Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

এই সময়

অভিনয়ের ক্ষুধা থাকলেও শারীরিক সক্ষমতা নেই : মিরানা জামান

Icon

আনন্দনগর প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শিল্পীর জীবন যেন এক অবিরাম যাত্রা, আলো আর অন্ধকারের, হাসি আর নীরব কান্নার। সৃষ্টির নেশায় মগ্ন এ মানুষটি নিজের রক্ত-মজ্জা গলিয়ে রঙে, শব্দে, ছন্দে বা রূপে গড়ে তোলেন অমর শিল্প। বাইরে থেকে তা হয়তো রঙিন, সমুজ্জ্বল, কিন্তু অন্তরালে আছে নিঃসঙ্গতা, দহন আর অন্তহীন সাধনা। শিল্পীর চোখ দেখে সাধারণের অদেখা স্বপ্ন ও তার কণ্ঠে শোনা যায় মানুষের গোপন আর্তি। তাই শিল্পীর জীবন শুধু তার নিজের নয়, এ সমাজের, এ সময়ের এবং সব মানবতার সঞ্চিত ব্যথা-বেদনার প্রতিধ্বনি। শিল্পীর জীবন বহতা নদীর মতো। থেমে থাকা তাদের অভিধানে নেই। দর্শকদের ভালোবাসা তাদের জীবনে সঞ্জীবনী সুধার মতো। তাই তো ৯০ বছর বয়সে এসেও অভিনেত্রী মিরানা জামান মননে-মানসিকতায় আজও তারুণ্যকে ধারণ করেন।

সোনালি সময়ের জনপ্রিয় মুখ মিরানা জামান। জন্মেছেন করটিয়ার সৈয়দ বাড়িতে, ১৯৩৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর। বাবা সৈয়দ বদরুদ্দোজা, মা মাহমুদা খাতুন। ১৯৫০ সালের ২৭ আগস্ট কাজী মোহাম্মদ আকতারুজ্জামানের সঙ্গে মিরানার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ১৯৬২ সালের বেতারে নাট্যকণ্ঠশিল্পী হিসাবে মিডিয়ায় তার পথচলা শুরু। টেলিভিশনে তিনি প্রথম অভিনয় করেন মোস্তফা মনোয়ারের নির্দেশনায় একটি নাটকে। টিভিতে তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘ঘরোয়া’। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত অনেক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। এরপর তিনি নায়ক রহমানের পরিচালনায় ‘যাহা বাজে সেহনাই’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘সুপ্রভাত’, ‘গেরিলা’র মতো আরও অনেক সিনেমায় অভিনয় করেন। তার শেষ সিনেমা ছিল ‘শিখণ্ডী কথা’। মহম্মদ হান্নান পরিচালিত এ সিনেমাটি ২০১৩ সালে মুক্তি পায়। তবে ই. আর. খানের পরিচালনায় ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সন্তান’ সিনেমায় মা হিসাবে অভিনয় করে সে সময় বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন। বেতারের এক সময়ের পল্লিভিত্তিক অনুষ্ঠানের ‘শায়রা বু’ হিসাবেও দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।

এদিকে বহুবছর ধরে বাংলাদেশ বেতারে প্রতি শনিবার বিকালে মীরানা জামানের গ্রন্থনা, নির্দেশনায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক অনুষ্ঠান ‘আমার দেশ’ প্রচার হয়। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে কোনো বাধাই তাকে অভিনয় থেকে দূরে রাখতে পারেনি। জীবনের শেষ ভাগে এসে এখনো অভিনয়ের ক্ষুধা থেকেই গেছে তার মধ্যে। বয়সের ভারে কিছুটা দুর্বল হলেও, ছেড়ে দেননি অভিনয়। সম্প্রতি তিনি অভিনয় করলেন ‘মৃত্তিকার যাত্রা’ নামে বিটিভির জন্য নির্মিত একটি টেলিছবিতে। এতেও মায়ের চরিত্রে রূপদান করেছেন গুণী এ অভিনেত্রী। ইলোরা গহরের রচনায় এ টেলিছবিটি পরিচালনা করেছেন কাশেফ শাহবাজী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে এটি। ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবে অংশ নিয়েছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান ছাত্র-জনতা। তাদের জীবনে নানা ক্রাইসিস উঠে এসেছে টেলিছবিতে। মিরানা জামান বলেন, ‘অভিনয় আমার ভালোবাসার জায়গা। এটা ছাড়া থাকা কষ্টকর। এ কারণে মাঝে মধ্যে ক্যামেরার সামনে আসি। খুব বেশি নড়াচাড়া করতে হয়নি আমাকে। খাটের মধ্যে বসে বসেই টেলিছবিটির শুটিং করেছি।’ বাংলাদেশ টেলিভিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘অনেকদিন সিনিয়র অভিনেত্রী হয়েও ডাক পাইনি। অবশেষে ইলোরা গহরের মাধ্যমে তারা আমাকে ফেরালেন, আমার খুব ভালো লাগছে। মূলত আমরা তো বিটিভি থেকেই উঠে এসেছি। এখান থেকে ডাক পেলে সম্মানিত বোধ করি।’

কাজ ছাড়া এখন আর খুব একটা বাইরে বের হন না এ অভিনেত্রী। বাসায় বেশি সময় কাটে তার। মিরানা জামান বলেন, ‘অভিনয় ছাড়া থাকা কষ্টকর। এ কারণে সুযোগ হলেই মাঝে-মধ্যে ক্যামেরার সামনে আসি। সেই ব্রিটিশ আমলে জন্মেছি। বয়স বাড়ছে। সঙ্গে সমস্যাও বাড়ছে। বার্ধক্যজনিত কিছু সমস্যায় ভুগছি। অনেক সময় লাঠির সাহায্য নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। মাঝেমধ্যে হাঁটুতে ব্যথা করে। দাঁড়াতে কষ্ট অনুভব করি। ক্রমেই শরীরের ভারসাম্য হারাচ্ছি। শর্মিলী আহমেদ, মাসুদ আলী খান নিয়মিত খবর নিতেন, তারাও তো চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। আমাদেরও একদিন ডাক আসবে; চলে যাব। মনে কোনো দুঃখ নেই। জীবনে যা চেয়েছি, তার থেকে বেশি পেয়েছি।’ কষ্ট নিয়ে মিরানা জামান আরও বলেন, ‘অভিনয়ের ক্ষুধা আজও রয়েছে। কিন্তু শারীরিক সক্ষমতা এখন আর নেই।’ ২০২০ সালে মিরানা জামান বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট কর্তৃক ‘বুলবুল আহমেদ পুরস্কার’সহ অনেক সম্মাননা লাভ করেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম