উচ্ছ্বসিত অভিনয়শিল্পীরা
আজ প্রেক্ষাগৃহে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব’
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ মুক্তি পেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’। গতকাল একটি বিশেষ প্রিমিয়ারে সিনেমাটি দেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সিনেমায় অভিনয় করে দেশের শিল্পীরাও বেশ উচ্ছ্বসিত। এ প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা ও ভালোলাগার কথা।
আনন্দনগর প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নির্মাণ শুরুর দীর্ঘ চার বছর পর অবশেষে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’। আজ সারা দেশের ১৫৩টি হলে মুক্তি পাচ্ছে সিনেমাটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের আলোকে এ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন ভারতের নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। সিনেমাটির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এর বিভিন্ন দৃশ্য ধারণের জন্য আলাদা করে সেট তৈরি করেছিলেন নির্মাতা। এছাড়া তৎকালীন আবহ তৈরি করতে গ্রাফিক্স এবং সিজিআইর কাজও করেছেন নির্মাতা।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ সিনেমায় অভিনয় করছেন দেশ-বিদেশের শতাধিক শিল্পী। এতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। সিনেমায় বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার বিষয়টি বলতে গিয়ে তিনি বেশ আবেগী হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এ সিনেমাটি হচ্ছে একটি জাতির ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির কাছে একটি আবেগের চরিত্র। আমি কিশোর মুজিব থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়টাকে এখানে উপস্থাপন করেছি। এটি আমার একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন।’ জানা গেছে, এ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়েছেন শুভ। শারীরিক গঠন, চাল-চলন, অঙ্গভঙ্গি, কথা বলা-সব কিছুতেই আমূল পরিবর্তন আনতে হয়েছে তাকে। নিতে হয়েছে প্রস্থেটিক মেকাপও। শুভ বলেন, ‘আমি মুজিব নই। আমি তার চরিত্রে অভিনয় করেছি। বায়োপিকের সত্যিকারের চরিত্রে অভিনয় করা কঠিন কাজ। একজন অভিনেতা যখন সেই চরিত্রে অভিনয় করেন, সে সময় অনেক চাপ থাকে। তারপরও আমি পরিচালকের নির্দেশমতো চরিত্রটিতে আমার সাধ্যমতো অভিনয় করার চেষ্টা করেছি। যারা এটি দেখেছেন-বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা আমাকে বলেছেন, আমি নাকি ভালোই করেছি। আমার আজ বড় আনন্দ যে, আমি একটি ইতিহাসের অংশ হতে পেরেছি। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমার পরিবারের কাছ থেকেও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যা জেনেছি-তা আমার জন্য অভিনয়ে সহায়ক হয়েছে।’
এ সিনেমায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। শেখ হাসিনার চরিত্রে দেখা যাবে নুসরাত ফারিয়াকে এবং তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে দেখা যাবে রিয়াজ আহমেদ। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা জানিয়ে নুসরাত ফারিয়া বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে এবং ক্যারিয়ারের জন্যও এ সিনেমাটি আমার জন্য একটা বিশাল অর্জন। এ সিনেমায় এমন অনেকেই আছেন, যারা মাত্র এক মিনিটের জন্য সিনেমার কোনো একটা অংশে অভিনয় করেছেন। কিন্তু যে মুহূর্তগুলো আমরা আবার অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছি, সেগুলোর মূল্য অনেক।’
আর ছোট রেণুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঢাকাই সিনেমার নায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। এ সিনেমায় কাজ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি রেণুর ১৩-১৭ বছর বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমি আমার চরিত্রে মিশে যেতে চেয়েছি। পেরেছি কিনা তা বিচারের ভার দর্শকের ওপর। আমি ও আমার বাবা সুব্রত (অভিনেতা সুব্রত) এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য অডিশন দেই। আমি সুযোগ পাই। বাবা পাননি। এরপরও বাবা খুশি, আমি রেণু চরিত্রে অভিনয় করতে পেরেছি বলে। আসলে আমি ভারতে শুটিং করার সময় দেখেছি অভিনয়শিল্পীরা কী রকম পরিশ্রম করেছেন। যে যার চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।’
এ সিনেমায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা শেখ লুৎফুর রহমানের চরিত্রে অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী। চরিত্রটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি শেখ লুৎফুর রহমানের মধ্যবয়সি চরিত্রে অভিনয় করেছি। চেষ্টা করেছি আমার সাধ্যমতো। শুভ অত্যন্ত ভালো অভিনয় করেছেন বঙ্গবন্ধুর মূল চরিত্রে। এ বায়োপিকে অভিনয় করে ইতিহাসের অংশ হতে পেরে আমি আজ ধন্য। আমার বিশ্বাস সবাই এ সিনেমাটি দেখে মুগ্ধ হবেন।’
এদিকে সিনেমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র খন্দকার মোশতাক। তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু। এ চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমত বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে কাজ করতে পারাটা আমার কাছে বিরাট সৌভাগ্যের। একটা ইতিহাসের অংশ হলাম। দ্বিতীয়ত শ্যাম বেনেগালের মতো একজন গুণী নির্মাতার পরিচালনায় কাজ করতে পারাটা একজন অভিনেতা হিসাবে বড় অর্জন। তৃতীয়ত এখানে আমি খন্দকার মোশতাকের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। বায়োপিকে অভিনয় করা কঠিন। মাথার ওপর অনেক চাপ থাকে। চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সিনেমাটি নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। এ সিনেমার মাধ্যমে আজকের জেনারেশন বঙ্গবন্ধুকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে।’
এছাড়া সিনেমার অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন- খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফুর রহমান), দিলারা জামান (সাহেরা খাতুন), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ কে ফজলুল হক), রাইসুল ইসলাম আসাদ (আবদুল হামিদ খান ভাসানী), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), তৌকীর আহমেদ (হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী), মানিক মিয়া (তুষার খান), সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া), মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান), একে আজাদ সেতু (জিয়াউর রহমান), এলিনা শাম্মী (বেগম খালেদা জিয়া), জায়েদ খান (টিক্কা খান), সাব্বির হোসেন (তোফায়েল আহমেদ), একজন প্রবীণ নারীর ভূমিকায় রোকেয়া প্রাচী এবং আরও অনেকে।
একনজরে
* ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ হলো শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত একটি বাংলাভাষার জীবনীসংক্রান্ত সিনেমা।
* সিনেমাটিতে আরিফিন শুভ বঙ্গবন্ধু নামে খ্যাত বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
* মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে এ সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর নির্মাণ ব্যয় ৮৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ মোট অর্থের ৫০ কোটি ও ভারত ৩৩ কোটি টাকা দিয়েছে।
* আরিফিন শুভ, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও জায়েদ খান এ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য মাত্র ১ টাকা পারিশ্রমিক হিসাবে নিয়েছেন।
* সিনেমাটির কাজ ১৮ মার্চ ২০২০ তথা বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর পরের দিন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কাজে দেরি হয়।
* এর শিল্প নির্দেশক ভারতের নীতিশ রায়। শ্যাম বেনেগালের মেয়ে চপিয়া বেনেগাল পোশাক পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন ভারতের অতুল তিওয়ারি ও শামা জাইদি। সিনেমায় একমাত্র গানটি লিখেছেন বাংলাদেশের গীতিকার জাহিদ আকবর।
