Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

কুরবানির ঈদের নাটক নির্মাণে ভাটা

একটা সময় শুধু টেলিভিশনের জন্য নাটক বা টেলিফিল্ম নির্মাণ হতো। তবে এখন সময় বদলেছে। টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এ প্ল্যাটফর্মের জন্যই এখন বেশি নাটক নির্মিত হয়। ফলে শিল্পীরাও এ মাধ্যমের দিকেই ঝুঁকছেন। লগ্নিকারকরাও অনলাইনেই বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু আসন্ন কুরবানির ঈদের নাটকে এবার দেখা দিয়েছে খরা। গত বছরের তুলনায় এবার নাটক নির্মিত হচ্ছে কম। অন্যান্য সময় ঈদের নাটক নিয়ে যে আলোচনা তৈরি হয়, এবার তা যেন অনেকাংশে ক্ষীণ।

Icon

আনন্দনগর প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুরবানির ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই। এ ঈদকে কেন্দ্র করেও শিল্পীদের ব্যস্ততা রয়েছে। নির্মিত হচ্ছে নতুন সব নাটক ও ওয়েবফিল্ম। তবে এবার ঈদ নাটক নিয়ে নেই তেমন আলোচনা। গত ঈদেও শতাধিক নাটক নির্মিত হয়েছিল। তবে সেগুলো সময়মতো প্রকাশ করতে হিমশিম খেতে হয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর। কারণ, অতিরিক্ত বাজেটের নাটক নির্মাণ করেও স্পন্সর জটিলতায় সেগুলো অবশেষে আর প্রকাশ করেননি প্রযোজনা সংস্থা। এ ছাড়া গত ঈদের তুলনায় আসন্ন কুরবানির ঈদে নাটক নির্মিত হয়েছে তুলনামূলক কম। যেগুলো নির্মিত হয়েছে সেগুলো নিয়েও নেই কোনো প্রচার-প্রচারণা। গত ঈদের উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে, সে সময়ও অনেক নাটক প্রচার হয়েছিল, কিন্তু আলোচনা ছিল না। কারণ, আলোচনায় ছিল ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো। সিনেমার ডামাডোলে নাটকের আওয়াজ ছিল অনেকটাই ফিকে। এবারও তাই ঘটতে চলেছে। কুরবানির ঈদে মুক্তির মিছিলে রয়েছে প্রায় ডজনখানেক সিনেমা। বলা যায়, আলোচনার কেন্দ্রে এখন সিনেমা।

গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন পরবর্তী বিনোদন জগৎ অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিল। এরপর সেটি ধীরে ধীরে আবারও সতেজ হলেও, সম্প্রতি আওয়ামীঘনিষ্ঠ শিল্পীদের ওপর মামলা হামলার ঘটনায় শোবিজ অঙ্গনে আবারও একটি স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগকারীরাও পিছিয়ে যাচ্ছেন নাটক থেকে। শিল্পীরাও একটি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। যার কারণে এবার নাটকে নির্মাণ অনেকাংশে কমেছে। অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা তারিক আনাম খান বলেন, ‘কিছুটা স্থবিরতা এসেছে এটি সত্য। কারণ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে গেছে। শুধু যে নাটক নির্মাণ কমেছে এমনটাও নয়, আমি মনে করি বিনোদনের সব সেক্টরের কাজ কমে গেছে। এখনো কাজে স্থিতিশীল পরিবেশ আসেনি। তবে আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা পজেটিভ চিন্তাটাই করতে চাই।’ এ প্রসঙ্গে এক নাট্য প্রযোজক বলছেন, ‘গত কয়েকমাসে প্রায় ২০ ভাগ কাজ কমে গেছে। এটার বড় কারণ বাণিজ্যিক অবস্থার অবনতি। আমাদের ইউটিউব কনটেন্টে বিজ্ঞাপনের পরিমাণ কমে গেছে। এ কারণে অনেকেই নাটকে বিনিয়োগ করা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন।’

একটা সময় ঈদ উৎসবে প্রায় পাঁচশর অধিক নাটক নির্মিত হতো। এগুলোতে কাজ করতেন জনপ্রিয় সব শিল্পী। সেসব নাটক দেখতে দর্শকদের আগ্রহেরও কমতি ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন নাটকে জায়গা করে নিয়েছেন নতুনরা। দর্শকপ্রিয়তা তাদেরও রয়েছে, তবুও নাটকে যেন নিখোঁজ সেই প্রাণ। ফলে কমছে টিভি নাটকের দর্শক। অনলাইন মাধ্যমে ভিউয়ের দৌড়ে নাটকগুলো এগিয়ে থাকলেও, মানের দিক বিবেচনায় পিছিয়ে পড়েছে। একটা সময় নাটকে পারিবারিক গল্পের প্রাধান্য থাকলেও, এখন প্রেম-ভালোবাসার গল্পে মোড়ানো বেশিরভাগ নাটক। বর্তমানে নাটকে ব্যস্ত সময় পার করছেন মোশাররফ করিম, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, মুশফিক ফারহান, তাসনিয়া ফারিণ, ফারহান আহমেদ জোভান, নিলয় আলমগীর, তৌসিফ মাহবুব, তানজিন তিশা, তানজিম সাইয়ারা তটিনী, কেয়া পায়েল, সাদিয়া আয়মান, অহনা, আরশ খান, খায়রুল বাসার, ইয়াশ রোহান, সামিরা খান মাহি, তানিয়া বৃষ্টি, যাহের আলভী, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, নাজনীন নিহাসহ অনেকেই। গত বছরের ন্যায় এবারও এসব অভিনয়শিল্পীদের একাধিক নাটক প্রকাশ হবে।

তবে তাদের নিয়েও রয়েছে সমালোচনা। অনেকের দাবি, এদের মধ্যে কেউ কেউ সিন্ডিকেট মেইনটেইন করে কাজ করেন। তাদের নির্ধারিত শিল্পীর বাইরে অন্যরা কাজের সুযোগ পান না। ফলে, ইচ্ছা থাকলেও নির্মাতা কিংবা প্রযোজকরা স্বাধীনভাবে শিল্পী নিয়ে কাজ করতে পারেন না। যদিও এ সিন্ডিকেটের বিষয়ে বর্তমান প্রজন্মের কোনো শিল্পীই মুখ খোলেননি। বরং তাদের মতে, নির্মাতারা চাইছেন বলেই তারা কাজ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাতা সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে বলেন, ‘নাটক কমে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ এ সিন্ডিকেট। ধরুন, আমি জনপ্রিয় একজন নায়ককে নিলাম। এখন আমাকে সেই নায়কের পছন্দসই নায়িকা নিতে হবে। নাহলে সে কাজ করবে না। আমার ক্যামেরাম্যান বা ইউনিট নিতে গেলেও অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী তাদের পছন্দের লোকজনদের নিতে বাধ্য করেন। এতে করে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি না। একটি চরিত্র যাকে চিন্তা করে ফুটিয়ে তুলতে চাই, তাকে নিয়ে কাজ করতে পারি না। এটা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। কারণ, ভাইরালের নামে একই মুখ দেখতে দেখতে দর্শকরাও ক্লান্ত বলে আমার কাছে মনে হয়।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম