Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

তিন নায়িকার ফেরার সম্ভাবনা কতটুকু

ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমী, শাবনূর ও পূর্ণিমা। রুপালি পর্দায় এক সময় তাদের অভিনয় দেখতে দর্শক মুখিয়ে থাকতেন। অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা তারা ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আজ তারা পর্দা থেকে দূরে। দর্শকপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তাদের সিনেমায় খুব একটা দেখা যায় না। সিনেমায় অভিনয় ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণাও দেননি এ তিন নায়িকা। তবে কেন তারা দূরে? বিস্তারিত রয়েছে এ প্রতিবেদনে

Icon

আনন্দনগর প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমী। মডেলিং দিয়ে শোবিজে তার যাত্রা শুরু। ১৯৯৩ সালে সালমান শাহর বিপরীতে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় তার অভিষেক ঘটে। অভিষেকেই বাজিমাত করেন তিনি। এরপর তার ক্যারিয়ারে শুধুই যেন সাফল্যের গল্প। ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণ। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক হিট সিনেমার পাশাপাশি সিক্ত হন দর্শকদের ভালোবাসায়। অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তবে এখন তাকে অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায় না। সর্বশেষ ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সোনার চর’ নামে একটি সিনেমায় দেখা গেছে এ অভিনেত্রীকে। এদিকে প্রায় দুবছর তিনি বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তার সঙ্গে রয়েছেন মেয়ে ফাইজা ও মা। তবে কি এ অভিনেত্রী আর সিনেমায় ফিরবেন না? কেনই বা এতদিন বিদেশে রয়েছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলেও অভিনেত্রীকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা বলেননি তিনি। গণমাধ্যমের সঙ্গেও বেড়েছে তার দূরত্ব। তবে তার স্বামী অভিনেতা ওমর সানী রয়েছেন বাংলাদেশে। নিজের ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে তিনি ব্যস্ত। মৌসুমী প্রসঙ্গে জানতে হলে দ্বারস্থ হতে হয় সানীর। তিনি জানান, মৌসুমী সহসাই দেশে ফিরছেন না। মেয়ের পড়াশোনা ও শাশুড়ির অসুস্থতা মিলিয়ে এখন পরিবারকেই সময় দেওয়া জরুরি অভিনেত্রীর। সানী বলেন, ‘ও ভুলে যেতে চায় যে, সে মৌসুমী ছিল। এ কথাটা কিন্তু খুব কষ্টের। তার মতো একজন লেজেন্ড নিয়ে ভালো সিনেমা তৈরি করবে, এমন ভাবনা তো এখন কারও নেই। নতুনদের সৌজন্যতা বোধেও ঘাটতি আছে। তারা মৌসুমীর চেয়েও বড় তারকা হয়ে গেছেন। মূলত, আক্ষেপ ও অভিমানেই মৌসুমী সিনেমা থেকে দূরে আছেন। সে আর ফিরবে না এমন কথাও কষ্ট থেকেই বলেছে।’ সানীর কথাতেই স্পষ্ট মৌসুমী আর অভিনয়ে ফিরছেন না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন নিয়মিত গান করতে দেখা যাচ্ছে এ নায়িকাকে। তা ছাড়া আরও একটি কথা চাউর আছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করেছেন এ অভিনেত্রী। সেটি পেয়েছেন কি না, তা খোদ মৌসুমী কিংবা স্বামী ওমর সানী, কেউই স্পষ্ট করে বলেননি।

