ঈদ ছাড়া নেই সাফল্য
ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে হতাশার ছাপ
রিয়েল তন্ময়
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রতি বছর ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফেরাতে সক্ষম হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে টানা কয়েক বছর ধরেই। বলা যায়, বড় তারকা ও বড় আয়োজনের সিনেমাগুলো ঈদের জন্যই তুলে রাখা হয়। তাই এসব সিনেমা নিয়ে শিল্পী-পরিচালক-প্রযোজক থেকে শুরু করে দর্শকদের আগ্রহও থাকে বেশি। কিন্তু ঈদের পরই শুরু হয় হতাশা। বছরের বাকি সময় প্রেক্ষাগৃহ থাকে দর্শকশূন্য।
রিয়েল তন্ময়
গত ঈদুল ফিতরেও দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছয়টি সিনেমা। এর মধ্যে ‘জ্বীন-৩’, ‘অন্তরাত্মা’ নামে দুটি সিনেমা সেভাবে সাড়া ফেলতে না পারলেও ‘বরবাদ’, ‘দাগি’, ‘জংলি’, ‘চক্কর ৩০২’ সিনেমাগুলো এখনো রয়েছে আলোচনায়। ইতোমধ্যে দেশের বাইরেও সিনেমাগুলো দাপট দেখাচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য আশার কথা। তবে চারদিকে যখন ঈদের সিনেমার জয়জয়কার ও আলোচনা তুঙ্গে, তখন হতাশার কথাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘ বছর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ঢাকাই সিনেমা। সিনেমার সোনালি অতীত আর ফিরবে কিনা তা-ও অজানা। এরপরও সারা বছর লোকসান গুনে মালিকরা স্বপ্ন নিয়েই এখনো প্রেক্ষাগৃহ চালু রেখেছেন। কিন্তু আদৌ খাদের কিনারে থাকা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উত্তরণ ঘটবে? উত্তরে অনেকেই বলছেন ‘না’। এর কারণ ব্যাখ্যা করে সিনেমাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘একমাত্র ঈদের সিনেমা দিয়ে কখনোই এ ইন্ডাস্ট্রি চলবে না। ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে হলে ঈদের বাইরেও বছরের অন্য সময়ও ভালো সিনেমা প্রয়োজন। আর ঈদের সিনেমা দিয়ে সারা বছর টানা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। ঈদের সিনেমা ঘিরে দর্শক সমাগম বাড়ে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটা জরুরি। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন ঈদের মতো বড় তারকা ও আয়োজনের সিনেমা ঈদ ছাড়া মুক্তি দেওয়া। তাহলেই দর্শক আগ্রহটা থাকবে। দেখা যায়, ঈদ ছাড়া যেসব সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, সেগুলো দর্শক টানতে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ, তাতে তারকাশিল্পীর উপস্থিতি কম, মানের দিকেও নেই নজর। এসব সিনেমা চালালে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।
এদিকে রোজার ঈদের পর এরপর এক মাস (চার শুক্রবার) অতিবাহিত হলেও মুক্তি পায়নি নতুন কোনো সিনেমা। কিন্তু আসন্ন কুরবানির ঈদের সিনেমা নিয়ে প্রস্তুতি এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। মুক্তির তালিকায় রয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’, শরিফুল রাজ-তাসনিয়া ফারিণ-মোশাররফ করিমের ‘ইনসাফ’, আদর আজাদ-পূজা চেরীর ‘টগর’, আরিফিন শুভ-মন্দীরা চক্রবর্তীর ‘নীলচক্র’ সিনেমাগুলো। এ থেকেও একটি বিষয় পরিষ্কার যে, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে এখন সবার নজর ঈদে। এখানে ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থকেই বড় করে দেখা হচ্ছে।
এর ফলে বছরে দুই ঈদ ছাড়া প্রেক্ষাগৃহ ভোগে দর্শক খরায়। এভাবে চলতে চলতে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা দেড় হাজার থেকে এখন পঞ্চাশের নিচে নেমে এসেছে। এর একমাত্র কারণ ভালো সিনেমার অভাব, এমনটাই দাবি প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের। সিনেমা না থাকায় অনেক প্রেক্ষাগৃহ আবার সারা বছর বন্ধ থাকে, শুধু ঈদে চালু হয়। এদিকে সিনেপ্লেক্সগুলোও নির্ভর করে বিদেশি সিনেমার ওপর।
ঈদ ছাড়া কেন বড় আয়োজনের সিনেমাগুলো মুক্তি দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা? উত্তর খুঁজতে কয়েকজন নির্মাতা ও প্রযোজকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বর্তমানে সিনেমায় দর্শক চাহিদা আছে এমন তারকার সংখ্যা মাত্র কয়েকজন। তবে ঈদ ছাড়া তাদের নিয়েও রিস্ক নেওয়া যায় না। বড় আয়োজনে সিনেমাগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রযোজকদের লগ্নি ফেরতের চিন্তাটাও মাথা রাখতে হয়। কারণ, ঈদ ছাড়া লগ্নি ফেরতের নিশ্চয়তা দিতে পারবে এমন শিল্পী এখন আর নেই বললেই চলে। ঈদের সিনেমা নিয়ে দর্শক আগ্রহ বেশি থাকে, তাই এ সময়টাকে বেছে নেন পরিচালক-প্রযোজকরা। এদিকে শিল্পীদের মধ্যেও অনেকেই রয়েছেন যারা ঈদের সিনেমাকে টার্গেটে রাখেন, নিজেদের কাটতি বাড়ানোর জন্য।
এদিকে ঢাকাই সিনেমার একমাত্র ব্যস্ত নায়ক শাকিব খান। যার সিনেমা এখন আর ঈদ ছাড়া মুক্তি পায় না। তিনিও ঈদনির্ভর নায়ক। তাকে নিয়ে নির্মাতা প্রযোজকরা আশাবাদী থাকেন। কিন্তু এ নায়কও ঈদ ছাড়া তেমন কোনো ভালো ফলাফল এনে দিতে পারেন না। উদাহরণস্বরূপ, গত বছরের শেষে মুক্তি পায় অনন্য মামুন পরিচালিত ও শাকিব খান অভিনীত সিনেমা ‘দরদ’। ঈদের বাইরে মুক্তি দিয়ে সিনেমাটিও সাফল্য দেখাতে পারেনি।
তবে বিষয়টি নিয়ে অনেকে দেশের শিল্পীদের দিকেও আঙুল তুলছেন। তারা বলছেন, আমাদের দেশে এখন শিল্পী অনেক থাকলেও, দর্শক চাহিদাসম্পন্ন শিল্পীর অভাব রয়েছে। এক সময় যেমন নায়ক-নায়িকার নামের ওপরই দর্শক প্রেক্ষাগৃহে হুমড়ি খেয়ে পড়তেন, এমন চিত্র এখন দেখা যায় না বললেই চলে। শিল্পীর নাম-ডাক যদি না হয়, তার প্রতি দর্শক আগ্রহ যদি না থাকে, তাহলে সিনেমা চালিয়েই বা কি লাভ। তাই সবাই ঈদকেই বেছে নেয়, কারণ এ সময়টায় মানুষ একটু সিনেমা দেখে। দেখা যায় লাভ না হলেও, অনেকেই মূল টাকাটা ঘরে তুলতে পারে। দিনশেষে প্রযোজক তার লগ্নির কথাই চিন্তা করবে এবং এটাই ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান বাস্তবতা।
