আজও আইয়ুব বাচ্চুকে খোঁজেন রাফসান
জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’ গানটি গেয়ে রাতারাতি পরিচিত পান ক্ষুদে শিল্পী রাফসানুল ইসলাম। আজ থেকে সাত বছর আগে হঠাৎ করেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় এ ক্ষুদে শিল্পীর গান। যার কণ্ঠে আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় এ গানটি পছন্দ করেছেন গানপ্রেমী সব শ্রোতা-দর্শক। শিশুশিল্পীর কণ্ঠে এ গানটি শুনে শুনে মুগ্ধতা ছড়িয়ে জনপ্রিয়তার পারদে রীতিমতো বিস্ময় বালকে পরিণত হয় সে। এখন কেমন আছেন রাফসান, বিস্তারিত রয়েছে এ প্রতিবেদনে
রিয়েল তন্ময়
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাত বছর আগের কথা। কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু তখন জীবিত। সে সময়ই নেট দুনিয়ায় রাফসানের আগমন। কণ্ঠে তার আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় গান। চারদিকে শোরগোল, কে এই ছেলে! আইয়ুব বাচ্চুর গান কণ্ঠে তোলা অতো সহজ নয়। কিন্তু ছেলেটি সেটা তুলে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অনেকেই তখন জানতেন না, এই শিশুশিল্পীর পরিচয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ তাকে ‘জুনিয়র আইয়ুব বাচ্চু’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। সেদিনের ‘জুনিয়র আইয়ুব বাচ্চু’ উপাধি পাওয়া ছেলেটি এখন পরিণত একজন গায়ক। গড়েছেন নিজের ব্যান্ড ‘আর্ট ইউ’। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর যাত্রা শুরু করেন নিজের দল নিয়ে। তার স্বপ্ন একজন বড় ব্যান্ড তারকা হওয়ার। সেই লক্ষ্যেই ব্যান্ড নিয়ে কাজ করছেন। এরই মধ্যে করেছেন মৌলিক কয়েকটি গান। এ ছাড়া দল নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন। সদ্য এইচএসসি পাশ করা রাফসান পড়ালেখার পাশাপাশি গান চালিয়ে যেতে চান। তবে পেশা হিসাবে নয়, শখের বশে।
নেত্রকোনা শহরের ছেলে রাফসানুল ইসলামের গানের শুরুটা চার বছর বয়স থেকেই। নেত্রকোনায় ‘শিকড়’ নামে একটি সংগঠনেই তার গানের হাতেখড়ি। ছোট থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান করতেন। আইয়ুব বাচ্চুর ভক্ত তখন থেকেই। এখানে সেখানে কণ্ঠে তুলতেন বাচ্চুর সব কঠিন গান! এসব গানই তাকে বানিয়েছে আজকের তারকা। ২০১৮ সালে তার গাওয়া গানটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই রাফসানের গায়ক হওয়ার স্বপ্ন আরও বড় হতে থাকে। প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগও পেয়ে যান তিনি। ২০১৮ সালেই ডাক পান স্বপ্নের গায়ক আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে দেখা করার। তবে তার সান্নিধ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি রাফসানের জন্য। মাত্র একবার দেখা করেছেন, এরপর আর সে সুযোগ মেলেনি তার। দেখা হওয়ার কয়েক মাস পরই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন আইয়ুব বাচ্চু। কিন্তু এ তারকার দেওয়া উপদেশ এবং পরামর্শ আজও মেনে চলেন রাফসান। গুরুর দেওয়া কথা মেনেই হাতে তোলেন গিটার। যা আজও কাঁধে করেই গুরুর সন্ধানে ঘুরে বেড়ান সেই বিস্ময় বালক। তার আফসোস, গুরুর প্রয়াণে তাকে শেষ দেখার সুযোগটাও পাননি। পরীক্ষা থাকায় যেতে পারেননি দেখতে। যা তাকে আজও পীড়া দেয়। এ আফসোস তার সারা জীবন থাকবে, এমনটাও জানান এ শিল্পী।
২০১৮ সালেই রাফসান যোগ দেন ‘ধোঁয়া’ নামের একটি ব্যান্ডের সঙ্গে। সেখানেই গানের চর্চা চালিয়ে যেতে থাকেন। এক সময় ফোক গান করলেও তিনি এখন পুরোদস্তুর একজন ব্যান্ডসংগীত শিল্পী। কণ্ঠে তুলে নেন আইয়ুব বাচ্চুর ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’, ‘ঘুমন্ত শহরে’সহ আরও অনেক গান। তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয় শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। তার গান আমার খুব পছন্দ, গাইতেও ভালো লাগে।’
তবে গুরু আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে দেখা করার স্মৃতি আজও তার কাছে রঙিন। প্রিয় তারকার প্রয়াণ প্রতিনিয়ত কাঁদায় রাফসানকে। বাচ্চুর সঙ্গে দেখা হওয়ার সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করে রাফসান বলেন, “হঠাৎ করেই গুরুর ‘হাসতে দেখো’ গানটি গেয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করি। কিন্তু এ গানটাই এত ভাইরাল হয়ে যাবে, সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। এরপর একটি টেলিভিশন থেকে আমাকে ঢাকায় যেতে বলা হয়। ঢাকায় গুরুর স্টুডিওতে যাই। সেখানেই আমাদের দেখা হয়।” তিনি আরও বলেন, ‘গুরুর সঙ্গে দেখা করাটা ছিল আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ। আমি দারুণ খুশি। তিনি আমাকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করেছেন। একটা সানগ্লাস উপহার দিয়েছেন। একসঙ্গে গানও করেছি।’
গানের জন্য ছোটবেলা থেকেই পরিবার থেকে ভীষণ উৎসাহ পান রাফসান। তিনি বলেন, ‘পরিবার শুরু থেকেই আমাকে উৎসাহ দেয়, আমি যেন ভালো গান করি। তাই এখনো গান চালিয়ে যেতে পারছি। এখনো নিয়মিত আমার দল নিয়ে প্র্যাকটিসের পাশাপাশি শো করছি। এ ছাড়া নতুন গান প্রকাশের ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।’ রাফসানের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ব্যান্ড ‘নগর বাউল’সহ বাংলাদেশের একাধিক জনপ্রিয় ব্যান্ড। ইচ্ছা আছে একদিন এসব ব্যান্ডের সঙ্গে একমঞ্চে পারফর্ম করবেন তিনি। এ ছাড়া রাফসান জানিয়েছেন, স্পন্সর বা কোনো লেভেল কোম্পানির সহযোগিতা পেলে আইয়ুব বাচ্চুর গান নিয়ে নতুন করে অ্যালবাম প্রকাশ করতে চান তিনি।
