তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ
শিল্প খাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের অবদান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যমুনা ফিউচার পার্ক কমপ্লেক্স
এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল শুধু যমুনা গ্রুপেরই নয়, বাংলাদেশের গর্ব। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আধুনিক জীবনযাত্রার আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে রাজধানীর বারিধারায় ৩৩ একর এলাকাজুড়ে নান্দনিক সৌন্দর্যে নির্মিত এটি। ২০০২ সালের ২৮ আগস্ট যাত্রা শুরু। বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সসহ বিনোদনকেন্দ্র হিসাবে এর খ্যাতিও রয়েছে। এখানে রয়েছে কেনাকাটা, খাবার, খেলাধুলা, বিনোদন, কনভেনশন হল, চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদির মতো বিস্তৃত সুযোগ-সুবিধা এবং পরিসেবা। এছাড়া দুটি বিদেশি ভিসা সেন্টারও এখানে রয়েছে। এই সাহসী উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। যা নতুন শতাব্দীর প্রত্যাশা পূরণে এবং সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে যমুনা গ্রুপের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার প্রমাণ। এখানে প্রায় তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থান।
দৈনিক যুগান্তর
সত্যের সন্ধানে নির্ভীক-এ স্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৯৯ সালের ৬ জুলাই যাত্রা শুরু করে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক যুগান্তর। তবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা ২০০০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্দ্বিধায় ‘সাদাকে সাদা, কালোকে কালো’ বলে আসছে। প্রকাশনার অল্প সময়েই এটি প্রচারসংখ্যা ও প্রাপ্যতার দিক থেকে শীর্ষস্থানে পৌঁছে যায়। দৈনিক যুগান্তরের জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে সাহসী, ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন এবং গঠনমূলক সম্পাদকীয় নীতি। যমুনা ফিউচার পার্কের এরিয়ায় অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমান জনবল ৮৫০ জন।
যমুনা ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কো. লি.
১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে নিয়ে দেশ স্বাধীনের পর দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ১৯৭৮ সালের ২০ নভেম্বর গাজীপুরের ভোগড়ায় গড়ে তোলেন ‘যমুনা ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোং লি.। ১৭ একর জমির ওপর নির্মিত কোম্পানিতে ওই সময়ে দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পুরোনো অবকাঠামো সরিয়ে ৪০ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
যমুনা ডিস্টিলারি লি.
আন্তর্জাতিক মানের শিল্প ও ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালকোহল উৎপাদনের লক্ষ্যে নাটোরের হোগলবাড়িয়ায় ১৯৮৮ সালের ১৬ অক্টোবর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনের ‘চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল কনস্ট্রাকশন করপোরেশন’ (সিএনসিসিসি)-এর কারিগরি সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত এ প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ স্পিরিট (অ্যালকোহল) উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট। এই অ্যালকোহল ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালকোহল এবং ভার্নিসে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখানে ২০০ মানুষ কাজ করছে।
যমুনা ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোড লি.
১৯৯১ সালের ১৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত যমুনা গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান যমুনা ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোড লি.। এর লোকেশন গাজীপুরের ভোগড়া। এটি নির্মাণে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে চীনের সাংহাই ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডস করপোরেশন। প্রতিবছর (সিঙ্গেল শিফট) এ প্রতিষ্ঠান থেকে দুই হাজার ৫০০ টন ফেরো এবং মেরিন টাইপ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোড উৎপাদন হয়। আবাসিক নির্মাণ ও জাহাজ শিল্পে যা ব্যবহার হয়ে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানে দুইশ মানুষের কর্মসংস্থান।
শামীম স্পিনিং মিলস লিমিটেড
১০০% রপ্তানিমুখী এই প্রতিষ্ঠানটি যমুনা গ্রুপের নিজস্ব পোশাক কারখানাগুলোর সুতার চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালের ২ নভেম্বর এ প্রতিষ্ঠানের পথচলা শুরু। এটি জার্মানি, জাপান এবং চেক প্রজাতন্ত্র থেকে আমদানিকৃত উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত। এর অবস্থান গাজীপুর জেলার সফিপুরে। উৎপাদন করে রপ্তানিযোগ্য কম্বড, কার্ডেড, স্লাব এবং কোর ইয়ার্ন। উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১২ হাজার কেজি। নিজস্ব চাহিদা পূরণের পরও রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। মোট জনবল ২০০ জন।
পেগাসাস লেদারস লিমিটেড
১৯৯৭ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত। এর উচ্চমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও স্থাপন করেছে তাইওয়ানের জেভি তাইয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম চামড়া উৎপাদন করে যা স্থানীয় জুতার কারখানা, গাড়ির সিট কভার, সিএনজি হুড এবং আসবাবপত্র শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত অন্যান্য উৎপাদন ইউনিটের চাহিদা পূরণে কাজ করে। ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের জন্য প্ল্যান্টে সম্প্রসারণের সুবিধাও রাখা হয়েছে। অবস্থান গাজীপুরের সফিপুরে। উৎপাদিত পণ্য পিভিসি এবং পিইউ কোটেড সিন্থেটিক লেদার। বছরে উৎপাদন ক্ষমতা ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন মিটার লেদার। জনবল ১৭০ জন।
শামীম কম্পোজিট মিলস লি.
১০০% রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় কন ও সাপাইসিং প্রযুক্তিসম্পন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা পরিচালিত। যেখানে সর্বোচ্চ মানের নিশ্চয়তার জন্য রয়েছে উন্নত মানের ল্যাব ও পরীক্ষণীয় সরঞ্জাম। ১৯৯৭ সালের ১০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানির বর্তমান অবস্থান গাজীপুরের সফিপুরে। শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানটির তুলা থেকে সুতা, মিশ্র সুতা এবং মিলাঞ্জ সুতাসহ ৩০ ধরনের সুতা উৎপাদন করে থাকে। স্পিন্ডল সংখ্যা ৫০ হাজার। প্রতিদিন উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার কেজি। এ প্রতিষ্ঠানে দেড় হাজার লোকের কর্মসংস্থান।
যমুনা বিল্ডার্স লিমিটেড
১৯৯৯ সালের ৫ অক্টোবর প্রতিষ্ঠা। দেশে জমির সংকট ও সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এ আয়োজন। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী দামে লিজ বা ভাড়ায় বাড়ি নেওয়ার সুযোগও রয়েছে। এর অন্যতম প্রকল্প হলো নিউ উত্তরা মডেল টাউনে ১২ হাজার প্লট এবং যমুনা সিটিতে ১০ হাজার প্লট রয়েছে। বর্তমানে এখানে ২ হাজার লোক কাজ করছে।
জিন্স কো.
তৈরি পোশাক খাতের এ প্রতিষ্ঠানের পথচলা শুরু ২০০২ সালের ৫ জুন। বর্তমান অবস্থান যমুনা কমপ্লেক্স, কোনাবাড়ী, গাজীপুর। উন্নত মানের পণ্য তৈরিতে অনন্য এ প্রতিষ্ঠানে ১৫০ দক্ষ জনবল কাজ করছে। পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত মানের মেশিনারিজ।
ফিউচার ওয়ার্ল্ড
একটি আধুনিক ইনডোর থিমপার্ক। ২০০২ সালের ২০ আগস্ট প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু। এটি শিশুতোষ বিনোদনের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত। এখানে রয়েছে ২০টির বেশি রাইড ও ১৫০টি আর্কেড গেম। এটি দেশের প্রথম মেগা ইনডোর থিমপার্ক। দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ ২০ ইনডোর থিমপার্কের তালিকায় রয়েছে এর নাম। সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি দর্শনার্থী এখানে আসেন। এখানে ১০০ জন মানুষ কাজ করছেন।
প্লেয়ার্স ক্লাব
যমুনা ফিউচার পার্কের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্লেয়ার্স ক্লাব। এটি একটি ইনডোর বিনোদনকেন্দ্র। ২০০২ সালের ২০ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির পথচলা শুরু। এখানে রয়েছে বোলিং, বিলিয়ার্ড, কারাওকে ও ডিস্কো রুম। দেশের সবচেয়ে বড় বোলিং এলির এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ২২টি বোলিং আইল। পেশাদার বোলিং খেলোয়াড়দের জন্য এটি অন্যতম কেন্দ্র। এটি ইউএস ৮ বল ও আন্তর্জাতিক øকার খেলোয়াড়দের জন্য উপযোগী। বর্তমানে এখানে ৮০ জন মানুষের কর্মসংস্থান।
কার্নিভাল
যমুনা ফিউচার পার্কের ইনডোর অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এলাকা। ২০০২ সালের ২০ আগস্ট এটি প্রতিষ্ঠিত। এখানে রোলার কোস্টারসহ নানা থ্রিলিং রাইডের জন্য পরিচিত। এখানে রয়েছে স্কাই ড্রপ, পাইরেট শিপ, ম্যাজিক উইন্ডমিল, ফ্লাইং ডিস্কো, টাওয়ার চ্যালেঞ্জার, হুইল্ড উইন্ড ক্যাভালিয়ার, ৩৬০ ডিগ্রি শাফল, ফ্লোটিং ব্যালে ও ডাবল ডেকার।
৭০ জন দক্ষ কৌশলী কাজ করছে এখানে।
ব্লকবাস্টার সিনেমা
এ প্রতিষ্ঠান দেশের প্রথম সিনেপ্লেক্সগুলোর মধ্যে একটি। ৯টি একক স্ক্রিনসহ এটি দেশের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল। ২০০২ সালের ২০ আগস্ট এটি প্রতিষ্ঠিত। ‘থ্রিল’, ‘এক্সপ্রেশন’, ‘আইরিস’, ‘ট্রানজিশন’, ‘মন্টাজ’, ‘এক্সপোজার’ এবং ‘ক্লাব রয়্যাল’-এর মতো এক্সপেরিয়েন্স থিয়েটার রয়েছে এখানে। হলিউড ব্লকবাস্টার থেকে দেশীয় সিনেমা সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু এ সিনেমা হল। প্রতিষ্ঠানে ১২০ জন মানুষ কাজ করছে।
ভোগ লাইফস্টাইল লাউঞ্জ
ভোগ লাইফস্টাইল লাউঞ্জ হলো প্রাকৃতিক ও বৈদিক চিকিৎসা পদ্ধতির সমন্বয়ে গঠিত একটি উন্নত সেবাকেন্দ্র। ২০০২ সালের ২০ আগস্ট যাত্রা শুরু। নারীদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত কেন্দ্রটিতে ২০টিরও বেশি স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য সেবা প্রদান করা হয় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ দ্বারা। এখানে ব্যবহৃত আয়ুর্বেদিক পদ্ধতির উন্নত ম্যাসেস সেবাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।
ফিউচার ফিটনেস জিম
২০০২ সালের ২০ আগস্ট যাত্রা শুরু। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ফিটনেস সেন্টার। যমুনা ফিউচার পার্কে ৩০ হাজার বর্গফুট এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা এ জিমে রয়েছে আধুনিক ফিটনেস সরঞ্জাম যেমন-ট্রেডমিল, বাইক, ক্রস ট্রেইনার, টিআরএক্স জোন, স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং ব্যবস্থা। ভিন্ন ভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের জন্য অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছে জুম্বা, যোগ, গ্রুপ সাইক্লিং, মাংসপেশি সহনশীলতা প্রশিক্ষণ, এরোবিক্স, স্টিম সাউনা, জাকুজি ও অত্যাধুনিক সুইমিংপুল। সুইমিংপুল রয়েছে নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথকভাবে, যা ভোগ লাইফস্টাইল লাউঞ্জে অবস্থিত। এখানে ৭০ জন মানুষ কাজ করছে।
ক্রাউন বেভারেজ লিমিটেড
২০০২ সালের ১৭ জুলাই প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের একমাত্র সফট ড্রিংকস ও মল্ট বেভারেজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসম্মত বিভিন্ন ধরনের পানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ করে। শুধুই মুনাফা নয়, লক্ষ্য মানুষের সেবা। গাজীপুরের সফিপুরে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছর উৎপাদন ক্ষমতা ১০ কোটি ক্যান। এখানে মোট কর্মসংস্থান ২০০ জন। এটি একটি আমদানি বিকল্প পণ উৎপাদন করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করছে।
যমুনা স্পিনিং মিলস লি.
গাজীপুরের সফিপুরে এ কোম্পানি শতভাগ রপ্তানিমুখী কটন ও বেন্ডেড ইয়ার্ন উৎপাদন করে। বছরে উৎপাদন ৪৪ লাখ কেজি। এখানে ১ হাজার ২০০ লোকের কর্মসংস্থান। স্পিনিং খাতের শীর্ষ এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। রপ্তানিনির্ভর এ স্পিনিং মিলটি নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক বাজারে সুতা রপ্তানি করে থাকে। আধুনিক মেশিনারি ও উচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা এটিকে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় স্পিনিং মিল হিসাবে গড়ে তুলেছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ২০০ মানুষের কর্মসংস্থান।