এদিকে দেশের আরেক জনপিয় নায়িকা শাবনূর দীর্ঘ বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন চিত্রনায়িকা শাবনূর। ‘চাঁদনী রাতে’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় পথচলা শুরু তার। এরপর শুধুই সাফল্যের ইতিহাস। বিশেষ করে সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন অনেক হিট সিনেমায়। সালমানপরবর্তী অন্য নায়কদের সঙ্গেও তিনি বেশ সফল। কিন্তু বর্তমানে সিনেমা থেকে এ নায়িকার দূরত্ব অনেক বেশি। কারণ, তিনি দেশেই থাকেন না। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ‘পাগল মানুষ’ নামে একটি সিনেমায় দেখা গিয়েছিল তাকে। এরপর আর পর্দায় দেখা মেলেনি। তবে ২০২৩ সালে দেশে ফিরে দুটি সিনেমার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। আরাফাত হোসাইন নামে এক নাট্যনির্মাতার হাত ধরে ‘রঙ্গনা’ ও ‘এখনো ভালোবাসি’ নামে দুটি সিনেমা করার কথা ছিল তার। ঘোষণা মতে, ‘রঙ্গনা’ নামের সিনেমাটির শুটিংও করেছিলেন কয়েক দিন। এরপর বন্ধ হয়ে যায় এর কাজ। মিডিয়ায় চাউর হয়, এ সিনেমাটি আর আলোর মুখ দেখবে না। ফলে শাবনূরের ফেরাটা যেন আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবে এসব বিষয়ে অভিনেত্রী জানান, তিনি সিনেমাটি ছাড়ছেন না। মিডিয়ায় চাউর হওয়া খবর ভিত্তিহীন। সময় সুযোগ করে আবারও এর কাজে অংশ নেবেন। এ ছাড়া নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর ‘মাতাল হাওয়া’ নামেও একটি সিনেমা করার কথা শোনা গিয়েছিল। দেড় বছর পার হয়ে গেলেও সিনেমা তিনটির আর কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। এদিকে ২০২৩ সালে নতুন সিনেমার ঘোষণার সময় শাবনূর বলেছিলেন, তার কোনো তাড়াহুড়া নেই। সময় লাগলেও তিনি একটি ভালো কাজ উপহার দিতে চান। নতুন নির্মাতার হাত ধরে শাবনূর কামব্যাক করছেন, সেটি কতটা ভালো হবে তার ক্যারিয়ারের জন্য এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কামব্যাক বলে কোনো কিছু নেই। শিল্পীদের কখনো মরণ হয় না। শিল্পীরা সারা জীবন বেঁচে থাকেন তার কর্মে। তাই আমার ফেরাকে কামব্যাক বলতে চাই না। আর পরিচালক নতুন এমনটাও বলতে চাই না। কারণ তিনি শাবনূরকে তার মতো সম্মান দিয়েই পর্দায় আনবেন। নয়তো সিনেমাটি করব না।’ এদিকে ঘোষণার পর থেকেই অপেক্ষায় রয়েছেন শাবনূরভক্তরা। প্রিয় নায়িকার ফেরার খবরে স্বস্তি ফিরেছিল সিনেমাপ্রেমীদের মনে। কিন্তু আদৌ কি শাবনূর ফিরবেন? সংশয় থেকেই গেল।

জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমী ও শাবনূরের পর ঢাকাই সিনেমায় আলোচিত নায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। অনেক আলোচিত ও হিট সিনেমা রয়েছে তার ক্যারিয়ারে। নব্বই দশকের শেষ প্রান্তে সিনেমায় অভিষেক হলেও তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়েছে দুই প্রজন্মজুড়ে। রূপ ও অভিনয়ের মেলবন্ধনে দেড় যুগ পরও সমানভাবে আলোচিত তিনি। বর্তমানে নিয়মিত সিনেমার অভিনয়ে না থাকলেও শোবিজে তার উপস্থিতি বরাবরই নজরকাড়া। মাঝে কিছু নাটক ও ওয়েব কনটেন্টে তাকে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সিনেমার দর্শকপ্রিয় এ নায়িকা কেন সিনেমা থেকে দূরে? এর কোনো কারণ স্পষ্ট করেননি এ অভিনেত্রী। তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছে ‘আহারে জীবন’ নামে একটি সিনেমায়। যেটি গত বছরের ঈদে মুক্তি পায়। ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয় এটি। এরপর নতুন আর কোনো সিনেমায় যুক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে এ অভিনেত্রীর আরও দুটি সিনেমা। নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল পরিচালিত ‘গাঙচিল’ ও ‘জ্যাম’ সিনেমা দুটির কাজ শুরু করেছিলেন ২০১৮ সালে, কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে থমকে আছে এর নির্মাণকাজ। আদৌ শেষ হবে কিনা এ নিয়েও রয়েছে সংশয়। নির্মাতাও এ নিয়ে চুপ। কারণ, দুটি সিনেমার মধ্যে ‘গাঙচিল’ ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপন্যাস নিয়ে নির্মিত হচ্ছে। নায়ক হচ্ছেন ফ্যাসিস্টের আরেক দোসর ফেরদৌস। অন্যদিকে ‘জ্যাম’ সিনেমায় পূর্ণিমার বিপরীতে রয়েছেন আরেফিন শুভ। দুই নায়কই এখন রয়েছেন আড়ালে। ৫ আগস্টের পর থেকেই ফেরদৌস পলাতক, এদিকে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ শিল্পী হওয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন শুভ। পাচ্ছেন না সিনেমার কাজ। দুই নায়কের জন্যই হয়তো আর আলোর মুখ দেখতে পাবে না পূর্ণিমা অভিনীত সিনেমা দুটি। তাহলে কি এ অভিনেত্রীর নতুন সিনেমা দর্শক আর পাবে না? এ প্রশ্ন থেকেই গেল। এদিকে টিভির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক লাইভ অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় নিয়মিত পূর্ণিমা। এ ছাড়া বিভিন্ন রিয়েলিটি শোয়ের বিচারকের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। বর্তমানে দেশসেরা রন্ধনশিল্পীদের রান্নায় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই, কুকিং রিয়েলিটি শোয়ের প্রধান বিচারকের একজনের দায়িত্ব পালন করছেন এ অভিনেত্রী।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম