Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

আজও কানে বাজে সিনেমার কালজয়ী গান

বাংলা সিনেমা মানেই শুধু রুপালি পর্দার গল্প নয়, এটি আমাদের কালজয়ী গানের ইতিহাসও। এমন অনেক সিনেমার গান আছে যা সময়কে অতিক্রম করে মানুষের জীবনে মিশে গেছে। এ গানগুলো যেমন গল্প বুনেছে, চরিত্রের প্রাণ জুগিয়েছে, আবার কখনো মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের সুখ হয়ে উঠেছে। গান একটি সিনেমাকে খুব দ্রুত দর্শকদের কাছাকাছি নিয়ে যায়। কোনো গান হিট হলে সেই সিনেমা বেঁচে থাকে যুগের পর যুগ। বাংলাদেশের সোনালি দিনের সিনেমাগুলোর গান আজও জনপ্রিয় হয়ে আছে মানুষের কাছে। এত বছর পরও সেসব গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কালজয়ী গান নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন।

Icon

রিয়েল তন্ময়

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলা সিনেমায় কিছু গান গীতিকারের লেখনীর ছোঁয়ায়, সুরকারের প্রতিভায় আর কণ্ঠশিল্পীর জাদুতে কালজয়ী হয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর সত্তরের দশক ছিল বাংলা সিনেমার এক সোনালি যুগ। ওই সময় সিনেমার গানগুলোর বিকাশ হয়েছে অনেক বেশি। সেই যুগে সমৃদ্ধ হয় বাংলা গানের ভান্ডার। এসব জনপ্রিয় গানের তালিকায় অনেক দীর্ঘ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নায়করাজ রাজ্জাক ও সুজাতা অভিনীত ‘এতটুকু আশা’ সিনেমার গান ‘শুধু একবার বলে যাও আমি যে তোমার কত প্রিয়’। এতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন খন্দকার ফারুখ আহমেদ ও শাহনাজ রহমতুল্লাহ। ১৯৬৮ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। ১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ময়নামতি’ সিনেমায় শিল্পী বশির আহমেদের গাওয়া ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন ছিঁড়ে যায়’ গানটি সেই সময়ের দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছিল। ১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘নীল আকাশের নিচে’র ‘প্রেমের নাম বেদনা সে কথা বুঝিনি আগে’ গানটিও সুপারহিট হয়। এ গানটি গেয়েছেন মাহমুদুন নবী। ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন, কপালের কালো তিল পড়বে চোখে’ কালজয়ী এ গানটি ছিল ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নাচের পুতুল’ সিনেমার। এতে কণ্ঠ দেন মাহমুদুন নবী। ‘ওয়াদা’ সিনেমার ‘যদি বউ সাজোগো বড় সুন্দর লাগবে’ গানটিও জনপ্রিয়তা পায়। রোমান্টিক এ গানটিতে কণ্ঠ দেন মো. খুরশীদ আলম ও রুনা লায়লা। ১৯৭২ সালে পরিচালক কামাল আহমেদের ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’ সিনেমাটি অনেক আলোড়ন তৈরি করেছিল সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেও না’ গানটির জন্য। সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা আর তো প্রাণে সয়না’ গানটি সত্তর দশকের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অতিথি’ সিনেমার গান এটি। ‘সারেং বৌ’ ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি সিনেমা। এতে আবদুল জব্বারের গাওয়া ‘ওরে নীল দরিয়া আমায় দেরে দে ছাড়িয়া’ গানটিও জনপ্রিয়তা লাভ করে। ‘ইট্টুসখানি দেখ, একখান কথা রাখ, ভালোবাইসা একবার তুমি বউ কইয়া ডাকো’ সুপার হিট গানগুলোর একটি। ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বধূ বিদায়’ সিনেমায় এ গানটি গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন।

‘আরে ও প্রাণের রাজা, তুমি যে আমার, কাছে কাছে থেকো চাই না কিছু আর’-‘বাদশাহ’ সিনেমার এ গানটি জনপ্রিয় রোমান্টিক গানের তালিকায় এখন পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে স্থান দখল করে আছে। এতে কণ্ঠ দেন উমা খান ও প্রবাল চৌধুরী। রুনা লায়লা ও এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে; তোমার মুখের কথা না শুনিলে’ গানটি তখনকার তরুণ প্রজন্মসহ সবার কাছে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ‘দুই জীবন’ সিনেমাটি ১৯৮৬ সালে মুক্তি পেলেও গানটির জনপ্রিয়তা এখনো রয়েছে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে সবার মন জয় করে নিয়েছে ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’ গানটি। চিরস্মরণীয় এই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লা ও এন্ড্রু কিশোর। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমার গান এটি। ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অবুঝ হৃদয়’ সিনেমার ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন, দুজন দুজনার কত যে আপন’ গানটির জনপ্রিয়তা এখনো কমেনি।

‘যে আগুনে পুড়ি’ সিনেমার ‘চোখ যে মনের কথা বলে’ এই গানটির সঙ্গে এ দেশের মানুষের পরিচয় বহু বছরের। এটি গেয়েছেন খন্দকার নুরুল আলম। ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটিও জনপ্রিয়। ‘স্বরলিপি’ সিনেমার গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লা। ‘চুমকি চলেছে একা পথে’ দেশের সোনালি দিনের সিনেমার আরও একটি জনপ্রিয় গান। ‘দোস্ত দুশমন’ সিনেমায় এটি গেয়েছেন খুরশিদ আলম। এ ছাড়া মাহমুদুন নবী ও সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘তুমি যে আমার কবিতা’, তালাত মাহমুদের কণ্ঠে ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো’, খন্দকার ফারুক আহমেদের ‘নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তা চলেছি একা’, সাবিনা ইয়াসমিনের ‘তোমারই পরশে জীবন আমার ওগো ধন্য হলো’, ‘যদি সুন্দর একটি মুখ পাইতাম’, আঞ্জুমান আরা বেগম ও সুবীর নন্দীর গাওয়া ‘ওরে হলুদ পাখি বল কোথায় তোরে রাখি’, শাম্মী আখতার ও খন্দকার ফারুক আহমেদের ‘ঢাকা শহর আইস্যা আমার আশা ফুরাইছে’, সুবীর নন্দী ও সাবিনা ইয়াসমিনের ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’, আবদুল আলীমের কণ্ঠে ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা’, এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘আমার বুকের মধ্যেখানে মন যেখানে হৃদয় সেখানে’, ‘সারা দেহ খেয়ো গো মাটি চোখ দুটি তুমি খেয়ো না’, রুনা লায়লার ‘একা একা কেন ভালো লাগে না’-এসব গান বাংলা সিনেমাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়।

সোনালি যুগের সিনেমায় এ রকম আরও অনেক গান রয়েছে যা এখনো মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। সিনেমা জগতের ৬০ থেকে ৯০-এর দশকের হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া অসাধারণ এ গানগুলোর সফলতার পেছনে শুধু কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকারদেরই অবদান রয়েছে তা কিন্তু নয়। গানগুলোতে যে কিংবদন্তি নায়ক-নায়িকারা অভিনয় করেছেন তাদের অবদানও অসামান্য। এসব গানে তাদের রোমান্টিক ও ট্র্যাজেডিক অভিনয় গানগুলোর গভীরতা ও মাধুর্যতা আরও সুন্দর হয়ে ফুটে উঠেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম