Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

ক্যামেরার সামনে এখনো তারা সরব

Icon

রিয়েল তন্ময়

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একটা সময় অধিকাংশ নাটক নির্মিত হতো পারিবারিক ও সামাজিক গল্পনির্ভর। এসব গল্পে আমাদের সমাজ ও পরিবারের নানা ঘটনার বহুরূপী চরিত্র উঠে আসত। প্রায় প্রতিটি নাটক ছিল, আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতির ধারক-বাহক। কালক্রমে নাটকের সেই বৈশিষ্ট্য হারিয়ে গেছে। পরিবার ও সমাজের অধিকাংশ চরিত্র এ সময়ের নাটকে অনুপস্থিত। বর্তমানে নাটক নির্মিত হচ্ছে, প্রধান দুটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে। দুই মূল চরিত্র এবং নেহায়েত গুরুত্বহীন কিছু চরিত্রের উপস্থিতি দিয়েই নাটক শেষ করা হয়। আর তাতেই উপেক্ষিত হচ্ছেন সিনিয়র শিল্পীরা। অনেকটা বেকার হয়ে পড়ছেন তারা। এর মধ্যেই গুটিকয়েকজন কাজ করছেন। তাদের নিয়েই এ প্রতিবেদন লিখেছেন রিয়েল তন্ময়

বাংলা নাটকের সুনাম দেশ তথা দেশের বাইরেও ছড়িয়ে রয়েছে। এক সময় অনেক প্রখ্যাত নাট্যকারের লেখা নাটকে সমাজ ও পরিবারের চিত্র উঠে আসত। এসব নাটকের গল্পে বাবা-মা, দাদা-দাদি, ভাইবোনসহ অনেক চরিত্রের উপস্থিতি ছিল। ইদানীং পারিবারিক বা সামাজিক নাটকের গল্প হয় না বলা যায়। যেগুলো হয় তাতে মেলে না সিনিয়র চরিত্রের উপস্থিতি। এখন তাই সিনিয়র শিল্পীদের তেমন ব্যস্ততা নেই। অনেকেই বর্তমান নাটকের মানের দিক বিবেচনায় কাজই কমিয়ে দিয়েছেন। তবুও বিশেষ কিছু কাজে ডাক পড়ে সিনিয়র শিল্পীদের। যারা এখনো ক্যামেরার সামনে সরব। তাদের মধ্যে রয়েছেন দিলারা জামান, ফেরদৌসী মজুমদার, আবুল হায়াত, তারিক আনাম খান, মামুনুর রশীদ, আমিরুল হক চৌধুরী, আফজাল হোসেন। এদের কেউ সাত দশক ধরে অভিনয় করছেন। কেউ আবার পাঁচ দশক পার করেছেন অভিনয়ে।

* দিলারা জামান

অভিনয়ে সাত দশক পার করেছেন দিলারা জামান। জীবনের দীর্ঘ একটি সময় ব্যয় করেছেন অভিনয়ে। মঞ্চ দিয়ে শুরু করে নাটক ও সিনেমার তিনি এক অনবদ্য অভিনেত্রী। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন একুশে পদক। বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ার তার। মায়ের চরিত্রে তার বিশেষ খ্যাতিও রয়েছে। এখনো নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন আপন মহিমায়। তবে বয়সের সংখ্যাটা একটু বড় হওয়ায় এখন আর বেশি মায়ের চরিত্রে তাকে দেখা যায় না। তিনি এখন দাদি, নানি চরিত্রেই অভিনয় করেন। দিলারা জামান বলেন, ‘ভালো আছি। এ বয়সে যতটুকু থাকা যায় ততটুকু আছি। সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে এখনো অভিনয় করতে পারছি।’

* ফেরদৌসী মজুমদার

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার। ‘সংশপ্তক’ নাটকের ‘হুরমতী’ চরিত্র তাকে দর্শকদের মনে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। টেলিভিশন নাটকের শুরু থেকেই তিনি অভিনয় করে আসছেন। কয়েকটি সিনেমাও করেছেন। তবে বয়সের ভারে নাটক ও সিনেমায় খুব একটা সময় দিতে পারেন না। কিন্তু, এখনো মঞ্চে অভিনয় করেন। ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ‘এই বয়সে যতটা ভালো থাকা যায় ততটাই আছি। যেন সুস্থ থাকতে পারি, এটাই চাওয়া।’

* আবুল হায়াত

ছয় দশক ধরেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত আবুল হায়াত। স্কুলজীবন থেকেই অভিনয়ে নিজেকে জড়িয়েছেন। মঞ্চ নাটক দিয়ে শুরু করে, পরে টিভি নাটকে নাম লেখান। সাড়া জাগানো অনেক নাটক রয়েছে তার ক্যারিয়ারে। বিশেষ করে বিটিভির আলোচিত অনেক নাটকে অভিনয় করে পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। হুমায়ূন আহমেদের নাটকের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন তিনি। বর্তমানেও অভিনয় করছেন। বিশেষ করে বাবা চরিত্রে তিনি অনবদ্য। পাশাপাশি পরিচালনাও করেন এ অভিনেতা। আবুল হায়াত বলেন, ‘ভালো আছি। কাজ করতে পারছি এখনো। কাজের ক্ষেত্রে ইচ্ছাশক্তিটাই বড়।’ অভিনয়ের পাশাপাশি এখনো পরিচালনায় যুক্ত এ অভিনেতা। করেন লেখালেখিও।

* তারিক আনাম খান

মঞ্চ নাটক দিয়ে অভিনয় শুরু করেন তারিক আনাম খান। তার গড়া নাট্যদল থেকে উঠে আসেন বহু জনপ্রিয় অভিনেতা। এ অভিনেতাকে শুধু অভিনয়শিল্পীই নন, অভিনয়ের ইনস্টিটিউশনও বলা হয়। ক্যামেরার সামনে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সিনেমায় অভিনয় দিয়ে। বর্তমানে সিনেমার পাশাপাশি নাটকেই বেশি ব্যস্ত। এ ছাড়া ওটিটি কনটেন্টেও কাজ করছেন। বলা যায়, তিন মাধ্যম মিলিয়ে প্রবীণদের মধ্যে তার ব্যস্ততা একটু বেশিই। তারিক আনাম খান বলেন, ‘অভিনয় আমার পেশা, নেশা, ভালোবাসা, সাধনা-সবকিছু। অভিনয় আমাকে সব সময় টানে। নতুন নতুন চরিত্র টানে। সব মিলিয়ে ভালো আছি। যতদিন বেঁচে আছি এভাবেই থাকতে চাই।’

* মামুনুর রশীদ

মঞ্চ, টিভি নাটক ও সিনেমা-সব মাধ্যমেই অভিনয় করছেন মামুনুর রশীদ। এ ছাড়া মঞ্চ নাটকে নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি টিভি নাটক পরিচালনাও করছেন। বর্তমানে তার রচিত ও পরিচালিত টিভি ধারাবাহিক ‘চরণ ছুঁয়ে যাই’ প্রচার হচ্ছে। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তিনি মঞ্চের জন্য শহীদ মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি প্রথম নির্দেশনা দেন। অভিনয় করছেন বিরতিহীনভাবে দশকের পর দশক ধরে। মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বয়স বাড়ছে, শরীরে কিছু সমস্যা তো থাকছেই। তারপরও নাটকই আমার কাছে সব। কাজেই এখনো মঞ্চে অভিনয় করি এবং টিভি নাটক ও সিনেমাতেও অভিনয় করি। ভালোবাসা আছে বলেই কাজ করতে পারছি।’

* আমিরুল হক চৌধুরী

মঞ্চ নাটক থেকে টিভি নাটকে আসেন অভিনেতা আমিরুল হক চৌধুরী। করেছেন সিনেমায়ও অভিনয়। জীবনের লম্বা একটি সময় তিনি কাটিয়ে দিলেন অভিনয়ে। সালাহউদ্দিন লাভলু পরিচালিত ‘হাড়কিপ্টা’সহ অনেক জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। বিশিষ্ট এ অভিনেতা এখনো অভিনয় থেকে বিরতি নেননি। তবে গ্রাম্য আবহের নাটকেই তিনি বেশি কাজ করছেন। মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপন ও সিনেমায় অভিনয় করছেন। আমিরুল হক বলেন, ‘অভিনয় করতে ভালোবাসি। এখানেই তো জীবন কেটেছে। তবে এখন তেমন ডাক আসে না, তবে সব সময় প্রস্তুত থাকি অভিনয়ের জন্য।’

* আফজাল হোসেন

নাটক, সিনেমা, ওটিটি কনটেন্ট-সব মাধ্যমেই বিচরণ করছেন আফজাল হোসেন। নিয়মিতই অভিনয় করছেন তিনি। এবারের ঈদেও প্রচার হয়েছে তার অভিনীত নাটক। মুক্তি পেয়েছে একটি সিনেমাও। এ ছাড়া ‘ছোটকাকু’ সিরিজও নিয়মিত করছেন। নির্মাণেও নেননি বিরতি। আফজাল হোসেন বলেন, ‘অভিনয় করতে ভালো লাগে। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে পর্দায় আসতে চাই বারবার।’

এ ছাড়া একুশে পদকপ্রাপ্ত ও জাতীয় চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত রাইসুল ইসলাম আসাদ, ডলি জহুর, রহমত আলী, আব্দুল আজিজের মতো প্রবীণ শিল্পীদের নিয়মিত অভিনয়ে দেখা যায় না। তবে তারা অভিনয়কে বিদায় জানাননি। বিশেষ কিছু কাজে তাদের অভিনয় করতে দেখা যায়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম