রুপালি গিটারের জাদুকর
ভক্তহৃদয়ে আজও অম্লান
আনন্দনগর প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উপমহাদেশের কিংবদন্তি গিটারিস্ট, সুরের জাদুকর, গীতিকার ও সংগীতশিল্পী, ব্যান্ড এলআরবি’র প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু। বহু কালজয়ী গানের স্রষ্টা, বাংলা সংগীত জগতের এক মহান দিকপাল, রুপালি গিটার হাতে সুরের সম্রাট আজ আমাদের মাঝে নেই, তবু রয়ে গেছে তার অমর সৃষ্টি। আজও জীবন্ত, আজও প্রাণবন্ত! মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ব্যান্ড সংগীতের এ উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেখতে দেখতে সাত বছর হয়ে গেল। মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে ভক্ত-অনুরাগীরা আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করছেন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। বিশেষ দিনে তাকে ঘিরে সংগীতশিল্পী, মিউজিশিয়ান ও পরিবারের পক্ষ থেকে থাকছে অনেক আয়োজন।
মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন প্রসঙ্গে আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনা বলেন, ‘প্রতিবছরের মতোই এবারের আয়োজন। তার স্মরণে কুরআন খতম আর সাধ্য অনুযায়ী এতিমদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছি।’ এ ছাড়া আইয়ুব বাচ্চুর ভক্ত-অনুরাগীরাও দেশব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কিংবদন্তিকে স্মরণ করছেন।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। পারিবারিক আবহে সংগীতটা না থাকার পরও ছোটবেলায়ই গিটারের প্রেমে পড়েন। যদিও বাবার অমত ছিল। কিন্তু ছেলের প্রচণ্ড আগ্রহ দেখে ১১তম জন্মদিনে একটি গিটার কিনে দেন। সেই গিটারেই শুরু। দেহ-মননে তিনি যেমন বেড়ে উঠেছেন, তার সঙ্গে বড় হয়েছে সংগীত সত্ত্বাও। কলেজ জীবনে বন্ধুদের নিয়ে একটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রথমে এর নাম ছিল ‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে নাম বদলে ‘আগলি বয়েজ’ রাখেন। ১৯৭৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে গিটারিস্ট হিসাবে যোগ দেন এবি। সেখানে ছিলেন জেমসও। তবে আইয়ুব বাচ্চুর উত্থানের সূচনা মূলত ১৯৮০ সালে ‘সোলস’-এ যোগদানের পর। এ ব্যান্ডের হয়ে ১৯ বছর পারফর্ম করেছিলেন তিনি। এরপর নিজে কিছু করার কথা ভাবলেন, সেই ভাবনা থেকে ১৯৯০ সালে গড়ে তোলেন ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’, যা পরে ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ বা ‘এলআরবি’ নামে বিপুল খ্যাতি লাভ করে।
বাচ্চু এলআরবি’র ফ্রন্টম্যান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ব্যান্ডটি দেশে এবং বিদেশে হাজারেরও বেশি কনসার্ট করেছে (পাঁচ শতাধিক ওপেন-এয়ার এবং দুই হাজারের বেশি ইনডোর)। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে সেখানের ৭টি স্টেটে পারফর্ম করে।
জীবদ্দশায় আইয়ুব বাচ্চু মোট ১৬টি একক অ্যালবাম তৈরি করেছেন। একটি পূর্ণাঙ্গ স্টুডিওতে পরিণত হয়েছে ‘এবি কিচেন’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। অসংখ্য সুপারহিট প্লেব্যাক যেমন ‘আম্মাজান’, ‘সাগরিকা’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’সহ বাংলাদেশি বাণিজ্যিক সিনেমায় আরও অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে কালজয়ী কিছু গান হলো-‘সেই তুমি’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘মেয়ে’, ‘কেউ সুখী নয়’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘রুপালি গিটার’, ‘উড়াল দেব আকাশে’, ‘একচালা টিনের ঘর’, ‘তারাভরা রাতে’, ‘বাংলাদেশ’, ‘বেলা শেষে ফিরে এসে’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘আম্মাজান’, ‘ফেরারি মন’ ইত্যাদি।
এদিকে গত ১৬ আগস্ট ছিল অমর এ শিল্পীর জন্মদিন। দিনটি আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশন এবার আলাদাভাবে উদযাপন করে। যেটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে। ‘আইয়ুব বাচ্চু সেলিব্রেটিং লাইফ, লিগ্যাসি অ্যান্ড চলো বদলে যাই’ শীর্ষক এ আয়োজনে শিল্পীর পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও তার দীর্ঘ সংগীতযাত্রার সহযোদ্ধা, গণমাধ্যমকর্মী ও সুহৃদরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন বরেণ্য গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, ফিডব্যাক ব্যান্ডের দলনেতা ও সংগীতায়োজক ফোয়াদ নাসের বাবু, রেনেসাঁর নন্দিত কণ্ঠশিল্পী নকীব খান, সোলসের কণ্ঠশিল্পী পার্থ বড়ুয়া, দলছুটের বাপ্পা মজুমদারসহ অনেকে। এসময় আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশনকে কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায়, যার মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম কিংবদন্তি এই শিল্পী ও সংগীতস্রষ্টার সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পারে, এ বিষয়েও পরামর্শ করা হয়। সেসময় আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার চন্দনা ও এলআরবি’র সদস্যরা জানান, এখনো অমর এই শিল্পীর বেশ কিছু গান স্টুডিও বন্দি হয়ে আছে। যেগুলো বিভিন্ন সময় প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তার প্রস্তুতিও চলছে। যার সুবাদে রক আইকনখ্যাত এ শিল্পীর অপ্রকাশিত গানগুলো শোনার সুযোগ পাবেন শ্রোতারা। গান ছাড়াও আইয়ুব বাচ্চুর রেখে যাওয়া গিটার ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে একটি জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
