Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

রিভিউ

সমাজ সচেতনতায় অনবদ্য ইত্যাদি

Icon

আনন্দনগর প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইত্যাদি সব সময়ই অনন্য, অনবদ্য। এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে এবার বলার বিশেষ একটি কারণ আছে। ঝিনাইদহে যখন এবারের ইত্যাদির শুটিং করা হয়, তখনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় যে, বৃষ্টির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে শুটিং। এমন পরিস্থিতিতেও কিন্তু অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অনুষ্ঠানটির শুটিং সম্পন্ন করেছেন এর সুনিপুণ কারিগর হানিফ সংকেত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও যে অনুষ্ঠানটি এতটা মোহনীয় রূপে আবির্ভূত হবে তা ভাবাই যায়নি। কীভাবে সম্ভব? প্রচারে পর হানিফ সংকেত বলেছেন, ‘মানুষের ভালোবাসা আর ইত্যাদি টিমের কমিটমেন্ট- এই দুটোর মিশেলের কাছে বৃষ্টিও হার মেনেছে। ইত্যাদির শুটিং হয়েছে ভোররাত পর্যন্ত। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে এতটা দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেছেন দর্শকরা। এটাই ইত্যাদির প্রতি তাদের ভালোবাসার নিদর্শন।

এবারের ইত্যাদির ধারণের স্থান নির্বাচনটাও হয়েছে প্রাসঙ্গিক। আমাদের দেশে এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃষি খামার রয়েছে, সেটাই জানা ছিল না অনেকের। অথচ বাংলাদেশি হিসাবে এটা আমাদের অনেক বড় পাওয়া। এশিয়ার বৃহত্তম বটগাছও এখানে। মরমি কবি পাগলা কানাই, প্রখ্যাত কবি গোলাম মোস্তফা, গণিতবিদ অধ্যাপক কালীপদ বসু, বিপ্লবী বাঘা যতীন ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের জন্মস্থানও এ ঝিনাইদহ। এমন আর অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছে এবারের ইত্যাদি।

ইত্যাদি শুধু সমস্যা তুলেই ধরে না, সমাধানের পথও বলে দেয় এবং কিছু ক্ষেত্রে সমাধানও করে দেয়। একটি টিভি অনুষ্ঠান হিসাবে এ রকম নজির আর দেখা যায়নি। সামাজিক কাজে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা হিসাবে চেক প্রদান ছাড়াও সাতক্ষীরার গাবুরা ইউনিয়নে শতাধিক পানির ট্যাংক সরবরাহ, পাঠাগার করে দেওয়া, হাওর অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের সমস্যার সমাধানও করেছে ইত্যাদি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে স্থাপিত হলো মানবিক কাজের অনন্য দৃষ্টান্ত। উপজেলার তালবাড়িয়া ত্রিপুরা পাড়ায় সহস্রাধিক মানুষ ভুগছে পানির তীব্র সংকটে। কত জনপ্রতিনিধি আর কত আশ্বাস এলো গেল, কত প্রতিবেদন আর কত সম্ভাবনা এলো গেল, কিন্তু তাদের ভাগ্যের আর পরিবর্তন হয়নি। তবে এবার সে সমস্যার সমাধান করে দিল ইত্যাদি। একটি গভীর নলকূপ করার জন্য চার লাখ টাকার চেক সংশ্লিষ্ট ইউএনওর হাতে তুলে দেন ইত্যাদির কারিগর কিংবদন্তি হানিফ সংকেত। শুধু আন্তরিকতাই যে অনেক সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে নিমিষেই, তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ ইত্যাদি।

ইত্যাদি যেমন নিজে সরাসরি ভালো কাজ করেছে, তেমনি অন্যের ভালো কাজও তুলে ধরেছে বহুবার। এবার তেমনই এক পরোপকারী মানুষ জহির রায়হানের কথা উঠে এসেছে। পেশায় রংমিস্ত্রি, কিন্তু নেশায় মানবদরদী। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের এ মানুষটি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে রাস্তার পাশে গাছ লাগানো, ক্লান্ত মানুষের জন্য বেঞ্চ তৈরি, মাঠে বিশ্রামাগার, রাস্তার পাশে নলকূপ, গ্রন্থাগার তৈরিসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড করেছেন। আর এসব তিনি করছেন তার মেহনতের ঘামে উপার্জিত কষ্টের টাকা থেকে। আমাদের সমাজের জন্য এটা এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে এ প্রতিবেদন যে ভূমিকা রাখবে তাতে সন্দেহ নেই। সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এবার কয়েকটি নাট্যাংশ ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একটি নাট্যাংশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বর্তমানে ফেসবুক নির্ভরতার হালচাল তুলে ধরা হলো বেশ মুনশিয়ানায়। নদ-নদী, পাহাড়, বনভূমিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ে আমাদের সবার সচেতনতার অভাবকে দায়ী করা হলো আরেকটি নাট্যাংশে। আবার, দালালসংক্রান্ত একটি নাট্যাংশে বাস্তব কিছু বিষয় উঠে এসেছে, যা একদিকে যেমন রসাত্মক, অন্যদিকে কঠোর বিদ্রুপাত্মকও বটে। এবার ইত্যাদিতে বাদ যায়নি সাম্প্রতিক বিভিন্ন আন্দোলনের বিষয়টিও। রাস্তা দখল করার ফলে যে জনভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়টিও উঠে এসেছে চিঠিপত্র পর্বে। বরাবরের মতো দর্শকপর্ব ও বিদেশি প্রতিবেদনসহ পাগলা কানাইয়ের গান, ঝিনাইদহ নিয়ে গান ও নৃত্যও ছিল প্রশংসনীয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম