ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েও সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেছিলেন ক্যাথরিন
শাহনাজ হেনা
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ক্যাথরিন হেপবার্ন, যাকে একসময় হলিউডে বক্স অফিসের হিটমেশিন বলা হতো। কিন্তু একসময় হারিয়ে গিয়েছেন, আবার ফিরেও এসেছেন আগের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিতে। কীভাবে? হেপবার্ন হলিউডে এমন এক আগুন নিয়ে পা রেখেছিলেন যা উপেক্ষা করা কারও পক্ষেই সম্ভব ছিল না। মূলত উলটো পথের যাত্রী ছিলেন তিনি। ট্রেন্ড অনুসরণ করার পরিবর্তে তিনি নিজস্ব গতিতে নিজের পথ তৈরি করেছিলেন। ‘অ্যা বিল অফ ডিভোর্সমেন্ট’ সিনেমায় তার গ্ল্যামারাস উপস্থিতি দর্শকের হৃদয়ে রীতিমতো আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ‘মর্নিং গ্লোরি’ এবং ‘লিটল উইমেন’র মতো সিনেমাগুলো কেবল স্পটলাইটে তার স্থানকে আরও শক্ত করে তোলে। কিন্তু তারকাখ্যাতি, বিশেষ করে হলিউডের স্বর্ণযুগে দুঃখজনকভাবে তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। ১৯৩০-এর দশকের শেষের দিকে এটি ঘটেছিল।
শিল্প দ্রুত পরিবর্তনশীল। বিষয়টি বুঝতে ক্যাথরিনের একটু বেশি সময় লেগেছিল। মূলত তিনি পরিবর্তিত হাওয়া সময়মতো গায়ে লাগাতে পারেননি। তাই একটা সময় পর তার সিনেমা দর্শকদের আকর্ষণ করছিল না। তার সিনেমা, যেমন ‘সিলভিয়া স্কারলেট’, ‘মেরি অফ স্কটল্যান্ড’ এবং ‘দ্য লিটল মিনিস্টার’ বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ‘ব্রিংগিং আপ বেবি’, যা এখনকার সিনেমার অন্যতম সেরা স্ক্রুবল কমেডি হিসাবে সমাদৃত, মুক্তির সময় সেটি ব্যর্থ হয়েছে। সমালোচকরা সবসময় হেপবার্নকে পছন্দ করতেন, কিন্তু দর্শকরা টিকিট কেনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ফলে তখন নির্মাতারাও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। হলিউড যখন তাকে তার সবচেয়ে নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে চিহ্নিত করেছিল, তার নামের পাশে বিশেষণ দিয়েছিল ‘বক্স অফিস বিষ’। এ তিনটি শব্দ কেবল তার জন্য কষ্টদায়ক ছিল না, এটি তার ক্যারিয়ারকে সম্পূর্ণরূপে শেষ করে দেওয়ার হুমকি ছিল।
এতকিছুর পরও ক্যাথরিন হেপবার্ন হাল ছাড়েননি। তিনি সিনেমা থেকে সরে এসে থিয়েটারে ফিরে যান, যেখানে তিনি ‘দ্য ফিলাডেলফিয়া স্টোরি’-তে ট্রেসি লর্ডের চরিত্রে নতুন করে পা রাখেন। মঞ্চে তিনি অসংখ্যবার এ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। থিয়েটার তাকে উৎসাহের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে, সিনেমা থেকে মঞ্চে গিয়ে হেপবার্ন বুঝতে পেরেছিলেন, এটি পিছিয়ে যাওয়া নয়, বরং একটি পুনর্গঠন। তিনি জানতেন, নাটকটির শক্তি আছে। এর মাধ্যমেই তিনি এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখতে পেয়েছিলেন। সিনেমা থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর হাওয়ার্ড হিউজের সাহায্যে তার প্রত্যাবর্তনের পথ খুঁজে পেয়েছেন।
‘দ্য ফিলাডেলফিয়া স্টোরি, ফিল এবং হাওয়ার্ড ছাড়া আমার জীবন অনেক আলাদা হতো। এটি চলতে থাকত, কিন্তু সম্ভবত আমার ক্যারিয়ার হতো না’-হেপবার্ন একবার ‘আই নো হোয়্যার আই’ গোয়িং : ক্যাথরিন হেপবার্ন, আ পার্সোনাল বায়োগ্রাফি’তে প্রকাশ করেছিলেন। যখন দ্য ফিলাডেলফিয়া স্টোরি পর্দায় আসে, তখন দর্শক দেখতে পেয়েছেন, হেপবার্ন, ক্যারি গ্রান্ট এবং জেমস স্টুয়ার্টের মনোমুগ্ধকর এবং বুদ্ধিমত্তার ত্রিভুজ কীভাবে একটি সিনেমা জীবন্ত হয়ে ওঠে। সিনেমাটি হেপবার্নের জন্য একটি বিশাল সাফল্য ছিল। কম বাজেটে নির্মিত এ সিনেমাটি লাখ লাখ আয় করেছিল এবং অস্কারে স্থান পেয়েছিল।
এ সিনেমায় কিন্তু হেপবার্ন অভিনয়ের জন্য আলাদা কোনো টেকনিক অবলম্বন করেননি। বরং নিয়ন্ত্রিত এবং আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, যেমনটি তিনি সর্বদা ছিলেন। এই একটি সিনেমা তার ক্যারিয়ারকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। প্রত্যাবর্তনের পথ সহজ করে দিয়েছিল। আর সেটা হয়েছে মঞ্চের কল্যাণেই। হলিউড থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মাধ্যম পরিবর্তন করেছেন তিনি, অভিনয় ছেড়ে দেননি। মঞ্চে গিয়ে নিজেকে মনে করেননি অনেক বড় তারকা। সেটার ফলাফলও পেয়েছেন। এখন বিশ্বের আইকনিক তারকাদের নামের তালিকায় ক্যাথরিন হেপবার্নের নামও জ্বলজ্বল করে।
