Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

বিশ্বমঞ্চে সমাদৃত হচ্ছে দেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা

স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার চর্চা বহুদিন ধরেই চলমান থাকলেও, এতে পেশাদার শিল্পী বা নির্মাতাদের আগ্রহ খুব একটা ছিল না। মূলত স্বাধীন নির্মাতারাই এসব বানাতেন। এতে আহামরি কোনো বাজেট থাকে না। কারণ, এসব সিনেমায় প্রযোজক মেলে না। কিন্তু স্বাধীন নির্মাতারা তাদের গল্প বলার ক্ষুধা থেকেই নিজ অর্থায়নে নির্মাণ করেন এসব সিনেমা। বাজেট নেই, তাই পেশাদার শিল্পীদেরও খুব একটা উপস্থিতি দেখা যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নতুন শিল্পীদের নিয়েই এ সিনেমাগুলো নির্মিত হয়। পেশাদার শিল্পীর কাছে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার কদর বেশি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে সিনেমার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে নির্মাতা থেকে শুরু করে শিল্পীদেরও। আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি এসব সিনেমায় এখন আগ্রহ বাড়ছে দর্শকদেরও। ওটিটি মাধ্যমগুলোতেও এখন প্রকাশ হচ্ছে এসব সিনেমা।

Icon

আনন্দনগর প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্ব সিনেমার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ উৎসব ‘কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। প্রতিবছরের মতো এবারও ১৩ মে থেকে শুরু হয়েছে উৎসবের ৭৮তম আসর। এবারের আসরে শর্টফিল্ম কম্পিটিশন বিভাগে জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা ‘আলী’। এ বিভাগে বাংলাদেশের কোনো সিনেমার সুযোগ পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যরে এ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আদনান আল রাজীব। শুধু এ সিনেমা নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন উৎসবে বাংলাদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাগুলো স্থান করে নিচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে আহসান স্মরণ পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘আকাশে’, আবীর ফেরদৌস মুখরের ‘সুব্রত সেনগুপ্ত’, মাহমুদুল হাসান আদনানের ‘দ্য স্কাই গেটস গ্লুমি অ্যাট নাইট’, মাহমুদ হাসানের ‘ইতিবৃত্ত কিংবা বাস্তবতার পুনরারম্ভ’, ফুয়াদুজ্জামান ফুয়াদের ‘শব্দের ভেতর ঘর’, ভিকি জাহেদের ‘একটি খোলা জানালা’সহ আরও কিছু প্রজেক্ট।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎসবে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা। এর মধ্যে একটি ‘সওদা’। নেপাল ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ষষ্ঠ আসরে অংশ নেয় এটি। ফকির বিপ্লব পরিচালিত এ সিনেমাটি শর্টফিল্ম বিভাগে সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছে। ২০২৪ সালে এটি কলকাতা রামধনু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় এবং সেখানেও দর্শকদের প্রশংসা কুড়ায়। এ ছাড়া এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে, পুরস্কারও জিতেছে। একই উৎসবে অংশ নিয়ে প্রশংসিত হয় আরও দুটি সিনেমা ‘অ্যা স্লেইল উইদাউট শেল’ ও ‘দ্য টেস্ট অব হানি’। এ ছাড়া গত বছরের শেষদিকে ইতালির তেরনি চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা শর্টফিল্মের পুরস্কার জিতেছে ‘দ্য টেস্ট অব হানি’। সুন্দরবনের বাঘ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও পৃথিবীর সবেচেয়ে বড় এ ম্যানগ্রোভ বনের বাসিন্দাদের নিয়ে এটি নির্মাণ করেছেন ফাবিহা মনির ও মোহাম্মদ রকিবুল হাসান। গত মাসেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব, ফ্রান্সের দশম টুলুজ ইন্ডিয়ান সিনেমা ফেস্টিভ্যাল এবং কানাডার ১৪তম সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ মনট্রিয়েলে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের শর্টফিল্ম ‘দাঁড়কাক’। এটি নির্মাণ করেছেন জায়েদ সিদ্দিকী। এ ছাড়া এটি আরও একাধিক আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। এদিকে ভেনিস ইন্টারকালচার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, বুদাপেস্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অনারেবল মেনশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে দুটি শর্টফিল্ম ‘ছুরত’ ও ‘আনটাং’। ১৮ মে ঢাকায় অবস্থিত জার্মান কালচারাল সেন্টারের আয়োজনেও সিনেমা দুটির প্রদর্শনী হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা গোলাম রাব্বানী। চলতি বছরেই ভারতের কালাকারি চলচ্চিত্র উৎসবে সাড়া ফেলে রনি তানভীরের ছোট ছবি ‘টুগেদার’। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার সোলাস্টা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছে নির্মাতা সাদেক সাব্বির পরিচালিত শর্টফিল্ম ‘দ্য লাস্ট ওয়ার্ড’ ও বুলগেরিয়ার গোল্ডেন ফেমি চলচ্চিত্র উৎসবের চতুর্থ আসরে নির্বাচিত হয়েছে কেএম সোহাগ রানা পরিচালিত ‘অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড’। এ ছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সাহিত্য উৎসব-২০২৫। সেখানেও চারটি শর্টফিল্মের প্রদর্শনী হয়। সেগুলোর মধ্যে ছিল ‘আই এম টাইম’ (পরিচালক মাহদি হাসান), ‘ট্রানজিট’ (আরিক আনাম খান), ‘জিন্নাহ ইজ ডেড’ (কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়), ‘স্যালভেশন অব ট্রি’ (ফুয়াদুজ্জামান ফুয়াদ)। বছর শুরুতেই অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২৩তম আসর। সেখানে বাংলাদেশসহ ৭৫টি দেশের ২২০টি সিনেমা ছিল। এর মধ্যে শর্টফিল্ম ছিল ১২৩টি। যার মধ্যে ৭১টি ছিল বাংলাদেশের।

দেশে মেইনস্ট্রিমে যেখানে দিন দিন হতাশায় ডুবাচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা, সেখানে স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাগুলো যেন আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলছে-এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎসবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা অংশ নিয়ে পুরস্কৃত হয়েছে। সুনাম বয়ে নিয়ে এসেছে দেশের জন্য। এটি বাংলাদেশ তথা দেশি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক। এ ধারা অব্যাহত থাকলে স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমায় পেশাদার শিল্পীদের উপস্থিতিও (আগে পেশাদারদের এ মাধ্যমে দেখা যেত না) আগামীতে দেখা যাবে বলে অনেকের বিশ্বাস। বিশেষজ্ঞদের মতে, পেশাদার শিল্পী ও নির্মাতারা স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণে এগিয়ে এলে আরও ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়াবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম