং অন্যান্য শহর।
মাঝেমধ্যে ভাবি, এত মূল্যস্ফীতির মধ্যেও মানুষ টিকছে কীভাবে। কষ্ট আছে, দুঃখ-অভাব আছে। তবু মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ টিকে আছে। ১৯৭১ পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ১০০-২৪০-৩০০ গুণ। এরপরও গড়পড়তা ভোগ মানুষের বেড়েছে। এর কারণ কি এই যে, মানুষের প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখলাম ২০০৬-০৭ অর্থবছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ। একদিনের মজুরিতে আগে চাল পাওয়া যেত তিন-চার কেজি। আর এখন পাওয়া যায় ১০-১২ কেজি।
এতসব সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি এ মুহূর্তে বড় সংকটে। প্রথমে ‘করোনা-১৯’, তারপর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, পরে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ, এ মুহূর্তের লোহিত সাগরে ইয়েমেনি হুতিদের জাহাজ আক্রমণ এবং সর্বশেষ ইরান-পাকিস্তান সংঘাত আমাদের অর্থনীতিকে সাময়িকভাবে এক জায়গায় আটকে দিয়েছে। তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ঘটে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি। এর ফলে আমাদের অর্থনীতিতেও ঘটে মূল্যস্ফীতি যা এ মুহূর্তে প্রায় ১০ শতাংশ। মানুষের জীবন বড় কষ্টে পড়েছে। সমস্যা এখন সবক্ষেত্রে দৃশ্যমান। প্রধানত ঋণ সমস্যা/চ্যালেঞ্জ এখন : মূল্যস্ফীতি রোধ করা, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানা, ডলার রিজার্ভ বৃদ্ধি করা, আমদানি নিয়ন্ত্রণ শিথিলকরণ, খেলাপি ঋণ হ্রাস করে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন স্থাপন করা, রাজস্ব বৃদ্ধি সরকারি ব্যয় হ্রাস করা, বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ সীমিত করা, বড় বড় প্রকল্প শেষ করা। এর সঙ্গে ছোট-বড় আরও সমস্যা আছে। দেখাই যাচ্ছে ডলার সংকটই প্রধান। অথচ এর পরিমাণ বাজারে বৃদ্ধি করার পথ বেশি নেই। রপ্তানি বৃদ্ধি, আমদানি হ্রাস, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ইত্যাদি কয়েকটি পথ। দুরূহ কাজ দুর্নীতি বন্ধ করা। এ রোগ এখন ‘অতিমারি’তে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি হুন্ডিকে উসকে দিচ্ছে, ডলার পাচার বৃদ্ধি করছে, ঘটাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে পতন। বড় বড় সমস্যা। কাঠামোগত সমস্যা। বহু সংস্কারের প্রয়োজন। কার্পেটের তলায় আবর্জনা অনেক বেশি। দীর্ঘদিন উপেক্ষিত থকায় তা থেকে এখন স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। এরই মধ্যে আমাদের ‘উদ্ধারদাতা’ হিসাবে এসে হাজির ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)’। তারা এখন যার দায়িত্বে নিয়োজিত। আমাদের অর্থনীতি এক সন্ধিক্ষণে। কীভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, এটাই ভাবার বিষয়।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
