|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। ঢাকা-কলকাতা দুই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই সমানতালে কাজ করছেন। পাশাপাশি ওটিটিতেও রয়েছে তার বিচরণ। এবার ঈদে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত দুটি সিনেমা। দীর্ঘ সময় পর ঈদ উৎসবে নতুন সিনেমা নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন এ অভিনেত্রী। ‘তাণ্ডব’ ও ‘উৎসব’ সিনেমা দুটি নিয়ে ঈদের দিন থেকেই প্রেক্ষাগৃহে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। দর্শকদের সঙ্গে সিনেমা দেখার পাশাপাশি প্রতিক্রিয়া জানার ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী জয়া। জানিয়েছেন, মুক্তির প্রথম দিন থেকে দুটি সিনেমাই বেশ ভালো যাচ্ছে। তাণ্ডব সিনেমা প্রসঙ্গে জয়া বলেন, ‘আমি নিজেই দর্শকের সঙ্গে সিনেমাটি উপভোগ করেছি। একজন দর্শক হিসাবে বলতে পারি, পুরো টাকাটা উসুল! সিনেমা হলে যখন চারদিক থেকে শিস ও হাততালির শব্দ উঠছিল, তখনই বুঝে গেছি, এটি মানুষের মনে জায়গা করে নিচ্ছে। এর মূল শক্তি তার গল্প।’ উৎসব প্রসঙ্গে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘এটি দেখার পর দর্শক নিজেরাই বলছেন এ সিনেমাটি অনেকদিন মানুষের মনে থাকবে। এতে যেসব শিল্পী কাজ করেছেন, তাদের সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। এতগুলো ভিন্নধর্মী শিল্পীকে এক ফ্রেমে আনা গেছে কেবল পরিচালকের মুনশিয়ানায়। আমার বিশ্বাস, সিনেমাটির যাত্রা হবে দীর্ঘ।’ ঈদের দুই সিনেমায় জয়াকে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে, ভিন্ন ভিন্ন আবহে। অথচ, প্রতিটি চরিত্রেই যেন তার এক নিজস্ব ছাপ, এক অনবদ্য সত্তা।
এদিকে গত বছরের শেষে জয়া অভিনীত ‘নকশী কাঁথার জমিন’ নামে একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। তার অভিনয় ছাড়া সিনেমাটি খুব একটা আলোচনায় আসতে পারেনি। বলা যায়, ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ এটি। আর ব্যর্থতা দিয়ে গত বছরের ইতি টানেন জয়া। তবে চলতি বছরটা যেন তিনি পণ করেই মাঠে নেমেছেন। একের পর এক কাজ দিয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন। বছরের শুরুতেই জয়া দেখা দেন ‘বাগান বিলাস’ নামে একটি মিউজিক ভিডিওর মধ্য দিয়ে। ২৭ জানুয়ারি এটি মুক্তি পায়। যা অভিনেত্রীর কাছে একটি বিশেষ কাজ বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। মুক্তির পর গানটি বেশ সাড়াও ফেলে। শুধু তাই নয়, এটিই ছিল এ অভিনেত্রীর মডেল হিসাবে কোনো গানে প্রথমবার উপস্থিতি। এ ছাড়া চলতি বছর দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও প্রথম অভিষেক হয় জয়ার। গত রোজার ঈদ উপলক্ষ্যে হইচইতে মুক্তি পায় তার অভিনীত সিরিজ ‘জিম্মি’। এটি নির্মাণ করেন আশফাক নিপুণ।
এদিকে চলতি বছরে ভারতের ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা ২০২৫’-এর মনোনয়ন তালিকায়ও স্থান পেয়েছিলেন জয়া আহসান। যদিও ফিল্মফেয়ারের মঞ্চে জয়া আহসানের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে টানা সাতবার মনোনয়নের পাশাপাশি তিনি পেয়েছেন চারটি পুরস্কার। এ বছর সেরা কিংবা পার্শ্ব-অভিনেত্রীর পুরস্কার জয়ার দখলে না এলেও, তিনি পেয়েছেন ‘ট্র্যাডিশনাল কুইন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার। কলকাতায় প্রথমবার আয়োজিত ‘ফিল্মফেয়ার গ্ল্যামার অ্যান্ড স্টাইল অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় অভিনেত্রীকে। এ ছাড়া গত মাসেই দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় জয়া অভিনীত আরও একটি সিনেমা ‘জয়া আর শারমিন’। তবে সিনেমাটি দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে।
দেশের ইন্ডাস্ট্রিতে যখন জয়া অভিনীত সিনেমাগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে, ঠিক সে মুহূর্তেই তিনি উড়াল দিয়েছেন কলকাতা। সেখানে তিনি অংশ নিয়েছেন নতুন সিনেমার শুটিংয়ে। ১৪ জুন থেকে সেখানে কৌশিক গাঙ্গুলী পরিচালিত ‘আজও অর্ধাঙ্গিনী’ সিনেমার শুটিং করছেন। এটি জয়া অভিনীত ‘অর্ধাঙ্গিনী’ সিনেমার সিক্যুয়াল। এবারও তার সঙ্গে থাকছেন কৌশিক সেন ও চূর্ণী গাঙ্গুলী। এ তিনজনের সঙ্গে নতুন পর্বে যুক্ত হচ্ছেন ইন্দ্রাশিস রায়। সুমনের (কৌশিক) অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে তার সাবেক স্ত্রী শুভ্রা (চূর্ণী) ও বর্তমান স্ত্রী মেঘনার (জয়া) দেখা হওয়া এবং টানাপোড়েনকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল অর্ধাঙ্গিনীর প্রেক্ষাপট। আগের ঘটনার বছর দুয়েক পর একটা বিয়েকে কেন্দ্র করে আবার মুখোমুখি হয় সুমন, শুভ্রা ও মেঘনা।
সিক্যুয়াল নিয়েও বেশ আশাবাদী জয়া। তিনি বলেন ‘কৌশিকদার সঙ্গে আমরা খুব এনজয় করে কাজ করি। এবারও তেমনটি হবে। কাজের ক্ষেত্রে প্রতিদিন আলাদা অভিজ্ঞতা হয়। নিজেকে আরও উন্নত করি অভিনেত্রী হিসাবে। এতে আবারও আমার সহশিল্পী হিসাবে চূর্ণী গাঙ্গুলীকে পাচ্ছি। তার মতো অভিনেত্রী পাওয়া মানে নিজের চরিত্রের আরও উত্তরণ ঘটা।’
এদিকে কলকাতায় গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয়া সিনেমার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পটভূমির যে ব্যাপারগুলো, তা যারা দেশের নীতিনির্ধারক আছেন, এসব তাদের সমস্যা। এসব সমস্যা তারাই আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবেন। আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যে কোনো বিদ্বেষ, কোনো রকম অসহিষ্ণুতা কখনোই কাম্য নয়, সেটা আমরা হতে দিতে চাই না। কোনোভাবেই শিল্পীদের বিচ্ছিন্নতা কাম্য নয়। শিল্পীদের কাজ হচ্ছে সবকিছু একসঙ্গে করা। শিল্পীদের তো কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা থাকা উচিত নয়। তার ভেতর আমাদের সংস্কৃতি এক, মূল্যবোধ এক, আবেগ-অনুভূতি এক, সেখানে আমরা কেন বিচ্ছিন্ন থাকব। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের ভাষা এক। আমরা বাংলায় কথা বলি। আমাদের চেষ্টাটা সব সময় থাকবে, পৃথিবীর যে কোণে যে বাঙালিই থাকুক, যে বাংলাভাষী মানুষই থাকুক, তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা, তা আমাদের শিল্পকর্ম দিয়ে। এটার জন্য আমাদের দুই ইন্ডাস্ট্রিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
